কুতুববাগী কেবলাজানের বিশেষ কেরামতি প্রকাশ

সেহাঙ্গল বিপ্লব

আমাদের এবারের ঐতিহাসিক মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্ব জাকের ইজতেমার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই সারাদেশে চলছিলো লাগাতার হরতাল-অবরোধ, যা এখনো চলমান। যা-ই হোক, এ লেখা রাজনীতি বা জাগতিকতা নিয়ে নয়। তবু যা কিছু ঘটে তা, এ জগতেই ঘটে এবং ঘটতেই থাকবে। পরম করুণাময় আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন যিনি ‘কূন-ফাইয়া-কূন’ এর মালিক, তিনিই পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে তাঁর প্রিয়বান্দা তথা কামেলপীর-মুর্শিদের কথা বলেছেন। আবার দয়াল নবীজি (সঃ) সাক্ষি স্বরূপ পবিত্র হাদিসে বলেছেন, ‘আউলিয়ায়ে কিরামাতুন হাক্কুন’। অর্থাৎ, অলি-আল্লাহ্দের কেরামত সত্য’। তেমনই এক অলৌকিক কেরামত এর কথা আপনাদের বলছি। যা নিজে না দেখলে, না শুনলে কিংবা উপলব্ধি না করলে, অনেকের পক্ষেই বিশ্বাস করা কঠিন। তবুও অবিশ্বাসী কিংবা অল্পবিশ্বাসী সবাইকেই মানতে হবে, অলি-আল্লাহ্দের অলৌকিক শক্তির উজ্জল দৃষ্টান্ত যুগে যুগে এ পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের জীবন ও সাধনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত দরদী মনের অধিকারী এবং সব মানুষের জন্য সদা কল্যাণকর পথের দিশারী। যে পথের সন্ধান বই-কিতাব পড়ে পাওয়া যাবে না, বোঝাও যাবে না। বুঝতে হলে কামেল মুর্শিদ নামের দীক্ষা-গুরুর সাহায্য নিতে হয়। কারণ, এই সুপথ কোন দেশের মানচিত্রে আঁকা নেই, তা শুধু নিজ নিজ দেহ রাজ্যের ভেতর নিহিত রয়েছে।  বর্তমানে কামেল পীর ছাড়া এই পথের খবর কেউ জানেন না। এ পথের সন্ধান যে পাবেন না, সে অনন্ত জীবনের সঠিক গন্তব্যেও যেতে পারবে না। ভুল পথ ধরে কত মানুষ হারিয়ে ফেলছেন, জীবনের অমূল্য সম্পদ আমল ও ঈমান। আর শয়তানের অনুসারি হয়ে চলেছেন কবরে। আমরা সবাই কম বেশি জানি, ঈমান নিয়ে কবরে যেতে না পারলে, বেঈমানদের উপযুক্ত স্থান হবে জাহান্নাম।

২২ ও ২৩ জানুয়রি ২০১৫ এর ঐতিহাসিক মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্ব জাকের ইজতেমার প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছিলো ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে। কুতুববাগী কেবলাজানের মহামূল্যবান নছিহতবাণী দেশ-বিদেশে প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে, আশেকান ও জাকেরান কর্মী ভাই- বোনেরা নিরলস স্বেচ্ছাশ্রম করে যাচ্ছিলেন।  সুচারুরূপে এবারের ওরছ শরীফ সফল করা নিয়েও কর্মী  ভাই-বোনদের ভাবনার কমতি নেই। এমনই এক সময়, এক জাকের ভাইজান অতি আদবের সঙ্গে কেবলাজানকে বললেন- বাবা, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে অস্থির হয়ে উঠছে, এর কোন প্রভাব ওরছ শরীফে না পড়ে, সেজন্য আপনার দোয়া চাই। এ কথা শুনে কেবলাজান বলেন- বাবা, চিন্তা করেন না, আমরা রাসুল (সঃ) এর সত্য তরিকার বাণী প্রচার করছি। আল্লাহই আমাদের সাহায্য করবেন, কোন সমস্যা হবে না, সব ঠিক ঠাক মতোই হবে। অন্য এক জাকের ভাইজান বললেন- বাবা, ওরছের সময়ও পরিস্থিতি এমন থাকলে ঢাকার বাইরে থেকে অসংখ্য আশেকান-জাকেরান ভাই-বোনের আসতে অসুবিধা হতে পারে। আপনি দোয়া করবেন যেন, সবাই ওরছ শরীফে শামিল হতে পারে। এবারও অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে কেবলাজান বললেন, বাবারা, আপনারা মন-তন দিয়ে ওরছের কাজ করে যান, দেখবেন কোথাও কোন রকমের ত্রুটি হবে না। আমার জাকেরদের কোন ক্ষতি হবে না, তারা হাউশে-মহব্বতে আল্লাহ্র জিকির করতে করতে ওরছে শরীফে আসবেন। আপনাদের কোন ভয় নাই, আপনারা দয়াল নবীজির সত্য তরিকার সালেক, কেউ আপনাদের চুল পরিমাণ ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহতায়া’লা জাকেরদেরকে বেহেশতি চাদর দিয়ে ঢেকে নিয়ে আসবেন। তাদের কোন ভয় নাই।

মুর্শিদ কেবলাজানের উছিলায় পুরোদমে এগিয়ে যেতে লাগলো দরবার শরীফ সংলগ্ন আনোয়ারা উদ্যানে সুবিশাল প্যা-েল, তোরণ নির্মাণ এবং সেই সাথে দেশ-বিদেশে প্রচার ও দাওয়াতের কার্যক্রম‘। দেখতে দেখতে ওরছ শরীফের দিন কাছে আসতে লাগলো, কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোন উন্নতি নেই, দিন দিন যেন আরও ঘনিভূত হচ্ছে অচলাবস্থা। এরমধ্যে ঈমানের কমজোর নাকেস মুরিদগণ বলাবলি করছে- যদি ওরছের দিনও হরতাল-অবরোধ থাকে তাহলে যে কি হবে জানি না। দিন-রাত কষ্ট করে এত বিশাল আয়োজন হচ্ছে, কিন্তু যদি লক্ষ লক্ষ জাকের ভাই-বোন ঢাকাতেই আসতে না পারলো, তবে তাদের মনে কষ্টের সীমা থাকবে না’। এমনই এক সন্ধিক্ষণে ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর, সিনিয়র কয়েকজন জাকের ভাই কেবলাজানের সঙ্গে দেখা করে বিনয়ের সঙ্গে বললেন- বাবা, দেশ ও দেশের বাহির থেকে ফোন আসতেছে, বিভিন্ন এলাকার কিছু কিছু জাকের ভাই- বোনেরা ভয় পাচ্ছে, কাফেলা নিয়ে আসতে সাহস করছে না। আবার কোন কোন এলাকার ভাইজানেরা বলছেন, গাড়ি ভাড়া করেছি, কিন্তু এখন ওই সব গাড়ির মালিকগণ গাড়ি ভাড়া দিতে চায় না। তারা ভয় পাচ্ছে, পথে যদি কোন বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে! যেভাবে পেট্রোল বোমার আতঙ্ক চারদিকে, অনেক গাড়ির মালিক অগ্রিম দেয়া টাকা ফেরৎ নিতে বলে। এই অবস্থার মধ্যে তাদের কী বলবো? এ কথা শুনে কেবলাজান বললেন- জাকেরদেরকে বলেন তারা যেন, আল্লাহ্র জিকিরের সাথে রওয়ানা করে। আল্লাহ্র রহমতে তাদের একটা চুলেরও ক্ষতি হবে না। আপনারা পরামর্শ করেন কীভাবে তারা আসতে পারে, তারপর আমাকে জানান। অনেকেই বিভিন্নরকম পরামর্শ দিলেন যে, কীভাবে আশেকান-জাকেরান ভাই-বোনেরা নিরাপদে ওরছ শরীফে শামিল হতে পারে। তাদের পরামর্শগুলো লেখা হলো এবং কেবলাজানের কাছে উপস্থাপন করা হল। কেবলাজান বললেন, বাবারা, জাকেরদের বলেন তারা যেন আল্লাহর নাম নিয়ে রওয়ানা করে, পথে তাদের কোনরূপ সমস্যা হবে না। সকল বালা-মসিবত আল্লাহ্ দূর করে দিবেন। আল্লাহ্র কাছে আমার আশেকান-জাকেরানদের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা চাইবো, যেন সহি-সালামতে তারা আপন পীরের বাড়ির ওরছ শরীফে শামিল হতে পারে।

কেবলাজানের নির্দেশ তখনই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকার জাকের ভাই-বোনদের জানিয়ে দেয়া হলো। কেবলাজানের হুকুম পেয়ে তরিকার নিয়মে পাক কালাম ফাতেহা শরীফ পাঠ করে, জাকের ভাই-বোনেরা আপন মুর্শিদের শিক্ষা আল্লাহ্র জিকির করতে করতে রওয়ানা হয়ে আসতে লাগলেন। দেশব্যাপী চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন, হরতাল-অবরোধের তা-ব পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে, হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সাথে জীবন-মরণ লড়াই করছে কত নিরীহ মানুষ। আবার অকাতরে মারা যাচ্ছে অনেকে। কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়া’লার নৈকট্য লাভের আশায়, এমন বৈরী অবস্থার মধ্যে জীবন বাজি রেখে, শুধু মুর্শিদের প্রেমে বেহুশ-বেকারার হয়ে চারদিক থেকে পঙ্গপালের মতো ছুটে আসতে লাগলেন আল্লাহ্র প্রেমিক অসংখ্য নারী-পুরুষ। হে প্রভু তোমার লীলা অপার। ধীরে ধীরে আনোয়ারা উদ্যানের বিশাল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠলো, ২৩ জানুয়ারি জুমার নামাজের আগেই। কিন্তু বৃহস্পতিবার গুরুরাত্রে রহমতের ডাকে যখন খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান মঞ্চে শুভাসন গ্রহণ করলেন, তখন হঠাৎ এত মানুষের আগম ঘটলো যা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। যদিও রাতভর দূর-দূরান্ত থেকে কাফেলা আসছিলো, যা শুক্রবার সকাল এগারোটা পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো। তবুও ওই সময়ে রাত তিনটা, যারা ওরছ শরীফস্থলে উপস্থিত ছিলেন, তারা নিশ্চয়ই দেখেছেন ঘটনাটা। ওই রাতে কোত্থেকে আসলো এত বিপুল সংখ্যক মানুষ! এরা কি সবাই মানুষ ছিলেন? না কি মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন অসংখ্য ফেরেশতা ও অলি-আল্লাহ্র রূহানি পবিত্র আত্মা! প্রিয় পাঠক, এর চেয়ে বড় কেরামতি আর কী হতে পারে? এরপর শুক্রবার জুমার নামাজের আগে দেখা গেলো আরো এক বিশেষ কেরামতি, নামাজের কিছুক্ষণ আগেও ময়দান কিছুটা ফাকা ফাকা ছিল। কিন্তু দেখা গেল, অল্প সময়ের মধ্যে উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেল। শুধু মানুষ আর মানুষ! দূরপাল্লাসহ রাস্তাঘাটের যা বিপদজ্জনক অবস্থা, তার ভেতর এত মানুষ কী করে আসলো? কিন্তু কারো চোহারায় ক্লান্তির ছাপ নেই। তাদের অন্তর মুর্শিদের প্রেমে একাকার বলেই, শত কষ্ট স্বীকার করে এসেছেন, শুধু আপন মুর্শিদের সহবত লাভের আশায়। কেবলাজানের সহবত লাভে অন্তর ভরপুর করে, আবার ফিরে গেছেন যার যার জাগতিক সংসারের টানে।

প্রতি বছরের মতো এবারও পুরনো জাকের ভাই-বোনদের সঙ্গে এসেছেন নতুন ভাই-বোন। তরিকায় ভর্তি হওয়ার পর তাদের অনুভূতি ছিলো এমনÑ সত্যি আজ আমরা মহা এক নিয়মত পাইছি! যেন মুর্শিদের উছিলা ধইরা আল্লাহ-নবীর দেখা পাই। আপনারাও দোয়া করবেন, এত দিন চোখ ছিল তবু অন্ধ ছিলাম, এখন মনে হলো সেই চোখে আলো জ্বালায় দিছেন খাজাবাবা কুতুববাগী। ঢাকার বাহির থেকে কাফেলা নিয়ে আসা জাকের ভাইজানদের সঙ্গে কথা বললাম। তারা কঠিন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন- বাবার দোয়ায় কোন সমস্যা হয় নাই, বরং গাড়ি কোথাও থামালে ওখানকার লোকজন জিজ্ঞেস করেছে, আমরা কুতুববাগ দরবার শরীফের ওরছ শরীফ ও বিশ্ব জাকের ইজতেমায় যাচ্ছি শুনে অনেকেই বাবাজানের কাছে দোয়া চাইছে। আর বলছে এবার যেতে পারলাম না, আশা রাখি আগামী ওরছ শরীফে শামিল হবে ইনশাআল্লাহ’। এর কিছুক্ষণ পর বেনাপোল থেকে একটি কাফেলা এসে পৌঁছালে লক্ষ করলাম, তাদের মধ্যে কিছুটা ক্লান্তি আর আতঙ্কের ছাপ, তবু মনোবল তাজা! এগিয়ে সালাম দিয়ে কুশল জানতে চাইলাম, প্রায় একই সঙ্গে অনেকেই বললেনÑ ভালো আছি, বাবাজানের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে মুর্শিদের দরবারে আসতে পারছি! জিজ্ঞেস করলাম পথে কোন অসুবিধা হয়েছিল? তারা বললেন- আরে ভাইজান একবার না, তিনবার পিকেটারদের কবলে পড়ছিলাম। গাড়িতে দুইবার পেট্রোল বোমা মারছে। কিন্তু কেবলাজানের দোয়ার বরকতে একবারও বোমা ফাটে নাই! একটা বোমা গাড়ির ছাদে পড়ে গড়িয়ে মাটিতে পড়লো। অপরটা গ্লাসে পড়ে গ্লাস ভাঙ্গলো, কিন্তু ভেতরে পড়লো না। কী বলবো, বাবাজান আমাদের একটা কেরামতিই দেখাইছেন। পাশ থেকে একজন জিজ্ঞেস করলেন- তখন কি গাড়ি চলছিলো? কাফেলার একজন বললেন- চলন্ত অবস্থাতেই মারছে।

মুর্শিদের কথা পরমসত্য, অলি-আল্লাহ্র জবান, মহান আল্লাহ্‌র জবান। জামানার মোজাদ্দেদ হয়ে যারা পৃথিবীতে এসেছেন, তারা আল্লাহ্র কাছে অধিক প্রিয় এবং সম্মানীত বলেই, তাদের ভক্ত-অনুসারিদের জন্য, দয়ালু আল্লাহতায়া’লার দরবারে কিছু দাবি করলে, আল্লাহ্ মঞ্জুর করেন। এ বিষয়ে জগৎবিখ্যাত মনীষী-পন্ডিত ব্যক্তিত্বরাও প্রমাণ সহকারে বিশদভাবে লিখে গেছেন, কামেল মুর্শিদদের অলৌকিক শক্তি বা কেরামতির বর্ণনা। এ কথা ঈমানী মানুষ মাত্রই বিশ্বাস করবেন। আর অবিশ্বাসীরা কখনোই সহজে বিশ্বাস করবে না। দেশের রাজনৈতিক এমন দুর্যোগের মধ্যে কীভাবে এত মানুষ ঘরের বাহির হতে পারে? এ বাহির তো টাকা-কড়ি কিংবা জাগতিক মোহে নয়, এ শুধু মুর্শিদের প্রেম বিনিসুতার টান। নইলে শত শত মাইল দূর থেকে কুতুববাগ দরবার শরীফের মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্ব জাকের ইজতেমায় শামিল হতে পারতেন কি? এর চেয়ে অলৌকিক কেরামতি আর কী হতে পারে? খাজাবাবা যে কথা দুই মাস আগে বলেছিলেন, অক্ষরে অক্ষরে তা-ই ঘটলো দুই মাস পরে। সোবহান আল্লাহ! এ থেকেই বোঝা যায়, বিজ্ঞানের আবিস্কার যেখানে শেষ, সেখান থেকেই কামেল মুর্শিদের কেরামতি শুরু, এতে কোন সন্দেহ নাই। আর কোরআন হাদিস মতেও অসংখ্য নবী-রাসুল ও অলি-আল্লাহর রূহানি পবিত্র আত্মার মিলন স্থানে আল্লাহর পক্ষ থেকে অশেষ রহমত, বরকত ও মহা নিয়ামত বর্ষিত হয়।

ওরছ শরীফের পর সবকিছু মিলিয়ে দেখা গেল, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারের মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্ব জাকের ইজতেমা আল্লাহর রহমতে অধিকতর সুচারুরূপে সফল হয়েছে। যখন চারদিকে চলছে হরতাল-অবরোধ আর পেট্রোল বোমায় পুড়ছে মানুষ, তখন এর থেকে রক্ষা ও আত্মার মুক্তি কামনায় ঢাকার ফার্মগেটে  ধর্মীয় মহা ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে উদ্যাপিত হচ্ছে, কুতুববাগ দরবার শরীফের ঐতিহাসিক মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্ব জাকের ইজতেমা ২০১৫। আরোও অবাক হওয়ার বিষয় ছিলো, শুক্রবার জুমার আগে বেলা বারোটায় যখন কেবলাজান মঞ্চে আগমন করলেন, সত্যিই অবিশ্বাস্যভাবে যেন, স্বর্গীয় একটা শান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলো। এমনই মনোরম পরিবেশ ওই দিন গভীর রাত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। যারা ওরছ শেষেও কিছুদিন দরবারে অবস্থান করছিলাম, তারা অনেকেই অনুভব করেছি। অগণিত জাকের ভাই-বোনের খেয়াল ছিলো কেবলাজানের প্রতি। সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছেন, আপন মুর্শিদের অমূল্য দিক-নির্দেশনা ও নসিহতবাণী। এরপর বিশ্ববাসীর শান্তি ও আখেরাতে মুক্তি কামনা করে, মহান আল্লাহর শাহী দরবারে বিশেষ মোনাজাত করেন খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান হুজর। তিনি আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে বলেন, হে আল্লাহ, তোমার আশেক পাগল অসংখ্য নারী-পুরুষ এই দুর্যোগের মধ্যেও কত কষ্ট করে, দয়াল নবীর সত্য তরিকার দাওয়াতে হাজির হয়েছে। তুমি তাদের সবাইকে আজ ক্ষমা করে দাও। যেভাবে তারা তোমার অলি-আউলিয়াদের মহামিলনে হাজির হয়েছে, তেমনি করে নিরাপদে বাড়ি পেঁৗঁছে দিও আল্লাহ। আজ আমার একটা আশেক-জাকেরকেও খালি হাতে ফিরাবা না, এই বলে সারা বাংলাদেশের সার্বিক কল্যাণ কামনা করেন। কেবলাজান প্রতি বছরের মতো এবারো ওরছ শরীফ শেষে কয়েকজন জাকের ভাইজানকে বললেন- বাবারা, জাকেরদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, পথে যেতে কোন অসুবিধা হলো কি না। তারা কে কেমন আছেন খোঁজ নেন, আমাকে জানান। সত্যিই কামেল মুর্শিদের কথা বর-হক। আমরা খোঁজখবর নিয়ে জানলাম যে, সবাই আল্লাহর রহমতে নিরাপদেই নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছে গেছেন। কোন কোন জাকের ভাই বোনরা বলেছেনÑ ওরছ শরীফে আসার সময়ের চেয়েও, বেশি নিরাপদ লক্ষ করছি, বাবাজানের দোয়া নিয়ে বাড়ি ফেরার সময়। আমাদের মনেই হয়নি যে, দেশে দীর্ঘদিন হরতাল-অবরোধ চলছে, যেন স্বাভাবিক সময়ের মতোই সবকিছু ঠিকঠাক। এ সবই কেবলাজানের দোয়ার বরকতে সম্ভব হয়েছে।

কেবলাজানের আরও একটা বিশেষ কেরামতি দেখলাম, তা হলো তাবারকের জন্য যে পরিমাণ সামগ্রী মালখানায় মজুত হয়েছিল, তা দিয়ে দু’দিনব্যাপী চব্বিশ ঘন্টা বিরতিহীনভাবে এত মানুষকে তাবারক খাওয়ানো সত্যিই অসম্ভব। কিন্তু এ ক্ষেত্রে খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, তিনি বলেছিলেন- এই ওরছ শরীফে যদি সারা বাংলাদেশের মানুষও তাবারক খায়, তবুও বিন্দু পরিমাণ টান ফেলতে পারবে না। দেখবেন মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ভান্ডারে এক কোণাও খালি হয় নাই। ওরছ শরীফ শেষে দেখা গেলো সত্যিই তা-ই। শত শত গরু কোরবানী করার পরেও অনেক গরু, চাল, ডাল, তেল, নুন, মসলাসহ খাদ্যসামগ্রী অবশিষ্ট রয়ে গেছে। যা দিয়ে এরকম আরো এক ওরছ শরীফের তাবারক বিতরণ সম্ভব। পরম দয়ালু আল্লাহ্‌র অসীম দয়া ছাড়া এ অসাধ্য সাধন কী করে সম্ভব? আর তা-ই তো আশেকান-জাকেরানদের চোখের মণি, কাল্বের নূর খাজাবাবা মুর্শিদ কেবলা কুতুববাগীর এরকম নানা ক্ষেত্রে অসংখ্য কেরামতি ঘটেই চলছে, যা আমাদের উপলব্ধি আর কিছুটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আল্লাহতায়া’লার শাহী দরবারে শুকুর জানাই। আর ফরিয়াদ জানাই কেবলাজানের স্পর্শ পেয়ে যেন মরতে পারি। আমিন।

(Visited 710 times, 1 visits today)
Share