কথায় বলে, মক্কার মানুষ হজ্ব পায় না!

আমিনুল ইসলাম তুহিন

সুফিবাদই শান্তির পথ’ খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর, সর্বসাধারণকে এই শান্তির পথে আহ্বান করছেন। অনেক ভেবে চিন্তে তাঁর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে, নিজের চোখে একজন অলি-আল্লাহকে দেখার পর নিজেকে সত্যিই ভাগ্যবান ও ধন্য মনে করছি। এ জন্য মহান আল্লাহ’তালার দরবারে শুকরিয়া জানাই। খাজাবাবা কুতুববাগী আল্লাহতা’লার এমন একজন অলি-বন্ধু যাঁকে দেখা বা তাঁর শিষ্য হবার সৌভাগ্য সবার হয় না। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর যে, আল্লাহর অলি-বন্ধু তা কী করে বুঝলাম? মহান রাব্বুল আলামিন প্রতিটি সচেতন মানুষকেই ভালো, মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, সাদা-কালো, স্বাদ-বিস্বাদ বুঝার ক্ষমতা দিয়েছেন।

পরিচিত এক ভাইয়ের মাধ্যমে খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর সর্ম্পকে জানতে পারি। কিন্তু তখন আমার মনে টান লাগেনি। এরপর অনেকের মুখে অনেক কথা শুনে একদিন কুতুববাগ দরবারে যাওয়ার জন্য মন টানলো। এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গেলাম কুতুববাগ দরবার শরীফ ৩৪ ইন্দিরা রোড, ফার্মগেটে। গিয়ে দেখি দরবার শরীফের নিজস্ব বিশাল দশতলা ভবন, ভবনের পুরোটাই দরবার শরীফ। খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুরকে সামনাসামনি দেখেই বুঝতে পারলাম তিনি শুধু একজন কামেল পীর-ই নন, তিনি মহান আল্লাহর অলি এবং আমাদের জন্য আল্লাহতা’লার অশেষ রহমত। কারণ, তাঁর চেহারা মোবারক থেকে এমন এক নূর প্রজ্জ্বলিত হচ্ছিল যে, অপলক তাকিয়ে থাকলাম দীর্ঘ সময়। তাঁর কথা বলার ধরণ দেখে আরও অবাক হলাম, এত নিচু স্বরে তিনি কথা বলেন যেন মনে হয়, তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা শুনতে পায় না। কিন্তু তাঁর সামনে থেকে একটু দূরের মানুষও সে কথা শুনতে পায় এবং বুঝতে পারেন। তাঁর আদেশ উপদেশ এতই মূল্যবান যে, প্রতিটি শব্দ আমাদের এ জীবনেই শুধু নয়, পরকালের জন্যও অমিয় সংবাদ।

কথায় বলে, মক্কার মানুষ হজ্ব পায় না! ঠিক তেমনি আমরাও হাতের কাছে মহান আল্লাহর এমন একজন অলি-বন্ধু থাকতে তাঁর দোয়ার বরকত ও রহমত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কারণ, মানুষে নিন্দা করবে সেই ভয়ে আল্লাহর অলির দরবারে আমরা যাই না। শুধু দুনিয়ার ভোগ-বিলাস নিয়ে মেতে থাকি, আর সমাজের অতি সাধারণ মোল্লা মৌলভীদের দেয়া ফতোয়া এবং তাদের শেখানো ইসলাম নিয়ে মাতামাতি করি। কিন্তু ইসলামের মূলে যে সুফিবাদ, সেই সুফিবাদ সম্পর্কে আমরা কখনোও জানার চেষ্টা করি না। কিংবা করলেও তা শতকরা কত ভাগ মানুষ আল্লাহ ও রসুল (সঃ)-এর সত্য ইসলামের সুফিবাদকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করি? তাই আমার বিশ্বাস ইসলামের সুফিবাদের শিক্ষা বা জ্ঞান ছাড়া সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। আমি এখন দয়াল খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুরের মুরিদ (ছাত্র), তাঁর কাছে তরিকতের বাইয়াত গ্রহণ করেছি, আল্লাহতা’লা তাঁর মাধ্যমে আমাকে সঠিক পথ দেখাবেন। ইনশাআল্লাহ। সুফি সাধকগণ হলেন পরশপাথরের মতো, তাঁদের মাধ্যমে আমরা আলোকিত হই। তাঁদের পবিত্র হাতের ছোঁয়া ছাড়া আমাদের আলোকিত হবার অন্য কোনো পথ নেই। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি হে আল্লাহ, আপনি ভুল পথের যাত্রীদেরকে কুতুববাগ দরবার শরীফে সুফিবাদের শামিয়ানার নিচে জায়গা নেয়ার তৌফিক দান করুন। বাংলাদেশ অলি আল্লাহর দেশ এবং শুধু উপমহাদেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই খোলাফায়ে রাশেদিনদের পর যাঁদের মাধ্যমে ইসলামের পতাকা উড়ছে। এ দেশে অনেক অলি-আল্লাহ পীর-মাশায়েখের দরবার ও মাজার শরীফ রয়েছে। যেখানে গেলে সাধারণ শিক্ষিত এক শ্রেণির আলেম মোল্লা ইমামরা বেদআত-বেদআত বলে সঙ্গে আধুনিক শিক্ষিত জনেরাও ছুটর দিনে মসজিদে গিয়ে, ওই সব ভুল ফতোয়া আর গীবতকাদের সুরে তাল মিলিয়ে বলে, পীরের কাছে যাওয়া নাজায়েজ। এখানে আমি বলবো সত্য তরিকার কামেল পীরে-মুর্শিদের কাছে প্রতিটি মানুষের যাওয়া আল্লাহ ও রসুল (সঃ)-এর নির্দেশ এবং তিনি যদি হন আল্লাহর অলি-বন্ধু, তবে তো তাঁর উসিলায় মহান আল্লাহর অশেষ বরকত গ্রহণ করা সবারই কর্তব্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতা’লা বলেন, অনুসরণ কর তাদের যারা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চায় না এবং যারা সৎ পথপ্রাপ্ত (সূরা, ইয়াসীন, আয়াত-২১)

আর যারা মিলাদ-কিয়ামকে বেদআত বলে, সুফি সাধকদের বিরুদ্ধে গীবত করে, তাদের জন্য এই সমাজে বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তারা ইসলামের অর্ন্তনিহিত ইলমে তাসাউফের বিষয়গুলো ঠিক অনুধাবন করতে পারেনি। যেমন, রেলগাড়ি শুধু তার সমান্তরাল লাইনেই চলে, কোনো কারণে লাইনচ্যুত হলেই দুর্ঘটনা, ইঞ্জিনসহ বগি হাসপাতালে! একজন পীরে কামেল অলি-আল্লাহরও পথ, ‘ইহদিনাছ সিরওয়াত্ল মোস্তাকিম’ সহজ-সরল সমান্তরাল পথ। যে পথের যাত্রী সবাই শুধু বিপথগামীদের হিংসার কারণে তারা বিপন্ন পথে দাঁড়িয়ে সুপথে কাঁটা ছড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পীর-মাশায়েখ অলি-আল্লাহদের সুনাম না করে সমালচনা শুনা যায় তাদের মুখে। যা ওই লাইনচ্যুত রেলগাড়ির মতো অবস্থা। অথচ ওই মুখের কাজ হলো, মহান আল্লাহর প্রসংশা আর প্রয়োজনীয় কল্যাণমূলক কথা বলা। কিন্তু আমরা বুঝেও বুঝি না, জেনেও না জানার ভান করি এবং ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর অলিদের সঙ্গে বেয়াদবি করি। আল্লাহ যেন আমাদেরকে বুঝার জ্ঞান দান করেন এবং হেদায়েত করেন, ওই সমস্ত মসজিদের মোল্লা ইমাম ও সাধারণ কিতাবী আলেমদের। যারা পার্থিব জীবনকেই বড় করে দেখছে এবং নিজেদেরকে বড় করতে গিয়ে পাপের ভাগিদার হচ্ছে। তাই মহান আল্লাহ যেন ওই সমস্ত ফেৎনাকারীদের কাছ থেকে আমাদের হেফাজত করেন।

(Visited 664 times, 1 visits today)
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *