মোহাম্মদ মোতালেব
সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যেমন সব কিছুরই পরিবর্তন হয়। ঠিক তেমনি আমার প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের কদমে গোলামী করে পরিবর্তন হলো আমার মত এক নালায়েক মিসকিনের জীবন। বাবাজানের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করার আগে পীর-ফকির তেমন বিশ্বাস করতাম না। সবসময় মনে হতো নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত এগুলোই যথেষ্ট। কিন্তু বহু ভাগ্য গুণে যখন মুর্শিদ-ক্বেবলাকে পেলাম তখন বুঝলাম, আমার ধারণা পুরোপুরি ভুল ছিল।বাইয়াত গ্রহণ করে বাবাজানের সংস্পর্শে এসে দেখলাম, তিনি জাহের-বাতেন তথা শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত এবং মারেফতের ইলেম শিক্ষা দেন। মা-বাবার খেদমত, গুরুজনদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা, মানবসেবা, বড়দের প্রতি সম্মান, ছোটদের প্রতি স্নেহ-আদর, আলেম-ওলামাদের প্রতি সম্মান করার শিক্ষা দেন। বিপদেআপদে ধৈর্য্য ধারণ, নিজেকে নিয়ে অহংকার না করা, নিজেকে বড় না ভেবে ছোট ভাবা, অন্যের দোষ দেখার আগে নিজের দোষ তালাশ করা। ধ্যান-মোরাকাবা-মোশাহেদা, আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা, নামাজে হুজুরীসহ সব ধরনের ইলেম শিক্ষা দিয়ে আশেক-জাকের মুরিদ-সন্তানদেরকে আল্লাহ-রসুলের আদর্শে এক আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছেন। যে শিক্ষা এর আগে অন্য কোথাও পাইনি। যিনি সবসময় রসুলপাক (সাঃ)-এর সত্য তরিকার দাওয়াত মানুষের কানে কানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য, বর্তমানের এই ফেৎনা-ফাসাদের জামানায় মানুষকে অন্ধকার থেকে তুলে আলোর পথ দেখাতে দেশ-বিদেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ক্লান্তিহীন ছুটে যাচ্ছেন। খাজাবাবা কুতুববাগীর সৎ ও সুন্দর আদর্শ, ন্যায়-নীতি এবং আশেক-জাকের-মুরিদদেরকে সত্য ও ন্যায়-নীতির পরামর্শ দানের কারণে, তিনি হয়ে উঠেছেন এক আদর্শ মহাপুরুষ।মুর্শিদের সান্নিধ্যে এসে আমার মধ্যে যে পরিবর্তনগুলো এসেছে, তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে সৎভাবে বেচেঁ থাকা, মানুষের সঙ্গে ভদ্র, সুন্দর-কোমল আচরণ করা, মিথ্যা না বলা, পরনিন্দা না করা, নিজেকে আত্ম সংযমের মধ্যে রাখা ইত্যাদি। তাই আমার অনুভূতি থেকে বলতে পারি, একজন কামেল মুর্শিদের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে মুরিদের সমস্ত আশা-আকাক্সক্ষা, চাওয়া-পাওয়া, যার প্রকৃত উদাহরণ আমি। কারণ আমার কোন কিছুর প্রয়োজন হলে বাবাজানের কাছে নালিশ করেছি, কিছু দিনের মধ্যেই তা পূরণ হয়েছে! একমাত্র আল্লাহ-তায়ালাই পারেন অসম্ভবকে সম্ভব করে দিতে এবং তা করেন তাঁর অলি-বন্ধুদের মাধ্যমে। বাবাজান সবসময় বলেন, আপন পীরের খাছলতে (স্বভাবে) খাছলত ধরুন, তবেই ত্রাণ ও শান্তি। কখনও মিথ্যা বলবেন না। যত বড় কঠিন বিপদ আসুক না কেন সবসময় সত্যের উপর অবিচল থাকবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সাহায্য করবেন। মুর্শিদের পবিত্র মুখে যখন নীতি ও আদর্শের কথা বলেন, তখন মনে হয় সবকিছু ভুলে বাবাজানকে দেখি, আর প্রাণ ভরে তাঁর কথা শুনি। সেই দরদী কণ্ঠে কী যে এক আকর্ষণ রয়েছে! যত দুঃখ-কষ্ট, জ্বালা-যন্ত্রণা থাকুক না কেন, বাবাজানকে দেখা মাত্র সব ভুলে যাই। প্রায় ২১ বছর বাবাজানের সান্নিধ্যে তাঁর খেদমতে আছি। কিন্তু যখনই বাবাজানকে দেখি তখনই মনে হয়, এই বুঝি প্রথম দেখলাম। আল্লাহপাক বাবাজানের চেহারায় এমনই এক নূরের জ্যোতি দান করেছেন, যা কারও সঙ্গে তুলনা করার মত নয়। তাই আমার দৃষ্টিতে বর্তমান জামানার আদর্শবান মহাপুরুষ হচ্ছেন, শাহসুফি খাজাবাবা কুতুববাগী (মা.জি.আ.)। যাঁর আদর্শে অনুপ্রাণীত হয়ে পবিত্র মধুর বাণী শুনে এবং তাঁর নূরাণীময় রূপের কিরণে মুগ্ধ লক্ষ লক্ষ মানুষ বাবাজানের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করে নিজেদের নফসের এসলাহ অর্থাৎ, আত্ম-পরিশুদ্ধতা করে খুঁজে পাচ্ছেন আল্লাহ-রসুলের সঠিক পথের সন্ধান। আমি জানি মনগড়া কোনো কিছু বলে অথবা লিখে কখনোই সত্যতা প্রমাণ করা যায় না। আল্লাহ এবং রসুল (সাঃ)কে দেখি নি। কিন্তু যখন বাবাজানকে দেখি তখন আল্লাহ এবং তাঁর রসুলের কথা খুব বেশি করে মনে পড়ে তখন ভাবি, যে আল্লাহ এত সুন্দর রূপে আমার মুর্শিদ ক্বেবলাজানকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমাদের মত পথ হারা, বিপথগামী মানুষদের আলোর পথ দেখাতে, হেদায়েতের জন্য পাঠিয়েছেন, সেই আল্লাহ না জানি আরও কত সুন্দর! সোবহানআল্লাহ।তাই তো খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে যত দেখি তৃষ্ণার্ত চাতকের মত চেয়ে থাকি তবু তৃষ্ণা মিটে না। মনে হয় এখনও বুঝি আমার ভালো করে দেখা হয়নি আরও একটু দেখি। আসলে এই দেখার শেষ নেই। কেমন করে শেষ হবে এই দেখা? তিনি যে আমার ‘মনের মানুষ’ জন্ম-জন্মান্তরের সম্পর্ক তাঁর সঙ্গে। শুনেছি এবং বই-কিতাবে পড়েছি যে, আল্লাহপাক হযরত ইউসুফ (আ.)কে কান্তিময় রূপ ও সুঠাম শারীরিক গঠন দান করেছিলেন। আমার মুর্শিদ শাহসুফি আলহাজ্ব মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ্ নকশবন্দি-মোজাদ্দেদি (মা.জি.আ.) ক্বেবলাজানকেও আল্লাহপাক যে অপরূপ নূরাণী সৌন্দর্য্য দিয়েছেন তাতে বুঝা যায় যে, ইউসুফ (আ.)-এর রূপ কেমন হতে পারে। সে সময় হযরত ইউসুফ (আ.)-এর সৌন্দর্য্যে পাগল হয়েছিলেন মিসরের সর্ব স্তরের মানুষ। আসলে তাঁরা শুধু হযরত ইউসুফ (আ.)-এর রূপের জন্য নয় বরং ইউসুফ (আ.)-এর রূপের পাশাপাশি আল্লাহপাক নবুওয়াতের যে গুণ তাঁকে দান করেছিলেন, সেই গুণের জন্যও পাগল হয়েছিলেন। কিন্তু ইউসুফ (আ.)-এর প্রেমে মানুষ যেমন মশগুল ছিল, তেমনি শত্রুর সংখ্যাও কম ছিল না। শত্রুতা আর হিংসা করেই ইউসুফ (আ.)-এর আপন ভাইয়েরা তাঁকে কুপের মধ্যে ফেলে হত্যা করতে চেয়েছিল। কথায় আছে রাখে আল্লাহ মারে কে? ঘটনাক্রমে আল্লাহপাক তাঁর কুদরতের মাধ্যমে ইউসুফ (আ.)কে বাঁচিয়ে রেখে সম্মানের সঙ্গে মিসরের অধিপতি করে মসনদে বসালেন। এখানে উল্লেখ্য যে, মিসরের বাদশা হিসেবে ইউসুফ (আ.)কে মসনদ দান করার পিছনে বিবি জুলেখার ভূমিকা ছিল উছিলা স্বরূপ। কারণ, নির্দোষ নবী ইউসুফ (আ.)কে এই জুলেখার চক্রান্তেই জেলে যেতে হয়েছিল। তবে এটা ছিল আল্লাহপাকেরই ইশারায় এক হেফাজতখানা। আল্লাহপাক যাঁকে সম্মান দিয়ে তাঁর মনোনীত উচ্চাসনে বসাবেন, তাঁকে যদি মুষ্ঠিমেয় মানুষ জীবনভরও দমিয়ে রাখার চেষ্ঠা করে তা যেমন বিফল হবে এবং তারা নিকৃষ্টদের দলে পর্যবসিত হবে তাতে সন্দেহের কোনোই অবকাশ নেই।কথায় আছে উঁচু গাছে বাতাস লাগে বেশি। আর যে গাছে ফল থাকে সেই গাছেই মানুষ ঢিল ছুড়ে। নিষ্ফলা গাছে বানরও চড়ে না। আগেই বলেছি বাবাজানের কদমে আছি প্রায় ২১ বছর কিন্তু এর মধ্যে কোনোদিন বা কখনো কারও সমালোচনা তাঁর পবিত্র মুখে শুনিনি। কেননা বাবাজানের শিক্ষা অন্যের দোষ দেখার আগে নিজের দোষ তালাশ করুন।’ কাজেই আল্লাহপাক মোজাদ্দেদিয়া তরিকার যে আলোকবর্তিকা বাবাজানের হাতে দিয়েছেন, সেই আলোক রশ্মি যেন সারাদেশের ঘরে ঘরে প্রতিটি মানুষের অন্তরে জ্বালাতে পারেন। কামেল পীর-মুর্শিদ সম্পর্কে বর্তমান সমাজে যে অজ্ঞতা ও কুসংষ্কার রয়েছে তা দূর করে, মানুষের ময়লাযুক্ত অন্ধকার ক্বলবে আল্লাহ নামের জিকির জারির মাধ্যমে মৃত্যু বরণ করতে পারি। সেই জন্য আল্লাহপাকের দরবারে সাহায্য চাই। আমার বয়সী অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থাকে রাত-দিন অথচ আল্লাহপাক আমাকে খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের উছিলায় সে-সব থেকে মুক্ত রেখেছেন। তাই বাবাজানের রাঙা চরণে গোলামের আর্তনাদ, যেখানে যখন যেভাবেই থাকো তুমি বাবাআমাকে রেখো তোমার চরণের সেবায়।তুমি আছো তাই আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে মন-প্রাণ সব উজার করে দিয়েছি তোমায়।