সারমিন সাদী রাশিদা
নূরে ঝলমল আঁধারে আলো, সঠিক পথের দিশারী মহান আল্লাহর অলি খাজাবাবা কুতুববাগী নকশ্বন্দি মোজাদ্দেদী ক্বেবলাজান হুজুরের এক নালায়েক মুরিদ সন্তান আমি। যুগশ্রেষ্ঠ এই মহাসাধক অলি-আল্লাহর গুণের কথা লিখে শেষ করতে পারবো না। তবুও ক্বেবলাজান হুজুরের শিক্ষা ও আমার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে লিখছি। ছোটবেলায় নানীর সঙ্গেমুর্শিদ ক্বেবলাজানের পবিত্র জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানা কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শুভকরদী গ্রামে গিয়েছিলাম। যেখানে খাজাবাবর প্রথম খানকা শরীফ। আমি সেদিন আর্শ্চয্য হয়েছিলাম, কারণ মানুষ এত সুন্দর সুরতের হয় কখনো? তখন নানী বলেছিলেন, তিনি আল্লাহর অলি। ঠিক সেই মুহূর্ত থেকে মুর্শিদ ক্বেবলাজান হুজুর সম্বন্ধে জানার প্রবল ইচ্ছা অনুভব করতাম।
বাবাজানের দরবারে আসা-যাওয়া করছি দীর্ঘদিন থেকে এবং বাবাজানের দোয়াতেই আছি। শুধু দেখে আসছি, মুর্শিদ ক্বেবলা টাকা-পয়সা চান না। মুর্শিদ ক্বেবলা দেখেন না ধনী গরীব। সবাইকে সমানভাবে দেখেন। বাবাজান সব সময় পর্দায় থাকেন। জাকের মেয়েদের সঙ্গে কম সাক্ষাৎ করেন। বাবাজান প্রথমেই বলেন, মায়েরা একটু দূরে থাকেন। বাবাজান খুব আস্তে আস্তে কম কথা বলেন। কখনোও তাঁকে কোন বিষয়ে রাগ করতে দেখিনি। তবুও ভয় পাই সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে। নতুন কোন বোন আসলে বাবাজান জিজ্ঞেস করেন, মা, স্বামীর হুকুম নিয়ে আসছেন তো? একা আসবেন না, মা-বাবা অথবা স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে আসবেন।
বাবাজান আমাদের যে বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে থাকেন, তার কিছু আলোচনা করছি। তরিকতের মূল ছবক-আদব, বুদ্ধি, মহব্বত, সাহস, বিশ্বাস ও ভক্তি। এই ছয়টি শিক্ষা সম্মদ্ধে খুব সহজ করে বুঝিয়ে দেন। আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা ও নামাজে হুজুরি এগুলোর ব্যাখ্যাও বুঝান। আমাদেরকে পর্দায় থাকতে বলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করতে বলেন। নামাজের পর অজিফা আমল করতে বলেন। হারাম-হালাল বেছে চলতে বলেন। পিতা-মাতা, শ্বশুর-শাশুড়ী ও বড়দের সম্মান, ছোটদের সেবাযতœ-স্নেহ করতে বলেন। মিথ্যা বলা, চুরি-ডাকাতি করা এবং অন্যের হক নষ্ট করতে নিষেধ করেন। গীবত-পরনিন্দা ও হিংসা করতে নিষেধ করেন। ধ্যান-মোরাকাবা করতে বলেন। কোন পীর কিংবা মানুষকে সেজদা করতে নিষেধ করেন। আরোও বলেন যে, ভ-ামীর মধ্যে কোন এবাদত নেই। কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ ও জাকাত এই পাঁচ টা স্তম্ভের উপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিত। বাবাজান এই পাঁচটি বিষয়কে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে আমাদের মেনে চলতে বলেন। শরীয়তের ছোট-বড় সব হুকুম মেনে চলতে বলেন। শরিয়তের মধ্যেই তরিকত, হাকিকত ও মারেফত লুকিয়ে আছে। মহান আল্লাহ এক এবং তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি লা শারিকালা। এ কথা বাবাজান বলেন। আল্লাহকে যেন ভয় পাই ও আল্লাহর নাফরমানী কাজ না করি এ শিক্ষাও দেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ যেন না করি, এতে সংসারে শান্তি পাবেন এবং এবাদত সঠিকভাবে করতে পারবেন। বাবাজানের আরো অনেক সুন্দর সুন্দর বাণী ও নছিহত আছে, যা আমি বিশ্বাসের সঙ্গে মেনে চলার চেষ্টা করে যাচ্ছি, বাবার দোয়ায় আল্লাহ কবুল করবেন।
আমরা আমল করি, সাধ্যমত মান্নত করি, আপদে বিপদে নালিশ জানাই আল্লাহ রহমতে বাবার উছিলায় মছিবত দূর হয়। আমি একদিন নামাজ পড়েছি কিন্তু অজিফা আমল করা হয়নি, তার পর দিন দরবার শরীফে গেলে বাবাজান বলেছিলেন, মা খতম শরীফ পড়েননি কেন? আরেক দিন নামাজ পড়তে পারিনি, বাবাজান বলেছিলেন মা নামাজ পড়বেন। নামাজ ছাড়বেন না। আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। আমি বনের বাঘকে ভয় করি না কিন্তু মুর্শিদ ক্বেবলাজানকে ভিষণ ভয় পাই। আমি বন্দুকের নলকে ভয় পাই না। মুর্শিদকে ভয় পাই। কারণ, কোন ভুলের কারণে যদি মুর্শিদের সান্নিধ্য থেকে দূরে চলে যাই, তাহলে তো আর কিছুই পেলাম না। তাই ভয় হয়। সঠিক
পথে চলি আর মনে মনে বলি ভুল করেও যেন ভুল পথে না চলি। খাজাবাবা কুতুববাগী যেন আমাকে দয়া করেন আর ভুল হলে ক্ষমা করেন। প্রতি বৃহস্পতিবার কুতুববাগ দরবার শরীফে মুর্শিদ কেবলার ওয়াজ নসিহত করেন, দোয়া করেন। তওবা নছুহা পাঠ করান। পরের দিন শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়ানো হয়। আমরা জাকের বোনেরা দরবারের ৬ষ্ঠ তলায় বসি এবং নামাজ আদায় করি। ৫ বছরের উপরে কোন ছেলে সেখানে যেতে পারে না, বাবাজানের নিষেধ। ৬ষ্ঠ তলায় উঠার জন্য বোনদের সিঁড়ি আলাদা।
ভাইদের সঙ্গে বোনদের দেখা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমরা সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে একই জামাতে নামাজ আদায় করি। দরবার শরীফে মাদ্রাসা ও এতিমখানা আছে সেখানে শুধু ছেলেরা পড়া লেখা করতে পারে। আমরা যতক্ষণ ইবাদতের জন্য অবস্থান করি কুতুববাগ দরবার শরীফের লঙ্গরখানা থেকেই তবারক খেয়ে থাকি। এর জন্য টাকা-পয়সা লাগে না। দরবার শরীফে বহু আলেম ওলামা রয়েছেন।
৬ষ্ঠ তলায় জাকের বোনেরা পীর আম্মাজানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তিনি আমাদের নালিশ ধৈর্য্য ধরে শুনেন এবং আমল শিখিয়ে দেন ও সাধ্যমত মান্নত করতে বলেন। পীর আম্মাজানের কথা শুনলে আত্মায় শান্তি পাই। যে কোন সমস্যায় পড়লে পীর আম্মাকে বলি, তিনি বাবাজানকে বলেন। এরপর আমাদের সমস্যা বা মছিবত ইনশাআল্লাহ দূর হয়ে যায়। আত্মাকে শুদ্ধ করার জন্য একজন কামেল মুর্শিদের উছিলা ধরতে হয়। উছিলা ছাড়া কিছুই হয়না। মুর্শিদের দরবারে আসা-যাওয়া করলে আল্লাহর ভয় অন্তরে আসে। নিজেকে চেনা যায়। সূরা মুমতাহেনাতে মহিলাদের বাইয়াত গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। পুরুষদের জন্য যেমন কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ ও জাকাত ফরজ। মহিলাদের জন্যও একই নিয়ম।