ফারহানা ইয়াসমীন মুন্নী
আত্মার উন্নতি ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মানুষের জীবনকে পরশ পাথরের মতো মূল্যবান করে তোলার জন্য এবং নাজাত শিক্ষার শিক্ষক হিসাবে আমাদের প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ, আরেফে কামেল, মুর্শিদে মোকাম্মেল, যুগশ্রেষ্ঠ সুফি-সাধক, হেদায়েতের হাদী, আঁধারে আলোর নূর নক্শাবন্দিয়া-মোজাদ্দেদিয়া তরিকার বর্তমান একমাত্র খেলাফতপ্রাপ্ত পথপ্রদর্শক খাজাবাবা শাহ্সুফি কুতুববাগী (মা.জি.আ.) ক্বেবলাজান হুজুরের আগমন। আমরা বাবাকে কোন চোখে দেখবো জান্নাতের ফুল, চোখের মনি, নাকি নায়েবে রসুল? কিন্তু আমার দৃষ্টিতে তিনি হলেন নায়েবে রসুল। আমার প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ ইহকাল ও পরকালের কঠিন পথের দিশারী খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করে দরবারের আসা-যাওয়া শুরু করলাম এবং ততো দিনে প্রতি বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক গুরু-রাত্রিতে উপস্থিতসহ দরবারের বিভিন্ন খেদমতের কাজে স্বদিচ্ছায় অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করি। কারণ আত্মায় নির্মল শান্তি পাওয়া যায় তাই। তখন বাবাজানের কাছে যতবার সাক্ষাৎ করতে যেতাম, ততবারই বাবাজানকে বলতাম বাবা, আমার নাম আপনার পবিত্র মুখে উচ্চারণ করেন। প্রায়ই বাবাকে অনুরোধ করতাম। এরই মধ্যে একদিন সাক্ষাৎ করতে গেলাম, বাবাজান আমাকে বললেন, মা, মুরিদের নাম একবার বললেই চলে।’ তারপর প্রায় এভাবেই অনেকদিন কেটে গেল। দেখতে দেখতে এসে পড়লো মহাপবিত্র ওরছ শরীফ ও বিশ্বজাকের ইজতেমা। প্রস্তুতি মিটিংয়ে কিছু সংখ্যক পীর-বোনদের উপস্থিত থাকার জন্য বাবাজান বললেন। সেই মিটিংয়ে মোতালেব ভাইজান ও বাবু ভাইজানকে নিয়ে পরামর্শ করে আমাদেরকে যার যার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। হঠাৎ বাবাজান আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে, আমার নাম ধরে ডাকলেন। বাবাজানের পবিত্র মুখে আমার নাম শুনে কিছুক্ষণের জন্য আমার ভিতরে আমি ছিলাম না। ভাবলাম এ কী করে সম্ভব! বাবাজানের অগণিত ভক্ত, আশেক মুরিদের মধ্যে প্রতিদিন অসংখ্য ভাই-বোনেরা আসেন সাক্ষাৎপ্রার্থী হয়ে। কত মানুষ, কত নাম তবুও তাঁদের মধ্যে আমার নামটা বাবাজান স্মরণ রাখলেন! আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ি। অনেকক্ষণ কোনো কথা বলতে পারলাম না। সুফিবাদই যে শান্তির পথ সে পথের সহযাত্রী না হলে, এত সজীব সুগম মাধুর্য্যময় শিক্ষাধারা সুন্দর ও পবিত্র পথ, সে পথের সন্ধান হয়তো আমি কোনোদিন জানতাম না মুর্শিদ ক্বেবলাকে না পেলে। সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলামের নিয়মে নকশ্বন্দিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার বাইয়াত গ্রহণ করেছি পীরে-কামেল, মুর্শিদে মোকাম্মেল শাহসুফি আলহাজ্ব মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ্ (মা.জি.আ.) খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের কাছে। তরিকা গ্রহণের পর থেকে আমি ধীরে ধীরে অজানাকে জানতে পারছি। অচেনাকে চিনতে পারছি এবং প্রতিনিয়ত যা শিখে চলেছি, তা হলো, আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা, প্রতি নিঃশ্বাসে আল্লাহ নামের জিকিরে নিজের দিল-ক্বলব-হৃদয়কে জাগ্রত রাখা এবং নামাজে এলোমেলো চিন্তার বেড়া জাল থেকে মুক্ত হয়ে, হুজুরি দেলে নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত করা। কারণ, ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, সেখানে দুনিয়ার চিন্তা নিয়ে নামাজ পড়লে পূণ্যেরচেয়ে পাপের আশঙ্কাই বেশি থাকে। তাই সম্মানীত জাকের, জাকেরিন, পাঠক ভাই-বোনদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, মহান আল্লাহ এবং রসুল (সাঃ)এর নির্দেশ মত, সত্য তরিকার প্রেমময় ছায়াতলে আসুন, যেখানে রয়েছে ইহকাল-পরকাল দুইপারের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। তরিকার শিক্ষা এমন মহৎ যে, এক মানুষ আরেক মানুষকে হিংসা করতে পারবে না। হিংসা বিদ্বেষ ভুলে যেতে হবে। অন্যের দোষ তালাশ না করে নিজের দোষ তালাশ করা। পরনিন্দা করা থেকে নিজেকে সবসময় বিরত রাখা। মিথ্যা না বলা। মা-বাবার সেবা করা, গুরুজনদের প্রতি সম্মান, ভক্তি শ্রদ্ধা এবং ছোটদের প্রতি স্নেহ-মমতা প্রকাশ করা এবং তা বহাল রাখা। শুদ্ধ মানুষ হওয়ার অঙ্গীকারসহ নিয়মিত এই তরিকার আমল করা শিখছি। খাজাবাবা কুতুববাগীর কাছে না এলে এসবের কিছুই জানতাম না। অন্ধের মত বাতিহীন হয়ে এক সময় পৃথিবীর মোহ-মায়া ছেড়ে পরপাড়ে চলে যেতাম। আবার আলোহীন অন্ধকারে জেগে উঠতে…। খাজাবাবা কুতুববাগীর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করার পর অন্তত এই বিষয়ে নিশ্চিত করে জানতে পেরেছি। তাই মরাদম পর্যন্ত খাজাবাবার কদম মোবারকে থাকতে চাই। আত্মশুদ্ধি করে ইমানের সঙ্গে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিতে চাই।