এম এইচ মোবারক
তাসাউফ ও সূফীবাদ শিক্ষা দেয় আত্মশুদ্ধি। হৃদয়টাকে শুদ্ধ করার মুখ্য উপাদান বিদ্যমান রয়েছে সূফীবাদের সাধনার মধ্যে। এই শিক্ষার সুফলের অন্যতম ধাপ হচ্ছে জীবাত্মাকে পরমাত্মার অধীন করা, অত্মসমর্পণ করা, এবং কু-চিন্তার সাথে জিহাদ করে নিজ আত্মাকে মুক্তির পথে নিয়ে দাঁড় করানো। এ ক্ষেত্রে কামেল মাশায়েখ বা কামেলপীরের কাছে নিজেকে অত্মসমর্পণ করে তাঁর সান্যিধ্যে থেকে, নফসকে পরিশুদ্ধি করানোর মধ্যদিয়ে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই হলো সূফী দর্শনের মর্ম কথা। সূফীবাদ মানব জাতিকে জানিয়ে দেয় সৃষ্টিকর্তা ও তাঁর সব রকমের সৃষ্টির মূল রহস্য। স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির করণীয়, এবং সৃষ্টির প্রতি স্রস্টার করনীয় কী? তা বোঝার একমাত্র পথ হচ্ছে সূফীবাদ।
পরমসত্তা বা মহান সৃষ্টিকর্তাকে অথবা তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে জানার আকাঙ্খা মানুষের চিরন্তন। অনেকেই বই-পুস্তকের মাধ্যমে সৃষ্টি ও স্রষ্টা সম্পর্কে জেনে থাকেন। আমার জানা মতে এ বিষয়ে কোনো কোনো বই-পুস্তক এক হাজার, দুই হাজার পৃষ্ঠা বা তারও অধীক হয়ে থাকে, কাগজের পরতে পরতে অনেক কিছু লেখাও থাকে। তবে কথা হচ্ছে এক-দুই বা তিন হাজার পৃষ্ঠা পড়েওকি এই কুল-কায়েনাতের মালিক ও তাঁর লীলা সম্পর্কে জানা সম্ভব?
সৃষ্টিকর্তা তাঁর সব রকমের সৃষ্টিই ঘটিয়েছেন আধ্যাত্মিকতার মধ্যদিয়ে, একথা চিরসত্য। অতএব গ্রন্থগত লক্ষলক্ষ পৃষ্ঠা পাঠ করেও এই কায়েনাতের মালিক ও তাঁর লীলা সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি, এর জন্য প্রয়োজন আধ্যাত্মিক জ্ঞান। একমাত্র আধ্যাত্মিক ধ্যান ও জ্ঞানের মাধ্যমেই এ পথে সফলকাম হওয়া সম্ভব বলে মনে করি। এর জন্য আমাদের প্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে, একদম কারো কথায় নয় নিজ ইচ্ছায় নিজ মনকে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করানো। আর এই আত্মসমর্পণের প্রথম দাপ হচ্ছে একজন কামেল মুর্শিদ-পীর বা গুরুর নিকট একাগ্রচিত্তে মনের পরিশুদ্ধিতার উদ্দেশ্যে হাজির হওয়া। আর আমি এটাকেই অত্মসমর্পণ বলে বিশ্বাস করি। আধ্যাত্মিক শিক্ষকের নিকট আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়েই তাঁর দেয়া অজিফা-আমল অনুযায়ী পথ চলতে হবে। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হয়ে যে, তাঁর কাছে ব্যক্তির গৌরবকে প্রকাশ করা থেকে সর্বদা বিরত থাকতে হবে, কেননা জীবের সাথে পরম ও হুমুক-আহকাম অনুযায়ী পথ চলতে হবে। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হয়ে যে, তাঁর কাছে ব্যক্তির গৌরবকে প্রকাশ করা থেকে সর্বদা বিরত থাকতে হবে, কেননা জীবের সাথে পরম কখনোই মিলবেন না যদি সে জীবের মধ্যে বিন্দু পরিমান হিংসা বা অহঙ্কার থাকে। আধ্যাত্মিক শিক্ষা তো এটাই যে, জীব ও পরমের সাক্ষাৎলাভ। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী কামেল মুর্শিদ বা দীক্ষাগুরু যেভাবে চাইবেন সেভাবেই তাঁর সব হুকুমকে মাথায় নিয়ে, অন্তরে গেঁথে পালন করার চেষ্টা করতে হবে। এই চেষ্টার শুরুটাই হচ্ছে অত্মসমর্পণ। আর আত্মসমর্পণের মধ্যেই নিহিত আছে পরম শান্তি।
তাই বর্তমান শিক্ষীত তরুণ সমাজের প্রতি আমার আহ্বান, একবার হলেও আপনার আসুন ঢাকা ফার্মগেট কুতুববাগ দরবার শরীফে এবং দেখুন এ দরবার শরীফের পীর ও মুর্শিদ খাজাবাবা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ্ নকশবন্দি- মোজাদ্দেদি- কুতুববাগী কেবলাজান মানব জীবনের জন্য অতীব জরুরী মহা-মূল্যবান আধ্যাত্মিক শিক্ষা-দীক্ষার এক মহা ভান্ডার নিয়ে বসে আছেন।