ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়িতে খাজাবাবা কুতুববাগীর ভক্ত শ্রীমান স্বপন কুমার দত্তের ১৮ বছর বয়সী পুত্র স্বজন দত্ত এ লেখাটির মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। মুর্শিদ ক্বেবলার সান্নিধ্য পেয়ে সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা এই কিশোরের মনে যে গভীর ভক্তিভাবের উদয় হয়েছে, তা অতুলনীয় আবেগময়। ছোট্ট এই লেখার মধ্যে মানবজাতির প্রেমময় সত্তার গভীর উপলব্ধি লুকিয়ে আছে। সাধারণ জাকেরদের জন্যও রয়েছে শিক্ষণীয় বিষয়। তাই অগণিত ভক্ত-আশেক-জাকেরানসহ সম্মানিত পাঠকদের জন্য এই লেখাটি ‘আত্মার আলো’তে প্রকাশ করা হলো। উল্লেখ্য, গত ৯ মে, ২০১৪ রোজ শুক্রবার কুতুববাগ দরবার শরীফের পীর খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর তরিকতের দাওয়াত নিয়ে ৭ দিনের ভারত সফর করেন। – সম্পাদক
স্বজন দত্ত
বহুদিন ধরে বহুদূরে থেকে আমি যে পরমাত্মার সান্নিধ্যের প্রতীক্ষায় ছিলাম অবশেষে অসীম প্রতীক্ষার পর সেই পরমাত্মার সান্নিধ্য পেলাম। সেই পরমাত্মা হলেন, আত্মার মুক্তির পথপ্রদর্শক খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর। ৯ মে ২০১৪, শুক্রবার বিকেল ৪টায় সেই মহামানব ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়িতে প্রথম তাঁর পবিত্র পদধূলি দিলেন। আমার পিতা শ্রী স্বপন কুমার দত্ত তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাজাবাবা কুতুববাগী হুজুরকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসে তাঁর পদস্পর্শে আমাদের বাড়িকে পবিত্র করলেন। তাঁকে প্রথম দেখামাত্রই আমার শরীরে এক আশ্চর্যরকম শিহরণ জেগে উঠল। তাঁর দীপ্তিময় মুখশ্রী আমাকে অভিভূত করে তুললো। আমার শরীরের শিরায় শিরায় বিদ্যুৎ ধারা প্রবাহিত হলো। সাময়িকভাবে আমি এক অন্য জগতে প্রবেশ করলাম। সেই জগতে শুধু সেই মহাপুরুষ এবং আমি। সেই মহামানব তাঁর অত্যুজ্জ্বল চেহারা নিয়ে আমার সম্মুখে বিরাজমান। মনের গভীরে এই সত্য উপলব্ধি করলাম যে, ইনি সেই মহাপুরুষ যাঁর চরণে জীবনকে উৎসর্গ করার জন্য আমি এতদিন ধরে অধীর অপেক্ষায় ব্যাকুল ছিলাম। তাঁকে দেখেই বোঝা যায়, তিনি কোনো সাধারণ মানুষ নন।
যুগে যুগে এই পৃথিবীতে মানব কল্যাণের জন্য এবং অসহায় মানুষের মুক্তির পথপ্রদর্শক হিসেবে যে সমস্ত মহাপুরুষ আবির্ভূত হন খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি মানবতার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আল্লাহ মহান অলি রূপে অসহায় মানুষের কাছে পাঠিয়েছেন, সঠিক আলোর পথের সন্ধান দেবার জন্য। পার্থিব জগতের কোনো বস্তুর প্রতিই তাঁর কোনো লোভ বা মোহ নেই। জাতি-ধর্ম-বর্ণ সকল ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে তিনি। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ খ্রীস্টান প্রভৃতি ধর্মের মানুষেরা তাঁর কাছে সবাই সমান স্নেহ পান। তিনি যেমন সমগ্র পৃথিবীতে সুফিবাদের আলো ছড়িয়ে চলেছেন, তেমনি আমাদের জলপাইগুড়ি জেলার অসংখ্য মানুষের মধ্যে সুফিবাদের আলো ছড়িয়েছেন। তাঁর মানব প্রেমের বার্তা বর্ষিত হয়েছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সবার মধ্যে। তাঁর সান্নিধ্য পেয়ে যেমন আমি ধন্য হয়েছি, তেমনি ধন্য হয়েছে ধূপগুড়ির অগণিত মানুষ। আমি তাঁকে হৃদয়ের মধ্যে বসিয়ে আমার আধ্যাত্মিক গুরু বলে স্মরণ করে নিয়েছি। তাঁর কাছে আমার সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার কথা তুলে ধরলে তিনি যে সদুপদেশ আমাকে দিয়েছেন, তা আমার হৃদয়কে কোমল-নিরাসক্ত করে তুলেছে। এখন আমার হৃদয়ে কোনো দুঃখ বেদনা নেই। ধুপগুড়ির অগণিত ভক্তদের কাঁদিয়ে তিনি বুধবার ১৪ মে, ২০১৪ আমাদের বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশে বিদায় নেন। তাঁর বিদায়ের আগমুহূর্তে আমি যখন এই লেখা লিখছি, তখন আমার হৃদয় গভীর শোকাহত, মুহ্যমান। কিন্তু আমি এও জানি তিনি কখনও আমার হৃদয় থেকে চলে যেতে পারবেন না। সারাজীবনের জন্য আমার বুকে পরম-গুরুর আসনে থেকেই যাবেন। পরিশেষ এ কথা বলতেই হয়, তিনি জ্যোর্তিময় আত্মার মহাসাধক মানবহৃদয়ের প্রতীক।