বাদল চৌধুরী
আমার মাথার তাজ, নয়নের মণি, হৃদয়ের স্পন্দন, আঁধার পথের আলোকবর্তিকা, ইহকাল-পরকালের বান্ধব, প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগীর রাঙা-চরণে শত কোটি ভক্তি রেখে, সত্য তরিকায় বাইয়াত হওয়ার পরে আমার উপলদ্ধির কিছু কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আরেফে কামেল, মুর্শিদে মোকাম্মেল, আলহাজ মাওলানা সৈয়দ হযরত জাকির শাহ্ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী কেবলাজান হুজুরের সঙ্গে, আমার প্রথম সাক্ষাৎ এর কথাই আজ সবিনয়ে জানাতে চাই। প্রায় বছর খানেক আগে, এক শুভক্ষণে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন অত্যন্ত দয়া করে, যুগের শ্রেষ্ঠতম সাধক, হেদায়েতের হাদি, নকশবন্দিয়া ও মোজাদ্দেদিয়া তরিকার বর্তমানে একমাত্র খেলাফতপ্রাপ্ত পীর-মুর্শিদ বা ধারক ও বাহক খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের পবিত্র সান্নিধ্যে আসার তৌফিক দান করেন।
খাজাবাবা কুতুববাগীর সন্ধান আমাকে দিয়েছেন, প্রখ্যাত সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কবি নাসির আহমেদ এবং বন্ধুবর কবি সেহাঙ্গল বিপ্লব। জীবনের এক কঠিনলগ্নে খাজাবাবার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ। পারিবারিক কারণে আমি তখন নানামুখী হতাশায় নিমজ্জিত। একদিন চ্যানল আইয়ে আমার সহকর্মী বন্ধুবর কবি সেহাঙ্গল বিপ্লবকে সমস্যার কথা বলতে গেলে, তেমন একটা না শুনেই আমাকে কুতুববাগ দরবার শরীফে আসার কথা বলেন এবং এটাও জানান যে- শান্তির আসল ঠিকানা খাজাবাবা কুতুববাগী ও কুতুববাগ দরবার শরীফ। এর দুইদিন পর বন্ধুকে ফোন দিই এবং বাসা থেকেই অজু করে দরবার শরীফে আসি। দশম তলায় সরাসরি খাজাবাবার হুজরা শরীফে যাই। মুর্শিদের পবিত্র চরণ ছুঁয়ে সালাম করলাম। মুহূর্তে আমি যেন কেমন হয়ে গেলাম! মনে হলো, সারা শরীরে বিদ্যুৎ তরঙ্গ বয়ে গেল। এ প্রসঙ্গে বলা দরকারÑ আমি খাজাবাবার হুজরা শরীফে প্রবেশমাত্র তাঁর নূরানী চেহারা মোবারক দেখে সত্যি ভীষণ পুলকিত হয়েছিলাম।মনে হয়েছে, এমন সৌম্যকান্ত দীপ্তিময় মুখশ্রী কোনো সাধারণ মানুষের হতে পারে না।
খাজাবাবার চেহারা মোবারক থেকে যেন, জোছনার স্নিগ্ধ কোমল আলোর রক্তিম আভা বের হয়ে, ঘরময় সকলকে আলোকিত করছিলো। ভক্তিতে আমার সর্বাঙ্গ শিহরিত হলো। মনে হলো, আমি যেন অলৌকিক জ্যোর্তিময় কোনো মহাপুরুষের সান্নিধ্যে এসেছি। আমার পারিবারিক পরিচয় ও পেশাসহ অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলেন। খাজাবাবার কণ্ঠস্বর এমন মধুর আর এত ছোট ছোট বাক্যে ধীরস্বরে কথা বলেন, যা শুনলে মুগ্ধ হবেন যে কেউ! ২-এর পাতায় দেখুন আমরা জানি রাসুল (সঃ)-ও এমনই করে সাহাবিদের সঙ্গে কথা বলতেন। যা হোক, আমি প্রথম দর্শনে ও খাজাবাবার পবিত্র মুখের কথা শুনে এবং নূরানী চেহারা মোবারক দেখে হতবিহ্বল হয়ে গেলাম। মুখ ফুটে তেমন কিছুই বলতে পারলাম না। কিন্তু মনের গভীরে অনেক কথা ছিল, যা বলতে এসেছিÑ সে কথাগুলো আমাকে দেখেই খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান হুজুর বুঝতে পারলেন এবং বললেনÑ ‘আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন, সব ঠিক হয়ে যাবে’। সেদিন থেকেই আমি যাঁর পবিত্র ছায়াতলে পেলাম মহাশান্তির সন্ধান।
খাজাবাবার পবিত্র মুখের দিকে তাকালে- ভুলে থাকা যায় দুনিয়ার শত কষ্ট-দুঃখ-জ্বালা-যন্ত্রণা, ফিরে পাওয়া যায় শান্তির আসল ঠিকানা। কেবলাজানের পবিত্র জবান থেকে শুনেছি- ‘বাবা, ধরতে হলে ধরার মতো ধরো আর মরতে হলে মরার আগে মরো’। আমি গোনাহ্গার প্রায় বছর খানেক আগে বাবাজানের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু ধরার মত ধরতে বা মরার আগে মরতে এখন পর্যন্ত কোনটাই সঠিকভাবে পারিনি, তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। চেষ্টাই আসল, চেষ্টা ছাড়া কোনকিছুই করা সম্ভব না। সব-সময়েই ভয়ে ভয়ে থাকি কখনো যদি আমার কোন কথায়-কাজে বে-আদবি হয়ে যায়। কারণ, অলি-আল্লাহ্ পীর-মোর্শেদের সঙ্গে বে-আদবি মানে নিশ্চিত অধ:পতন। আল্লাহ্র অলি-বন্ধু কামেলপীর কাকে বলে, তা বাবাজানের সান্নিধ্যে না এলে কোনদিনও বুঝতে পারতাম না। আমি এই অল্প সময়ের মধ্যেই দেখেছি, কেবলাজানের সুন্দর ব্যবহার এবং উত্তম আচরণে অসংখ্য শক্ত কঠিন হৃদয়ের মানুষও নরম-কোমল হয়ে গেছেন। বহু পাপী-তাপী নিজেদের ভুলগুলো শুধরে সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছেন।
আমার অতিক্ষুদ্র জ্ঞান ও অনুভূতি দিয়ে বুঝেছি, খাজাবাবা কুতুববাগীর অনন্য আধ্যাত্মিক কর্ম-সাধনা ও ব্যক্তিত্বের কাছে আমরা সাধারণ মানুষ সত্যিই ক্ষুদ্র। তিনি জ্ঞানের মহাসমুদ্র, যে সমুদ্রের ভা-ার থেকে নিজের মনের ক্যানভাসে, সামান্য কিছুটা হলেও অন্তরের মহাসমুদ্রের চিত্র অংকন করার চেষ্টা করছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মনোনীত এই জ্ঞান-তাপস তাঁর আধ্যাত্মিক গুণের আলো সাধারণ মানুষের অন্ধকার কাল্বে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোত্র নির্বিশেষ, খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের রূহানী স্পর্শ এবং তাঁর পবিত্র সান্নিধ্য পাওয়ার বুকভরা আশা নিয়ে, ছুটে আসছেন ফার্মগেট কুতুববাগ দরবার শরীফে। স্বভাবসূলভ মাধুর্য্য দিয়ে সবাইকে তিনি পরম মমতায় আপন করে নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এ এক আশ্চর্য ক্ষমতা! শুধু ব্যবহার দিয়েই যে মানুষের মন জয় করা সম্ভব, তা খাজাবাবা কুতুববাগীর কাছে তরিকার বাইয়াত না নিলে জানা সম্ভব নয়। এখনো খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানকে যারা দেখেননি বা তাঁর সান্নিধ্যে আসেননি, তাদের কাছে আমার কথা বিস্ময়করই মনে হবে। যারা কেবলাজানের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে রাসুল (সঃ)-এর সত্য তরিকায় শামিল হচ্ছেন- তারা আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা ও নামাজে হুজুরি লাভ করে, নিজ নিজ কাল্বে আল্লাহর ইস্মে জাতের জিকির জারি করছেন। আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে ঈমানের সঙ্গে কবরে যাওয়ার মহানিয়ামত লাভের জন্য পবিত্র কোরআনের আলোকে সঠিক পথ দেখাচ্ছেন খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান হুজুর।
কেবলাজানের নয়টি মূল শিক্ষা, এর মধ্যে (১) আদব (২) বুদ্ধি (৩) মহব্বত (৪) সৎসাহস (৫) বিশ্বাস ও (৬) ভক্তি। এরপর রয়েছেÑ আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা এবং নামাজ হুজুরী। একজন মানুষের মধ্যে প্রথম ছয়টি বিষয়ের গুণাগুণ থাকলেই কেবল একজন মুরিদ আপন আপন মুর্শিদের নেকনজরে আসেন। তখন আত্মশুদ্ধি ও দিলজিন্দা হয় এবং নামাজ বা এবাদতে হুজুরী (একাগ্রতা) আসে। কেবলাজান বলেনÑ শেষরাত অর্থাৎ, রাতের তৃতীয় প্রহরে আরামের বিছানা ত্যাগ কর এবং কেঁদে কেঁদে আল্লাহর তিন নাম ধরে ডাকোÑ ইয়া আল্লাহু! ইয়া রাহ্মানু! ইয়া রাহিম! এবং রাসুল করিম (সঃ)-এর শানে পড়Ñ ‘ইয়া রাহ্মাতাল্লিল আলামীন! শেষ রাতে রহমত পাওয়া এবং গুনাহ্ মাফের সময়। গুনাহ্গার মানুষ যখন রাতের শেষভাগে জেগে দুই চোখের পানি ছেড়ে মহান আল্লাহকে ডাকেন। তখন আল্লাহতায়া’লার রহমতের দরিয়ায় জোশ জেগে ওঠে এবং আল্লাহ তাঁর প্রতি দয়া বর্ষণ করেন।
‘সূফীবাদই শান্তির পথ’ -খাজাবাবা কুতুববাগীর এই মহান ব্রতে দীক্ষা নিয়ে, নিজেকে ধীরে ধীরে শুদ্ধতার দিকে নেয়ার চেষ্টায় রত আছি। কেবলাজানের এ আদর্শ শিক্ষার মধ্যে আরো রয়েছে, ‘অন্যের দোষ দেখার আগে নিজের দোষ তালাশ করুন’। হ্যাঁ, তাতেই আত্মশুদ্ধির পথ সুগম হয়, যা আমি বুঝতে পেরেছি মর্মে মর্মে। আমার মহান মুর্শিদের খাস দয়ায় জাগতিক ও পারিবারিক কলহ-বিবাদসহ নানান অশান্তির মধ্যে থেকেও আমার জীবনে এসেছে আমূল পরিবর্তন। তাঁর কল্যাণে সত্যিই মহাশান্তির পরশ বইতে শুরু করেছে আমার অন্তরে। এটা শুধু সম্ভব হয়েছে, খাজাবাবা কুতুববাগীর সোহবত লাভের কল্যাণেই। বাবাজান কেবলার স্নেহ-ভালোবাসা ও সঠিক দিক-নির্দেশনায় আমি ইহকালে পাবো সুন্দর জীবনের ঠিকানা আর পরকালের জন্য পেয়েছি নাযাতের উছিলা। এখন আল্লাহর কাছে আমার প্রার্থনা- হে আল্লাহ্! আমাকে খাজাবাবা কুতুববাগীর সান্নিধ্যে থাকার ধৈর্য্য ও তাওফিক দান করুন।
লেখক: খাদেম, কুতুববাগ দরবার শরীফ
সভাপতি, পদক্ষেপ বাংলাদেশ