আল্লাহতা’লা ফেরেশতাদের নিয়ে নিজেই নবীজির প্রতি দরূদ-সালামের মজলিশ করছেন

আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ হযরত জাকির শাহ্  নকশ্‌বন্দি মোজাদ্দেদী

ইন্নাল্লা-হা ওয়া মালাইকাতাহু ইউসল্লুনা আলান নাবীয়্যি; ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আ-মানু সল্লু আলাইহি ওয়া সাল্লিমূ তাস্‌লিমা (সূরা: আহযাব, আয়াত, ৫৬)

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহতা’লা এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর (সাঃ) মহব্বতে ও সম্মানে দরূদ-সালামের মজলিশ করছেন এবং অব্যাহতভাবে করতে থাকবেন; হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর (সাঃ) সম্মানে ও মহব্বতে আদবের সঙ্গে দরূদ ও সালামের মজলিশ কর। কোরআনুল করীমের উপরোক্ত আয়াতটি আরবী ব্যাকরণিক (মুযারি’সিগা) মর্ম অনুযায়ী অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে অর্থবহ করে। আয়াতটি বহুবচনাত্মক এবং দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে মহান আল্লাহতা’লা ও তাঁর ফেরেশতাগণ; অন্যভাগে ঈমানদার মুসলমানগণ। আয়াতটিতে নবী করীমের (সাঃ) মহব্বত ও সম্মানে দরূদ ও সালামের আদেশ করা হয়েছে। কিন্তু দরূদ ও সালামের এ আদেশটি কীভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে? তা বলা হয়নি। তবে বিষয়বস্তু বহুবচনাত্মক এবং ঈমানদারদের অর্থাৎ, একাধিক ব্যক্তিকে দরূদ-সালাম অনুশীলনের আদেশ করা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, এটি সম্মিলিত অনুশীলন প্রক্রিয়া। জানা যায় যে, মহান আল্লাহতা’লার উপরোক্ত আয়াতেকারীমার মর্ম অনুযায়ী আউলিয়াকিরামগণ দরূদ ও সালামের এ সম্মিলিত অনুশীলনটি ‘ক্বিয়ামে মিলাদ শরীফ’ এর মাধ্যমে অনুশীলন করতেন। তাঁরা তাঁদের অনুসারীদেরকেও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন, দিচ্ছেন এবং দিতে থাকবেন। ক্বিয়ামে মিলাদ শরীফে আউলিয়াগণ প্রথমে আল্লাহতা’লার জিকির এবং নবী করীমের (সাঃ) মহব্বতে ও সম্মানে তাযীমের সঙ্গে দরূদ শরীফ পাঠ করেন। এরপর নবী করীমের (সাঃ) মহব্বতে ও সম্মানে ক্বিয়ামের মাধ্যমে সালাতুস সালাম পাঠ করেন। তারপর নবীজির উছিলায় নিজেদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া-মোনাজাত করেন। সালাম একটি প্রশংসাসূচক আশির্বাদ জ্ঞাপক বাক্য। সালামের শাব্দিক ভাবের ক্ষেত্রে এর তাৎপর্য ও অর্থ ভিন্ন ভিন্ন হয়। সালামের মধ্যে দোয়া, প্রশংসা, প্রার্থনা, শ্রদ্ধা-সম্মান, স্নেহ, প্রেম-প্রীতি ও ভালোবাসার অর্থ নিহিত আছে। সালামের জবাব দেওয়া যেমন ওয়াজিব , তেমনি আদব ও সম্মানের সঙ্গে সালাম দেওয়াও সুন্নত। আম্বিয়া, আউলিয়া ও মাতা-পিতার প্রতি আদব বা সম্মান প্রদর্শন করাও ওয়াজিব। ছোটদের সালাম ও তার জবাব দানের অর্থ হচ্ছে, দোয়া, প্রশংসা, স্নেহ ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। মাতা-পিতা, বুজুুর্গ ও মুরুব্বিদের জন্য এর অর্থ হচ্ছে- আদব, সম্মান ও তাযীমের প্রকাশ। বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী ও সমবয়সীদের জন্য এর অর্থ হল, সম্ভাষণ ও ভদ্রতা। প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য সালামের অর্থ হল, প্রেম-প্রীতি ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। আম্বিয়া ও আউলিয়াদের জন্য এর অর্থ হচ্ছে, দোয়া, আদব, সম্মান ও তাযীম। মহানবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দাঁড়িয়ে আমরা সালাম দিই, এই সালামের অথর্, হচ্ছে দোয়া ও মাগফিরাত পাওয়ার আশায়। নবী করীম (সাঃ) হচ্ছেন, রহমাতাল্লিল আলামীন, শাফিয়াল মুজনাবীন। তিনি রহমত বন্টনকারী এবং শাফায়াত দানকারী। তাঁর রহমতেই সৃষ্টি জগত সজিব ও সঞ্জীবিত। কারো পক্ষ থেকে নবী করীমের (সাঃ) জন্য দোয়া এবং দয়ার প্রয়োজন নেই। এখন প্রশ্ন হল, আল্লাহ ও রসুল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ক্ষেত্রে সালামের অর্থ কি হবে? এক্ষেত্রে জানতে হয় যে, মহান আল্লাহতা’লা ও রসুলের (সাঃ) মধ্যে সম্পর্ক কি? নবী করীম (সাঃ) হলেন, মহান আল্লাহতা’লার প্রিয় হাবিব ও পেয়ারে দোস্ত। অতএব, আল্লাহ ও রসুলের (সাঃ) ক্ষেত্রে সালামের অর্থ হবে, প্রেম-প্রীতি ও ভালোবাসা বিনিময় করা।

ফেরেশতা ও ঈমানদার মুসলমানদের ক্ষেত্রে সালামের অর্থ কি হবে? এ ক্ষেত্রে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ফেরেশতাদেরও কারো পক্ষ থেকে দোয়া এবং দয়ার প্রয়োজন হয় না। তাঁরা মহান আল্লাহ ছাড়া কারো মুখাপেক্ষি নন। নবী করীমকে (সাঃ) ফেরেশতাদের সালাম দেওয়ার অর্থ দাঁড়ায় এই যে, তাঁরা নবী করীমকে (সাঃ) সালাম দিয়ে সম্মানিত ও গৌরবান্বিত হন। যেমন, রাষ্ট্রপতির গার্ড অব রেজিমেন্টের সদস্যগণ। তাঁরা রাষ্ট্রপতি এবং রাষ্ট্রীয় অতিথিদেরকে সালাম বা স্যালুট দিয়ে সম্মানিত ও গৌরবান্বিত হন। সেনাবাহিনীর সব সদস্যদের পক্ষে রাষ্ট্রপতি বা রাষ্ট্রীয় অতিথিকে সালাম দেওয়ার সুযোগ হয় না, কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির গার্ড অব রেজিমেন্টের সদস্যরাই সালাম দিতে পারেন। তেমনি বায়তুল মামুর মসজিদে তোয়াফরত বিশেষ ফেরেশতারাই মহান আল্লাহতা’লার পেয়ারে হাবীবের (সাঃ) উদ্দেশ্যে সালাম পেশ করে সম্মানিত ও গৌরবান্বিত হচ্ছেন। অনুরূপ মহানবী সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ক্বিয়ামের (দাঁড়ান) সঙ্গে সালাম দেওয়ার সৌভাগ্য সবার হয় না। যাদের অন্তরে নবী করীমের (সাঃ) মহব্বত সুপ্রতিষ্ঠিত আছে, কেবল তারাই তাঁকে সালাম দিতে সক্ষম। নবী করীম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম দিয়ে তাঁরা নবী করীম (সাঃ)-এর পক্ষ থেকে মহব্বত, নাযাত এবং মাগফিরাত লাভ করছেন। নবী করীম (সাঃ)-এর মহব্বত লাভ করা মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব। উপরোক্ত আয়াত সম্পর্কে জানা যায়, মহানবী সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ শরীফে গমনের সময়, মহান আল্লাহতা’লা দেখেন যে, একদল ফেরেশতা বায়তুল মামুর মসজিদ তোয়াফ করছেন এবং সুব্হানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুব্হানাল্লাহিল আযীম পাঠ করছেন। আল্লাহতা’লা লক্ষ্য করলেন, ফেরেশতারা যে জিকির করছে, তাতে শুধু মহান আল্লাহতা’লার প্রশংসা প্রকাশ পাচ্ছে। এখানে আল্লাহর হাবীব সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশংসা নেই। তখন আল্লাহতা’লা ফেরেশতাদের প্রতি আদেশ করেন যে, আমি আল্লাহ আমার হাবীবের প্রতি দরূদ-সালাম পেশ করি, তোমরাও আমার হাবীব সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানে এবং মহব্বতে দরূদ-সালাম পেশ কর।

এখন প্রশ্ন হল যে, মহান আল্লাহতা’লা যখন নবী করীম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহব্বত ও সম্মানে ফেরেশতাদের দরূদ-সালাম পেশ করার আদেশ দিলেন এবং তিনি (আল্লাহ) নিজেও ফেরেশতাদের নিয়ে দরূদ ও সালামের মজলিশ করলেন, তখন কি আল্লাহতা’লার উপস্থিতিতে ফেরেশতারা দাঁড়িয়ে সালাতুস সালাম পাঠ করেছিলেন? নাকি বসে? এ ক্ষেত্রে বোঝা গেল যে, বসা অবস্থায় কোনকিছু তোয়াফ করা যায় না এবং আল্লাহতা’লার উপস্থিতিতে ফেরেশতারা বসে থাকতে পারেন না। অতএব, উপরোক্ত দরূদ ও সালামের মজলিশ নিঃসন্দেহে দাঁড়িয়ে অর্থাৎ, ক্বিয়ামের মাধ্যমেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। হে সম্মানীত পাঠকগণ, আপনারা চিন্তা করে দেখুন। কাজেই কোরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস সব রকম কিতাব পর্যালোচনা করে দেখা গেল যে, কিয়াম করা মোস্তাহাব সওয়াব। আরবিতে বলা হয় কিয়াম, বাংলাতে বলা হয় দাঁড়ান, ইংরেজিতে বলা হয় ঝঃধহফ যেমন দেখা যায়, কামেল পীর-মুর্শিদ, বুজুর্গ ব্যক্তি আসলে তাঁদের সম্মানে আমরা দাঁড়িয়ে সালাম দিই ও তাযীম করতে হয়। বাবা-মা সামনে উপস্থিত হলে তাঁদের সম্মানে দাঁড়ানো, কোন সম্মানী ব্যক্তি সামনে এলে দাঁড়িয়ে যাওয়া, ওস্তাদ-শিক্ষক-গুরু উপস্থিত হলে দাঁড়িয়ে সম্মান করা। এছাড়াও দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সম্মানে দাঁড়াতে হয়। অতএব, রসুল (সাঃ)-এর সম্মানে কিয়াম (দাঁড়নো) করা ভালো? না কি মন্দ? হে পাঠকগণ! আপনারাই চিন্তা করে দেখুন।

রসুলে করীম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাযের-নাযের (প্রসঙ্গে) : মৌ: আবুল কাসেম নানুতবীর হাল জযবা

ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা একটি বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মৌলভী আবুল কাসেম নানুতবী ছিলেন একজন বিশ্ববিখ্যাত আলেম। তিনি ভারতে বৃটিশ ঔপনিবেশ আমলে নিম্নেবর্ণিত আক্বীদা পোষণ করতেন।‘ইয়া রসুলুল্লাহ্’ বলা জায়েয নয়। ‘ইয়া রসুলুল্লাহ’ শব্দের অর্থ হল, রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মুখে হাযের-নাযের তথা উপস্থিত আছেন। যেহেতু রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মুখে হাযের-নাযের নেই, সেহেতু ‘ইয়া রসুলুল্লাহ’ বলা জায়েজ নয়।কিন্তু বিখ্যাত এ আলেম তাঁর মৃত্যুর ছয় মাস পূর্বে তার আক্বীদা পরিবর্তন করেছিলেন। তার এমন অবস্থা হয়েছিল যে, তিনি শুধু বলতেন, আস্সালাতু আস্সালামু আলাইকা ‘ইয়া রসূলুল্লাহ’ আস্সালাতু আস্সালামু আলাইকা ‘ইয়া হাবীবাল্লাহ্’ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।মৌলভী আবুল কাসেম নানুতবী সাহেবের অবস্থা এমন হয়েছিল যে, তিনি চলতে-ফিরতে, মাদ্রাসা-মসজিদে, হাটে-বাজারে, শয়নে-স্বপনে শুধুই বলতেন, আস্সালাতু আস্সালামু আলাইকা ‘ইয়া রসুলুল্লাহ, আস্সালাতু আস্সালামু আলাইকা ইয়া হাবীবআল্লাহ্’ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।এ অবস্থায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী এবং মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকগণ একান্তভাবে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, হুজুর, আপনি পাগলের মত প্রলাপ বকছেন কেন?উত্তরে মৌলভী সাহেব বলেছেন, আপনারা আমাকে পাগল মনে করছেন? আমি পাগলের মত করছি? আমি পাগল হয়েছি? না, আমি পাগল হইনি। যা সত্য, যা বাস্তব, আমি তাই করছি। আমি যেদিকেই তাকাই, শুধুই দেখছি, মহান রসুলে করীম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার সম্মুখে। রসুল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখে কেউ কি সালাম না দিয়ে পারে? পারে না। (সুত্র: তাহরীকে দেওবন্দ)

রসুলে করীম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় সব স্থানে হাযির-নাযির

ইন্না-আরসালনা-কা শা-হিদাওঁ ওয়া মুবশ্বিরাওঁ ওয়া নাজিরা (৪৮ নং সূরা, ফাতাহ, ৮ নং আয়াত)

অর্থ: (হে হাবীব সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), নিশ্চয়ই আমি আপনাকে হাযের-নাযের বা প্রত্যক্ষকারী সাক্ষী, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী নবী-রসুল হিসাবে প্রেরণ করেছি। শাহিদ অর্থ হাযের-নাযের এবং প্রত্যক্ষকারী সাক্ষী। সাক্ষীকে শাহিদ এজন্য বলা হয় যে, তিনি ঘটনাস্থলে হাযের-নাযের অর্থাৎ উপস্থিত ছিলেন। রসুলে করীম সল্লল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লামকে (মাহবুব) শাহিদ এজন্য বলা হয় যে, তিনি মু’মিনের হৃদয়ে হাযের-নাযের বা উপস্থিত থাকেন। হুজুর সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাহাবুবিয়াত মানব ও যুগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি আল্লাহতা’লার মাহাবুব এবং আল্লাহতা’লা সমগ্র জগতের মাহাবুব। শুষ্ক কাঠ, পাথর, পশু-পাখি ইত্যাদি হুজুরের বিচ্ছেদে কান্না করে। স্রষ্টার দরবারে তিনি সৃষ্টির সাক্ষী, সবার ফয়সালা হবে তাঁর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে। সৃষ্টির সামনে স্রষ্টার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। আল্লাহতা’লা হুজুর সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুসংবাদ ও ভীতি প্রদর্শনকে সাক্ষ্য সহকারে উল্লেখ করেছেন। হুজুর সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যক্ষ কারী সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। তিনি মিরাজ শরীফে জান্নাত, দোযখ, ফিরিশতাদের এবং আল্লাহতা’লাকে স্ব-চোখে দেখেছেন।

আল্লাহ রব্বুল আলামীন হুজুর সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ প্রেরণ করেছেন, তিনি আমাদের কৃতকর্মের প্রত্যক্ষ সাক্ষী। আমরা কোথায় কি করি, কি ইবাদত করি, কাকে ঠকাই, কার উপর অন্যায় করি, কার উপর জুলম করি, দৈনন্দিন কাজকর্ম সবকিছুরই তিনি প্রত্যক্ষকারী সাক্ষী। হুজুর সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষী ছাড়া আল্লাহতা’লার কাছে কোন ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়। দুনিয়াতে কোন বিচারকের সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় কোন সাক্ষী যদি বলে, লিয়াকত-সাগরের টাকা চুরি করেছে, তা সে শুনেছে, তবে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, কার কাছ থেকে শুনেছে? সেক্ষেত্রে যে শুনে সাক্ষ্য প্রদান করে, সে গৌণ হয়ে যায়, মুখ্য থাকেন যার কাছ থেকে শুনে সাক্ষ্য প্রদান করা হয়েছে। শোনা সাক্ষীর উপর বিচারক কোন ফয়সালা দিতে পারেন না। হুজুর সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সমস্ত ভাল-মন্দ কাজের প্রত্যক্ষ সাক্ষী। শেষ বিচারের দিনে হুজুর সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষীর উপর আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের বেহেশত-দোযখের ফয়সালা দিবেন।

সূরা: মোজাম্মেল, আয়াত-১৫ তে আল্লাহতা’লা আরোও বলেন, ইন্না র্আসাল্ না ইলাইকুম্ রসুলান্ শা-হিদান্ ‘আলাইকুম্’

অর্থ: নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কাছে একজন রসুল প্রেরণ করেছি, যিনি তোমাদের হৃদয়ে হাযের-নাযের, উপস্থিত, প্রত্যক্ষকারী সাক্ষীদাতা। উপরোক্ত আয়াতেকরীমায় আল্লাহতা’লা বলেছেন যে, নিশ্চয় রসুল (সাঃ) তোমাদের কাছে হাযের-নাযের বা প্রত্যক্ষকারী সাক্ষীদাতা। মূলত নবী করীম (সাঃ) আল্লাহতা’লার স্বত্তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যেভাবে আল্লাহতা’লা সব সময়, সব স্থানে হাযের-নাযের তেমনি নবী করীম (সাঃ)ও সব সময়, সব স্থানে হাযের-নাযের বা উপস্থিত থাকেন। তিনি আল্লাহতা’লার নূর থেকেই সৃষ্ট এবং তাঁর নূর থেকেই আল্লাহতা’লা সমস্ত জগৎ সৃষ্টি করেছেন।

কিয়ামে মিলাদ হল Part of Shafaya: অর্থাৎ, শাফায়াতের অংশ। কিয়ামে মিলাদের মূল ভিত্তি হল আল্লাহতা’লার জিকির, দরূদ শরীফ ও নবী করীমের (সাঃ) উদ্দেশ্যে তাযিমের সঙ্গে সালাম পেশ করা। সালাম দেওয়া সুন্নত, সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব এবং দরূদ পড়া ফরজ। মিলাদে নবীজিকে (সাঃ) সালাম দেওয়া হলে নবীজি (সাঃ) খুশির সঙ্গে আমাদেরকে সেই সালামের উত্তর দেন। নবীজিকে (সাঃ) সালামকারীদের মাগফেরাতের জন্য ফেরেশতারা আল্লাহতা’লার দরবারে দোয়া করেন। এমনিভাবেই মিলাদ আয়োজনকারী ও কিয়ামে মিলাদে অংশগ্রহণকারীরা শাফায়াতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

(Visited 4,569 times, 1 visits today)
Share