ইসলাম ধর্মের অন্তর্নিহিত বিষয় সূফীবাদ বিশ্বে সুপরিচিত

সেহাঙ্গল বিপ্লব আল মোজাদ্দেদি

সূফীবাদের দীক্ষালয়ে ভর্তি হয়ে আমিত্বের পরিবর্তন ও আত্মশুদ্ধির সাধনায় অগনিত পবিত্র আত্মার সহযাত্রী হতে পেরে, নিজেকে অতি ভাগ্যবান মনে করি। কেননা নিজেকে চেনা বা জানার জন্য উপযুক্ত মাধ্যম লাগে, এ কথা কুতুববাগ দরবার শরীফে কেবলাজানের কাছে এসেই প্রথম জেনেছি। আমরা জানি প্রধান চার তরিকার শেষ তরিকা ‘মোজাদ্দেদিয়া’ তরিকা। এই তরিকার ইমাম হযরত মুজাদ্দিদ আলফেসানি (রহঃ) ছিলেন সংস্কারক। ওই সময় ইসলাম তথা ধর্ম নিয়ে যারা গোরামী করতেন তাদের শিখিয়েছেন কীভাবে ধর্ম-কর্ম পালন করতে হয়। এবং আঁধারে ডুবে যাওয়া সমাজকে তরিকার আলোকিত পথে এনে বুঝিয়েছেন, রাসুল (সঃ) এর সত্য তরিকায় মুজাদ্দেদিয়া আদর্শের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কেন? এবং কী? যে আদর্শের মধ্যে ধ্যান- মোরাকাবার সাধনা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যা মানুষের দৈনন্দিন শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপনে সুস্থ-স্ববল থাকারও একটি অকল্পনীয় উপায়! যেমন গুরু ছাড়া শিষ্য হয় না, তেমনই একা একা কোন সাধনাও হয় না। আর তাই তো স্বয়ং রাসুল (সঃ) মহান আল্লাহর নির্দেশে তাঁর কুদরতী হাতের ওপর হাত রেখে বাইয়াত পড়েছেন এবং আল্লাহতায়ালারই ধ্যান-মোরাকাবা করেছেন। তাহলে সাধারণদের বেলায় কি এর উল্টো কিছু হওয়া সুযোগ আছে? নাই। কারণ, আল্লাহর নির্দেশেই রাসুল (সঃ) বাইয়াতের মাধ্যমেই মানুষের কাছে কালিমা ও ইসলাম প্রচার করেছেন এবং যুগে যুগে সেই ধারাবাহিকতা বহন করে আসছেন পীরকামেলরা। আমাদেরকেও তাঁদের পবিত্র হাত ধরে বাইয়াত হতে হবে। আমরা অনেকেই মনে করি যে, পীরের কাছে গেলে মানুষ নাফারমান হয়ে যায়, তারা নামাজ-রোজা করেন না। কিন্তু আমি বলছি তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের শিক্ষা, কামেলগুরুর হাতে বাইয়াত হয়ে তার দিক-নির্দেশনার প্রতি নিষ্ঠাবান হওয়া, আত্মাকে পরিস্কার রাখার জন্য নিরলস কলবের জিকির করে যাওয়া এবং সর্বপরি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সাথে তরিকার অজিফা আমল করা, তরিকাভুক্ত একজন সালেকের (মুরিদ) প্রতিদিনের কাজ বা আমল। কুতুববাগী কেবলাজানের মতো হক্কানী পীরের সান্নিধ্যে এসে সূফীবাদের অন্তর্নিহিত এ সকল আধ্যাত্মবাদের অজানাকে জানতে চেষ্টা করছি। পৃথিবীর অস্থিরতার ঘুর্ণিপাকে জীবিতরা প্রতিদিন একবার করে বেঁচে উঠছি আর শুধু বাঁচার আকুতি নিয়ে যে যার মতো বাঁচে আছি! এ বাঁচার শেষ কোথায়? কখন? তা কেউ জানি না। এভাবে বাঁচতে বাঁচতে একসময় মরেও যায়। মরে কোথায় যায়? এ যাওয়ার শেষইবা কোথায় বা কখন? তাও জানি না। কী করে জানাবো? এসব জানতে হলে আগে জানতে হবে নিজেকে। সমাজে ক’জন আছি নিজেকে জানা মানুষ? খুব বেশি নেই। আর আত্মশুদ্ধি বা নিজেকে চেনা-জানা ছাড়া কেউই পূর্ণ মানুষ হতে পারবো না। তাই আল্লাহতায়ালা আধ্যাত্মবাদের গুঢ় রহস্য তথা আল্লাহর ভেদ জানতে বলেছেন এবং তা জানার জন্য কামেল অলিআল্লাহ বা কামেলপীর-বুজুর্গদের সান্নিধ্যে যেতে বলেছেন। কোন পথে গেলে আল্লাহর রহমত ও নিয়ামত মিলবে সে পথের সন্ধান তারাই জানেন।

দুনিয়া ও আখেরাত উভয় দিকে যতপ্রকার সুখ-শান্তি আছে এর সবকিছুর আধার হলো সূফীবাদ। শাস্ত্রে বলে, ‘অন্তরের সুখই প্রকৃত সুখ বা শান্তি’। আমরা যে দিন-রাত খেটে মরছি একটু সুখ-শান্তির ও স্বাচ্ছন্দের আশায়। আবার কেউ আখেরাতে শান্তিরলাভের আশায় রোজা-নামাজ, হজ-যাকাত করছেন। আবার কেউ কেউ এর তোয়াক্কাই করেন না। অনেকেই মনে করি, কালো টাকা সাদা করার মতো মক্কা শরীফ গিয়ে হজ করলেই আল্লাহতায়ালা সব গুনাহ মাফ করে দিবেন! কোন এক কবি লিখেছেন, ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ!’ মানুষ সাবালক হওয়ার পর জানা-অজানা ন্যায়-অন্যায়ের ভিতর দিয়ে বেড়ে উঠি। জীবনের মোহে দুনিয়ার রঙিন ডিঙ্গি বেয়ে বেয়ে এক সময় অন্তর আত্মা কলুষিত হয়ে পড়ে। যদি এমন আত্মাকে পরিশুদ্ধ না করি, তাতে জীবনে কিংবা মরণের পর কোন শান্তি বা সুফল বয়ে আনতে পারে? কখনোই পারে না। আর কামেল গুরুর দীক্ষা ছাড়াও আত্মার সম্পূর্ণ শুদ্ধতা অর্জন কখনই সম্ভব না। আমার বিশ্বাস কুতুববাগী কেবলাজানের মহৎ আদর্শ ও ব্যক্তিত্বের কাছাকাছি আসতে পারলে, যেকোন মানুষের জীবনে ও মরণে পরিবর্তন আসবেই। যে নিজের ভুল বুঝতে পারে না, সে অন্যের ভুলও ধরতে পারে না। অথচ আমাদের সমাজের আচরণই যেন উল্টো! আমরা নিজের ভুল না বুঝলেও অপরের ভুল ঠিকই ধরতে পারি! এ কারণে হয়তো অপরে তার নিজের ভুলকে শুধরে নিয়েছেন, কিন্তু আমার ভুলটা তো ভুলই রয়ে গেলো তা শুধরানোর চেষ্টা করা হলো না। আর এভাবেই দিন দিন আমাদের অন্তর জংধরা লোহায় পরিণত হয়েছে যার কোন মূল্য নাই। অবশ্য এ ধরণের মানুষের বেলায় মহান আল্লাহতায়ালা ঘোষণা দিয়েছেন যে, ‘আমি যার অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছি সে কখনই আমার প্রতি অগ্রসর হতে পারবে না’। জানি না কে বা কারা এমন অভিশপ্ত অন্তর নিয়ে জন্মেছি, তাই আমাদের উচিৎ সময় থাকতে যুক্তি ও বাস্তবতার মানদ-ে দাঁড়িয়ে সত্যের সন্ধান করা। যে সত্যের মুখোমুখি হয়ে নিজের আমিত্বকে বিলিয়ে দিয়ে কামেল পীরের কাছে আত্মসমর্পণ করা। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘অ-কূনু-মা’আছ সাদিক্বীন’। অর্থ: ‘তোমরা সত্যবাদিগণের সঙ্গী হও’। আসলেই সত্যবাদিগণের সান্ন্যিধ্যে বা ছহবতে এসে তাঁদের দেখানো পথ অনুসরণ করলে আমরাই সফলকাম হবো। সত্যবাদি কামেল পীরের কাছে রয়েছে সৃষ্টি ও স্রষ্টার মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক ও মহান আল্লাহর গভীর রহস্য-ভেদ! আল্লাহর বাণীর চিরন্তন এই সত্যকে পাশ কাটিয়ে চলতে চলতে একদিন সবই নি:শেষ হয়ে যাবে। তখন অতিপ্রিয় আপনজনও আর খোঁজ নেবেন না, সদ্যমৃত আপনজনের আত্মাটি এখন কেমন আছে? সাময়িক জীবনে পৃথিবীর মিথ্যা অহঙ্কারে নিজেরাই নিজেদের ক্ষমা করে শুধু আত্মতৃপ্তির অভিনয় করছি। অথচ নিজেকে ক্ষমা করা সবচেয়ে অজ্ঞতা আর অলসতা ছাড়া আর কী হতে পারে? এমন পরিস্থিতিতে কেবল সূফীবাদের দীক্ষাই পারে অজ্ঞতা, গোড়ামী, অপসংস্কৃতি, অহঙ্কার ইত্যাদি দূর করে জীবনে ও মরণে চিরশান্তির সুবাতাস বয়ে আনতে।

(Visited 358 times, 2 visits today)
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *