নছীহত বাণী

১) যদি খাঁটি মুসলমান হতে চান! শরীয়তের ছোট বড় যাবতীয় হুকুম আহ্‌কাম মানিয়া চলুন । তাহলে মারেফতের এলেম সহজ হইয়া যাইবে। হামেশা (সর্বদা) ফয়েজ ও তাজাল্লী আপনার উপর ওয়ারেদ হইতে থাকিবে।
২) পীরের খাছলতে খাছলত ধরুন, তবেই ত্রাণ ও শান্তি-।
৩) ছবর-ই (ধৈর্য্য) ধর্ম।
৪) অন্যের দোষ দেখার পূর্বে নিজের দোষ তালাশ করুন।
৫) মানব সেবাই হলো পরম ধর্ম।
৬) প্রত্যেক নিঃশ্বাসে খেয়াল ক্বালবের ভিতর ডুবাইয়া রাখুন। নচেৎ হালাক হওয়ার ভয় আছে। জীবনভর এবাদত করিয়া শেষ নিঃশ্বাসে আল্লাহ্কে ভুলিয়া মরিলে, যাবতীয় এবাদত বরবাদ হইয়া যাইবে। জীবনের মেহনত ও ইবাদতের কোনই ফল হইবে না। তাই আল্লাহর সকল প্রিয় বান্দাগণ শেষ নিঃশ্বাসে আল্লাহর নামের সাথে বাহির হইবার জন্য জীবনভর আল্লাহর হুজুরে কাঁদিতেন। আপনারা ঈমানের সহিত মরিবার জন্য কয়দিন কাঁদিয়াছেন ? মাতালের মতো বেহুঁশ হইবেন না। হুঁশ করুন অমূল্য জীবন আর ফিরিয়া পাইবেন না।
৭) আত্ম শুদ্ধ করা প্রত্যেক নর-নারীর জন্য আদর্শ ফরজ। আত্মাশুদ্ধ না হইলে নিয়ত শুদ্ধ হইবে না। আর নিয়ত শুদ্ধ না হইলে কোন এবাদত-ই শুদ্ধ হইবে না । আত্মা জিন্দা ব্যতীত অধিকাংশ মানুষই মৃত্যুর সময় ঈমান নিয়া কবরে যাইতে পারিবে না।
৮) আমার এই তরিকার মূল শিক্ষা বা নীতি- চুরি করিবে না, ডাকাতি করিবে না, মিথ্যা বলিবে না, না-হক খুন করিবে না, বে-আইনী কাজ করিবে না।
৯) জানানো যাইতেছে যে- এই দরবারে কোন প্রকার শোরগোল-বেয়াদবী করিবে না। কারণ ইহা অলী-আল্লাহর মজলিশ। যদি কেহ বেয়াদবী করে তবে একদিন আগে-পিছে তকদীরে অবশ্যই পোকা ধরিবে।
১০) এই পবিত্র মজলিশ-এ কোরআন শরীফ তেলাওয়াত, জিকির-আজকার ও ওয়াজ নসিহত করা হয়। জামে আওলিয়া ও তামাম পৃথিবীর মোমেন-মোমেনাতের আরওয়াহ্ পাকের উপর ছওয়াব রেসানী করা হয়। তাই আল্লাহ্ ও হযরত রাসূল পাক (সঃ) এর উপর বিশ্বাস স্থাপনকারী জাকেরদের আদব ও মহব্বতের সহিত জবান বন্ধ করিয়া রাখিবার স্থান। হে জাকের ও আশেকগণ! আপনারা জবান বন্ধ করিয়া আপন কাজ করিতে থাকুন।
১১) হে মুসলমানগণ- অমূল্য জীবন স্বপ্নের মত চলিয়া যাইতেছে । হুঁশ করুন আল্লাহর নাম অন্তরের ভিতরে দাগ করিয়া মরেন। এই দাগ মোর্শেদে মোকাম্মেল অলী-আল্লাহর এত্তেহাদী তাওয়াজ্জোহ্ বলেই হয়। এই তাছীর খোদা তায়ালার খাছ দয়া।
১২) আল্লাহকে চিনিবার পথে অনেক দুঃখ-কষ্ট লোক-নিন্দা সহ্য করিতে হয়।
১৩) অনন্তময় বেহেশ্‌ত, কেবল কয়েক দিনের বাহ্যিক অনুষ্ঠান ও ক্রিয়া কর্মদ্বারা লাভ করা যায় না। উহা আন্তরিকতা ও একাগ্র সাধনা দ্বারাই লাভ করিতে হয়।
১৪) এস্তেখারা (গভীর ধ্যান) আয়নার মত কাজ করে থাকে। তাহার মধ্যে আপনার সৎ ও অন্যায় কার্যাবলী প্রতিফলিত এবং সুস্পষ্ট হইয়া উঠিবে। যখন সৎ চিন্তা মনে উদিত হইবে, তখন মনে করিবেন আপনি সৎ পথে আছেন। আর যখন অসৎ চিন্তা মনে জাগিবে, তখনই মনে করবেন আপনি অসৎ পথের পথিক হইয়াছেন।
১৫) নীরব-চিন্তা যাহার হৃদয় খোদার গোপন ভেদ না জানে, সে দুনিয়াদারি ও অলসতায় ডুবে আছে এবং যাহার দৃষ্টিতে খোদার গোপন ভেদের আভাস নাই, তার দৃষ্টি ধূলিতে আচ্ছন্ন। অর্থাৎ সত্য তুষ্ঠ লাভ করে নাই।
১৬) যে পর্যন্ত হৃদয় কথা না বলে, সে পর্যন্ত জ্ঞানী লোক চুপ করে থাকেন। যাহারা জ্ঞানী ও আল্লাহ কে ভয় করেন, আল্লাহর এলহাম তাদের জিহ্বায় উচ্চারিত হয়।
১৭) ধীর স্থির ও অচঞ্চল ব্যক্তিই প্রকৃত মোমেন। যা মনে হয় তাহাই তিনি মনে করেন না এবং মুখে যা আসে তাহাই তিনি বলেন না।
১৮) এক মুহূর্তকাল দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি সহস্র বছরের রোজা-নামাজের চাইতে উত্তম।
১৯) আল্লাহকে যিনি প্রকৃতভাবে চিনিয়াছেন, তিনিই তাহার সাথে ভালবাসা স্থাপন করিয়াছেন। যে ব্যক্তি শুধুই দুনিয়াকে চিনিয়াছেন, সে আল্লাহ তালার সঙ্গে শক্রতা করিয়াছেন।
২০) পাচঁ ব্যক্তির সাথে সংস্রব রাখিও না (ক) মিথ্যুক- তাকে সংগে রাখিলে ঠকবে, সে তোমার হিতকারী হতে পারে। সে নিজ মূর্খ্যতার দরুন তোমার অমঙ্গল ঘটাবে। (খ) কৃপণ- সে সর্বদা নিজের লাভের জন্য তোমার ক্ষতি করিবে। (গ) নির্দয়- অভাবের সময় সে তোমাকে ধ্বংস করিবে। (ঘ) কাপুরুষ- তোমার প্রয়োজনের সময়, সে তোমাকে ত্যাগ করিবে। (ঙ) ফাছেক- তার লোভ লালসা অত্যন্ত বেশি। নিজ স্বার্থের খাতিরে সে তোমাকে প্রাণে হত্যাও করিতে পারে।
২১) যে ব্যক্তির অন্তরে যে পরিমাণ অহংকার প্রবেশ করিবে, সে পরিমান বুদ্ধি তার লোপ পাইবে।
২২) সত্যের ভারবাহী ছাড়া সত্যের বোঝা কেহ বহন করিতে পারে না। কারণ তারা কঠোর এবাদত ও কষ্টসহ্য করতে অভ্যস্ত নয়।
২৩) মানুষ যদি নিজেকে দাস বলে গ্রহন করেন, তাকে খোদা তালা তিনটি স্বভাব প্রদান করেন। (ক) নদীর মত উদারতা (খ) সূর্যের মত দয়া (গ) মাটির মত আজিজি (বিনয়ী)।
২৪) আরেফ ব্যাক্তি খোদার দীদার ব্যতিত দুনিয়ার কোন বস্তুতে ই সন্তুষ্ট হইতে পারে না।
২৫) যার নামাজে আজিজি ও এশ্ক নাই তার নামাজ প্রকৃত নামাজ নহে।

২৬) রাসূলুল্লাহ (দঃ) এর মহব্বতই প্রকৃত ঈমান। রাসূলুল্লাহ (দঃ) এর মহব্বত যার অন্তরে যতটুকু তার ঈমানও ততটুকু।

২৭) ক্বালব আল্লাহ ভেদের মহা সমূদ্র এবং এই ক্বালবের মধ্যেই আল্লাহ্ তালার নিদর্শনসমূহ লাভ করা যায়।

২৮) কামেল মোর্শেদের পথই প্রকৃত সত্যের পথ।

২৯) বর্তমান যামানা অত্যন্ত- মুসিবতের যামানা। অদূর ভবিষ্যতে এমন এক সময় আসবে, যখন মানুষ জলে-স্থলে সর্ব জায়গায় বিপদ ছাড়া আর কিছুই দেখবে না। যদি তোমরা উক্ত গজব হতে বাঁচতে চাও, তাহলে কামেল পীরের রশিকে শক্ত করে ধরে রাখ।

৩০) কোরআন পাকে মহান আল্লাহ্ বলেন- আল্লাহ্কে ভয় কর এবং আল্লাহ্কে পাইবার জন্য ওসিলা অন্বেষণ কর। সে ওসিলাই যামানার কামেল অলী সকল। যেহেতু তাদের পাক আত্মার যোগাযোগে পরম আত্মার সান্নিধ্য লাভ হয়।

৩১) যখন তোমর ময়লা দিলকে কামেল পীরের পাক দিলের সাথে মিশাইতে পারিবে, সেই মুহুর্তে তোমার অন্ধকার দিল আলোকিত হইয়া যাইবে এবং জিকির দ্বারা ক্বাল্ব জারি হইয়া যাইবে।

৩২) আল্লাহকে নীরবে ধ্যান কর। কেননা কিছুক্ষণ ধ্যান করা ৬০ বছরের নফল ইবাদত বন্দেগির চাইতে উত্তম।

৩৩) আমার ছয়টি মূল বিষয় অবশ্যই পালন করিবেন। (১) আদব (২) বুদ্ধি (৩) মহব্বত (৪) সাহস (৫) বিশ্বাস ও (৬) ভক্তি

৩৪) ইসলাম শুধু শরিয়তে নয়,তরিকতে নয়, হাকিকতে নয়, মারেফতে নয়, শরিয়ত তরিকত হাকিকত ও মারেফতের সমন্বয়ে পরিপূর্ণ ইসলাম।

৩৫) তাহারাই হতভাগা, যাহারা কামেল মুর্শিদের সংস্রব থেকে দূরে থাকে।

৩৬) সাবধান! নিশ্চই অলী আল্লাহ্গন কখনো চিন্তিত নহে।

৩৭) যে নিজেকে চিনে, সে মূলত আল্লাহকে চিনে।

৩৮) ঐ ব্যক্তি আল্লাহ্ থেকে দূরে আছে, যে অলী আল্লাহ্গণ হইতে দূরে থাকে।

৩৯) ওয়াকুনু মা‘আছ ছাদিকিন “অর্থাৎ” আল্লাহ্ বলেন তোমরা সত্য বাদীদের সঙ্গী হও। (সুরা- তওবা, আয়াত-১১৯)

৪০) সূফী ঐ ব্যক্তি যিনি অবস্থা অনুসারে কথা বলেন। এমন কথা তিনি বলেন না, যাহা তাঁহার মধ্যে নাই। যখন তিনি চুপ করিয়া থাকেন, তখন তাহার কাজ সমূহই তাহার অবস্থা প্রকাশ করে। মখলুখ হইতে বিচ্ছেদই তাহার আসল প্রকাশ।

৪১) পরহেযগারী যাহার আন্তরিক আকাঙ্খা, তিনিই উত্তম পুরুষ। অল্প আহারে যেমন স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং অল্প গুনাহতেই আত্মার অবনতি হইয়া থাকে।

৪২) যেই উদরে খাদ্যে ভরা থাকে, সেই ভান্ডে মারেফতের জ্ঞান জমা হয় না।

৪৩) যে যতবেশি তত্ত্বজ্ঞানী হয়, সে তত আল্লাহর ভয়ে ভীত এবং তওবাকারী হয়।

৪৪) প্রত্যেক ইন্দ্রিয়ের জন্য তওবা আছে। হারাম চিন্তা ত্যাগের সংকল্প করা মনের তওবা। হারাম বস্তু দর্শন হতে বিরত থাকা চোখের তওবা। অবৈধ কথা শ্রবণে ক্ষ্যান্ত থাকা কর্নের তওবা। হারাম বস্তু গ্রহনে বিরত হওয়া হস্তের তওবা। হারাম খাদ্য হইতে বিরত থাকা উদরের তওবা। জেনা, ব্যাভিচার কাজ হইতে বিরত থাকা গুপ্ত অঙ্গের তওবা।

৪৫) দুনিয়াদারী লোকের ছোহবত থেকে দূরে থাকা ও অলী আল্লাহ্গনের সাথে বন্ধুত্ব রাখা আর খোদার সাথে প্রেম করা একই কথা। কারণ অলী আল্লাহ্গণ খোদার সাথে প্রেম করেন।

৪৬) কিছুসময় মোরাকাবা করিবে। মোরাকাবা আরবী শব্দ, বাংলায় বলাহয় ধ্যান ইংরেজীতে বলা হয় মেডিটেশন। মোরাকাবার মাধ্যমেই আল্লাহ্কে পাওয়া সম্ভব। হাদিস শরিফে আছে “তাফাখ্খারু সা’আতিন খাইরুম মিন ইবাদাতি সিত্তিনা সানা” কিছু সময় মোরাকাবা করা ৬০ বছরের নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম।

৪৭) প্রথমে চক্ষু বন্ধ করে, মাথা বাম দিকে ঝুকিয়ে, বাম স্তনের দুই আঙুল নিচে লতিফায় ক্বালবের দিকে মোতাওয়াজ্জুহ্ হইবে, কিছুক্ষণের জন্য পার্থিব জগতের কথা ভুলিয়া গিয়া একমাত্র আল্লাহ্কে পাওয়ার উদ্দেশ্যে ক্বালবে জরব দিয়ে আল্লাহ্ আল্লাহ্ জিকির খেয়াল করিবে।

৪৮) হুশ দরদম জিকিরঃ কিতাবে আছে ২৪ ঘন্টার ভিতরে ২১৬০০ বার মতান্তরে ২৪৬০০ বার মানুষের শ্বাস নিঃশ্বাস আসা যাওয়া করিয়া থাকে। দুই চক্ষু বন্ধ করিয়া খেয়াল ক্বালবের দিক, ক্বালব আল্লাহর দিক। আল্লাহ্কে হাজের নাজের ওয়াহেদ জানিয়া নাভির নিচ থেকে শ্বাস টানিতে আল্লাহ এবং ক্বলবের দিকে শ্বাস ছাড়িতে হু, আল্লাহু, আল্লাহু জিকির করিবে।

৪৯) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর অজিফা অবশ্যই আদায় করিবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ অবশ্যই জামাতের সাথে আদায় করিবার চেষ্টা করিবে।

৫০) শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফত ব্যতিরেকে কেহ ওয়ারেছাতুল আম্বিয়া হতে পারিবে না।

৫১) ছেলে বড় হলে বিয়ে করাবে, মেয়ে বড় হলে বিয়ে দিবে। মা বাবার খেদমত মন প্রাণ দিয়ে করিবে। ঝগড়া ফাছাদ থেকে দূরে থাকিবে, বড়দের শ্রদ্ধা করিবে। ছোটদের স্নেহ করিবে। অনাহারিকে অন্ন দিবে, বস্ত্রহীন কে বস্ত্র দিবে। মানুষের সাথে দেখা হলে সালাম দিবে।

৫২) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়িবে, রমজান মাসের চাঁদ দেখে মাহে রমজানের রোজা রাখিবে, শাওয়ালের চাঁদ দেখে রোজা শেষ করিবে, সামর্থ হলে হজ্ব করিবে, যাকাতের নেছাব হইলে যাকাত দিবে।

৫৩) শেষ রাত্রে আরামের বিছানা ত্যাগ কর এবং কেঁদে কেঁদে আল্লাহর তিন নাম ধরে ডাকো- ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহ্মানু, ইয়া রাহিম, ইয়া রাহ্মাতাল্লিল আলামীন। শেষ রাত্রী বিশেষ রহমত ও গুনাহ মাপের সময়। গুনাহগার মানুষ যখন রাত্রির শেষ ভাগে উঠিয়া, দুই চোখের পানি ছাড়িয়া মহান আল্লাহ্কে ডাকে, তখন আল্লাহ্তালার রহমতের দরিয়ায় যোশ মারিয়া উঠে। আল্লাহ্ তাহার প্রতি দয়াবান হন। আমার একটা ছালেকও এই নিয়ামত ও রহমতের সময় (শেষ রাত্রের মহা মুল্যবান সময়) ঘুমিয়ে থাকিবেন না। যেহেতু শেষ রাত্রি হলো রহমতের সময়।

(Visited 1,008 times, 1 visits today)
Share