তরিকা হল ঈমান ও আমলের মধ্যে সংযোগ সেতু

মেহেদুল ইসলাম মাহি

বেশ কয়েক বছর আগে জনৈক ইসলামী এক বক্তাকে তার এক বক্তৃতায় বলতে শুনেছিলাম, ঈমান ও আমলের মাঝখানে সংযোগ না থাকায় মুসলিম সমাজের আজ দূরাবস্থা। কথাটা আমার কাছে অত্যন্ত যুক্তিসংগত মনে হয়েছিল। তারপর থেকেই আমি ঈমান ও আমলের মধ্যে সংযোগ সেতুর সন্ধান করতে থাকি। অনেক বড় বড় আলেম-ওলামা, জ্ঞানী-গুণী থেকে শুরু করে কতজনের কাছেই কত জিজ্ঞাসা নিয়ে গিয়েছি, কিন্তু সদুত্তর তথা আমার কাক্সিক্ষত সেই সংযোগ সেতুর ঠিকানা কেউ দিতে পারেন নি। আমি তখন অনেকটাই আশাহত হয়ে পড়ি। এ অবস্থায় আমার শ্রদ্ধেয় মামার কাছে তরিকতের শিক্ষার রাস্তার কথা জানতে পারি, যা কিনা আমাকে হিতে বিপরীত করে তোলে। কেননা এতদিন ধরে অলি-আউলিয়া এবং তাঁদের মাজার শরীফ সম্পর্কে কটুক্তি ও মিথ্যাচার শুনে ও ভুল বুঝে মনে যে নেতিবাচক ধারণা করেছিলাম, সেটা অতিক্রম করে তরিকত এর পথে পদচারণা করার কথা কিছুতেই ভাবতে পারতাম না। এ অবস্থায় আমি তরিকা জানার ও বুঝার জন্য অনেক শ্রদ্ধেয় অলি-আউলিয়ার জীবনী এবং তাঁদের লেখা বই সংগ্রহ করে পড়ার চেষ্টা করি। আমার এই চেষ্টারত থাকার এক পর্যায়ে মহান আল্লাহর অশেষ দয়ায়, আমি উপলদ্ধি করতে পারি যে, তরিকার রাস্তায় গেলেই আমি সেই কাক্সিক্ষত সংযোগ সেতুর সন্ধান পাব। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করতাম যেন, তিনি আমায় সেই সংযোগ সেতুর সন্ধান দান করেন। একসময় মহান আল্লাহ আমার প্রার্থনা কবুল করেন এবং আমাকে একবিংশ শতাব্দীর মোজাদ্দেদ, জামানার হাদি খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য দান করেন। তাঁকে দেখে যেকোন সাধারণ মানুষের মত আমিও অভিভূত হয়ে যাই এবং অনুভব করতে থাকি, ইনি-ই সেই পবিত্র মানুষ মহা-আত্মা, ইনি-ই আমার কাক্সিক্ষত সংযোগ সেতুর সন্ধান দিতে পারবেন। তারপর থেকে আমি খাজাবাবার সান্নিধ্যে এসেই ঈমান ও আমলের মধ্যে সংযোগরূপ সেতুর হদিস পাই এবং সেই প্রাপ্তির পথে চলার আনন্দময় স্বাদ নিজের হৃদমাঝারে অনুভব করতে থাকি।

কি সেই সংযোগ সেতু আর কেনই বা সেটা দরকার : বিখ্যাত প্রাবন্ধিক ও সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য আজ ব্যহত। আজ আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাই জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে নয়, বরং অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে বা ভালো চাকরি লাভের উদ্দেশ্যে’। সর্বজন প্রিয় এ পন্ডিত যর্থার্থই বলেছেন ইসলামের আসল উদ্দেশ্য সমাজ আজ থেকে হারিয়ে গেছে, যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাও বড় বড় জুব্বা আর ফ্যাটা পাগড়িমার্কা আলেম নামধারীদের দূরাচারের জন্য যাই যাই করছে। কিন্তু আল্লাহর মনোনীত প্রিয় ধর্ম ইসলাম যে জ্ঞানের এক মহা সমুদ্র, আমরা সেই জ্ঞান আহরণের পথে না হেঁটে, এর গভীরতাকে উপলব্ধি করতে না শিখে স্বাদ ও গন্ধ ছাড়া আমল করে চলেছি। এই চর্চা আপাত দৃষ্টিতে আমাদের মধ্যে জ্ঞানী ভাব ফুটিয়ে তুললেও আসলে সে জ্ঞান মস্তিষ্ক থেকে মন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। আর তাই আজ আমাদের পঙ্গু শিক্ষা ব্যবস্থার মত পঙ্গু আমল দ্বারাও জ্ঞানী মানুষ তৈরি করা যাবে না। বর্তমান সমাজে পোশাকধারী মানুষের সংখ্যা বাড়লেও সত্যিকারের জ্ঞানী মানুষের, সৎ মানুষের বড়ই অভাব। তাই তো আমার মনে আজ জিজ্ঞাসা, যে শিক্ষা মানুষকে সঠিক জ্ঞানের গুণী করতে পারে না, সে শিক্ষা কি আসলেই প্রকৃত শিক্ষা? ঠিক তেমনি যে আমল ঈমানী শক্তিকে, জ্ঞানকে গভীরতা দান করতে পারে না, মানুষকে সঠিক সত্য ও ধৈর্যের পথ দেখাতে পারে না, অর্থাৎ ঈমান ও আমলের মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে পারে না, সে আমল দিয়ে আর যা-ই হোক না কেন, আমার বিশ্বাস আল্লাহকে পাওয়া যাবে না। জান্নাত লাভের রাস্তা পাওয়া যাবে না। ঈমানী জ্ঞান গভীর করার জন্য ঈমান ও আমলের মধ্যে সংযোগ-রূপ সেতুর জন্য, আল্লাহ-রসুলের (সঃ) সত্য ইসলামকে (যে ইসলাম শুধু ন্যায়- অন্যায়ের বোধই তৈরি করে না, ন্যায় ও সত্যের পথে চলার অন্তর্নিহিত শক্তি ও সাহস দান করবে) মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছানোর জন্য, আমার পীর-মুর্শিদকেবলা খাজাবাবা কুতুববাগীর দরবারে আসুন এবং তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে সত্য ইসলাম ও মহানবী রসুল (সঃ)-এর আদর্শে জীবনকে আলোকিত করি। আমার পক্ষ থেকে প্রত্যেক মানুষের কাছে এ এক উদাত্ত আহ্বান।

(Visited 472 times, 1 visits today)
Share