আলহাজ মাওলানা সৈয়দ হযরত জাকির শাহ্ নকশ্বন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী
শামী প্রণেতা বলিয়াছেন, ‘ওয়া হুয়া মাতুফুন আলাল ফিকহি লা-আলাল তায়াবির লাম্মা আলাত মান আন্না ইলমাল ইকলাছি ওয়াল হাসাদী ওয়াল হাসাদি ওয়ার রিইয়ায়ি ফারদুন আইনি মিসলুহা ওয়া গাইরুহা মিন আফাতিন নুকুসিন কাল কাবরি ওয়াস সাহি ওয়াল হাক্দি ওয়াল গাছসি ওয়াল গাদাবি ওয়াল আদাওয়াদি ওয়াল বাকদোয়ায়ি ওয়াত তামিয়ি ওয়াল বুগলি ওয়াল বাতরি ওয়াল খাইলা-ই ওয়াল খিয়ানাতি ওয়াল মাদাহিনাতি ওয়াল ইসতেকবারি আনিল হাক্কি ওয়ালমুনকারি ওয়াল মুখাদাতি ওয়াল কিসওয়াতি ওয়া তাওলুল আস্লি ওয়া নাহ্-বিহা মিম্মা হুয়া মাইয়িনুন ফি-রাবিইল মুহলাকাতি মিনাল আহবায়ি ক্বালা ফিহি ওয়ালা ইউনফাকু আনহা বিসাররি ফা-ইয়ালজিমুহু আই ইয়াতা আলামা মিনহা মাবিইয়াবী নাফসিহি মুহতাজান ইলাইহি ওয়া আজালতাহা ফারদুন আইনি লা ইয়ামকিনু ইলাবি মারিফাতি হুদু দুহা ওয়া আসবাবিহা ওয়া ইলাজিহা ফা-ইন্না মান লা-ইয়ারিফুস সারিকিয়ি ফিহি’।
অর্থ্যৎ, এল্মে তাসাউফ শিক্ষা করা এল্মে ফেকাহের ন্যায়ই ফরজে আইন, ফরজে কেফায়া ও মোস্তাহাব। গায়তোল আওতার কিতাবে প্রমাণ হইতেছে, এলমে (১) এখলাছ অর্থাৎ, মানসিক সদগুণগুলি এবং নিজের প্রশংসা , হিংসা, রিয়া এবং (২) ইহা ভিন্ন অহংকার, আদায়তী, প্রবঞ্চনা, ক্রোধ, লোভ, বোখিলী তোষামোদ, সত্য হইতে ফিরিয়া থাকা, চক্রান্ত, প্রতারণা, নিষ্ঠুরতা, দুরাশা প্রভৃতি কু-রিপুগুলির বিষয় এহ্ইয়াউল উলমুদ্দিন কিতাবে আছে, যে এইসব ক্ষতিকারক রিপু হইতে কোন মান্ষুই খালি নহে, কাজেই সকলেই ঐ বিষয়ে আবশ্যক পরিমাণ শিক্ষা দরকার। ঐ সকল কু-রিপুগুলো দিল হইতে দূর করা ফরজ। আবার এসব রিপুগুলির পরিচয়, উহা দূর করিবার নিয়ম এবং প্রতিষেধক না জানিলে, উহা কীভাবে দূর করা সম্ভবপর হয়? বাস্তবিক পক্ষে, যে ব্যক্তি পাপের কাজগুলি চিনিতে ও জানিতে না পারে, সে ব্যক্তি উহাতে পতিত হইয়া থাকে। হাদিস শরীফে আছে, ‘আলা ইন্নাফিল জাসাদি মুদ গাদান, ইজা সালুহাত সালুহাল জাসাদু কুল্লুহু ওয়া ইজা ফাসাদাত, ফাসাদাল জাসাদু কুল্লুহু আলা ওয়াহিয়াল ক্বাল্ব’।
জনাব মাওলানা শামছুল হকসাহেব এই হাদিসের নিন্মলিখিত রূপ ব্যাখা করিয়াছেন, অর্থাৎ, সাবধান, নিশ্চয় মানুষের অজুদের ভিতরে এমন এক টুকরা মাংস আছে, সেই মাংস টুকরা যখন যথারূপ পবিত্র হয়, তখন সমস্ত অজ্দুই পবিত্র হয়। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ মানব দেহটিই তখন সঠিকভাবে পরিচালিত হইতে থাকে। আর সেই মাংস টুকরা যখন খারাপ হইয়া পরে, তখন সমস্ত অজুদই খারাপ হইয়া যায়। অর্থাৎ, মানব দেহের কোন অংশ বা কোন অঙ্গই তখন সঠিকভাবে পরিচালিত হয় না। এই হাদিস বোখারী শরীফের একটি অংশ। ইহা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, ইহাতে মানুষের সৃষ্টিতত্ত্ব ও দেহতত্ত্বের প্রতি ইঙ্গিতের দ্বারা, মানুষের প্রকৃত উন্নতির উপায় উদ্ভাবন করা হইয়াছে এবং সর্তক করা ইহয়াছে যে, মানবের স্থুল দেহের উন্নতি অপেক্ষা সূক্ষ্ম আত্মার উন্নতির উপরই মানুষের প্রকৃত ও মুখ্য উন্নতি নির্ভর করিয়া থাকে।
টীকা : (১) এল্মে এখলাছ, যে বিদ্যা দ্বারা আত্মা শুদ্ধ হয়, (২) রিয়া-ভন্ডামী বা মানুষকে দেখানোর জন্য এবাদত করা হয়।
আত্মার উন্নতি সাধিত না হইলে, মানবজীবন বিফল ও অত্যন্ত বিড়ম্বনায় পতিত হয়। মানুষের অজুদ বা অস্তিত্ব দুই ভাগে বিভক্ত ‘স্থ’ূল দেহ’ যাহা বাহ্য দৃষ্টিতে বা যান্ত্রিক সাহায্যে ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য হইতে থাকে, এবং সূক্ষ্ম আত্মা’ যাহা ঐরূপ ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য হইতে পারে না। মানুষের স্থূল দেহের সৃষ্টি মূলে যেরূপ বিভিন্ন উপাদান রহিয়াছে, যথা : পানি, মাটি, আগুন, বাতাস, সেরূপ তাহার এই ভৌতিক দেহাভ্যান্তরে পাঁচ প্রকারের আত্মাও রহিয়াছে।
প্রথম : পশুর আত্মা, যাহা দ্বারা খাওয়া, শোওয়া, কামরিপু চরিতার্থ করা ইত্যাদি প্রবৃত্তির উদ্রেক হয়। দ্বিতীয় : হিংস্র্র জন্তুুর আত্মা, যা দ্ধারা দ্বেষ, হিংসা, ক্রোধ ও রাগের বশীভূত হইয়া মারামারি, কাটাকাটি, ঝগড়া-ফাসাদ করিয়া প্রতিশোধ গ্রহণের প্রবৃত্তি জন্মিয়া থাকে। তৃতীয় : শয়তানের আত্মা, যাহার প্ররোচণায় পাপাচার, অহংকার মিথ্যা ও সূক্ষ্ম কূটকৌশলের দ্বারা মানবকে ধোকা দেওয়া ইত্যাদির প্রবৃত্তি উদিত হয়। চতুর্থ : ফেরেশতার আত্মা, যাহা দ্বারা সদাচার, ন্যায়পরায়ণতা, সত্যতা, পরোপকারিতা ও আল্লাহর বশ্যতা স্বীকার করা ইত্যাদির আগ্রহ আকর্ষণ জন্মিয়া থাকে। পঞ্চম : মানুষের আত্মা, তাহার কর্তব্য হইতেছে, প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় আত্মাকে বশ করার দ্বারা উহাদিগকে কু-প্রবৃত্তির দিক হইতে ফিরাইয়া, ফেরেশতার আত্মার সদগুণাবলীতে পরিণত ও পরিচালিত করা এবং আল্লাহ্র মারেফত মহব্বত হাসিল দ্বারা দুনিয়াতে আল্লাহ্র খেলাফত কায়েম করা। অনেক সময় দেখা যায়, একজন লোক যখন তাহার কোন আত্মীয়কে বা অন্য কোন লোককে স্বপ্নে দেখিল যে, সে বহু বিষয় আলাপ আলোচনা করিয়া চলিয়া গেল। যে ব্যক্তি স্বপ্নে দেখিল তাহার সব কথা স্মরণ রহিল। এমন কি অনেক সময় অনেকে কোন বিপদে পড়িলে, তাহার কোন আত্মীয় স্বপ্ন যোগে উপস্থিত হইয়া বলিয়া থাকে, তুমি এই ব্যবস্থা কর, এই ব্যবস্থা করিলে তোমার মসিবত দূর হইয়া যাইবে। দেখা যায় সেই ব্যবস্থা করার সঙ্গে সঙ্গে বিপদ দূর হইয়া যায়। কিন্তু যে ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখিল এবং বিপদ দূর হওয়ার ব্যবস্থা করিল, সেই ব্যক্তি জানেইনা যে, তাকে দেখিল ও ব্যবস্থা করিল?
টীকা- (১) অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় মানুষও একটি প্রাণী বটে। অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় মানুষ কেবল মাত্র নিম্ন জগতের ভৌতিক পদার্থের দ্বারাই সৃষ্টি নয়। মানুষের দেহ ভৌতিক পদার্থ দ্বারা সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ মধ্যস্থ মাটি, পানি, অগ্নি ও বাতাস জাতীয় পদার্থ নিচয়ের সংমিশ্রণে যে বাষ্প বা বিদ্যুৎ যাতীয় সূক্ষ্ম শক্তিশালী পদার্থের সৃষ্টি হয়, সেই বাষ্পের দ্বারাই মানুষের নফসে আম্মারার (প্রবৃত্তির) সৃষ্টি। ইহাতে অতি শক্তিশালী পদার্থ, এমন কি বিদ্যুৎ অপেক্ষাও অধিক শক্তিশালী। কিন্তু এই শক্তিটি ভালো-মন্দ বিবেচনা ও পরিণাম চিন্তা বিবর্জিত। তদুপরি মানব দেহের সৃষ্টির মূলে উর্ধ্ব জগতের একটি জিনিসও মিশ্রিত রহিয়াছে। তাসাউফের ভাষায় সেই জিনিসের নাম হইতেছে, ‘রূহ্’, উহাকেই মানবআত্মা বা বিবেক কিংবা আক্কেল বলা হয়। এখন চিন্তার বিষয় এই যে, কে কাহাকে স্বপ্নে দেখিল। যাহাকে স্বপ্নে দেখিল তাহার না জানার কারণ কি? ইহার দ্বারা প্রমাণ হয়, মানুষের ভিতরে একাধিক আত্মা রহিয়াছে, এখানে আরও প্রমাণ হইতেছে যে, জীবাত্মা মানবাত্মাকে স্বপ্নে দেখিল, স্বপ্ন দর্শকের অর্থাৎ, জীবাত্মা কোন খবর রাখে না। অর্থাৎ, যাহাকে স্বপ্নে দেখিয়াছে, তাহার জীবাত্মায় কোন খবরই রাখে না। প্রথমোত : তিনটি আত্মাকেই তাসাউফের পরিভাষায় ‘নফসে আম্মারা’ বলা হয় এবং চতুর্থ, পঞ্চম এই দুইটিকে রূহ্, আক্কেল বা বিবেক বলা হয় এবং এটিই হইতেছে বিবেক, বুদ্ধি ও মানবাত্মা। অতএব, উপরে বর্ণিত বিশেষণের দ্বারা দেখা গেল যে, এ পাঁচ প্রকারের আত্মাই তাসাউফের পরিভাষায় দুই নামে পরিচিত হইয়াছে। প্রথম প্রকার ‘নফসে আম্মারা’। ইহার তিনটি বিভাগ যথা : পশুর আত্মা, হিংস্র জন্তুর ও শয়তানের আত্মা এবং দ্বিতীয় প্রকার ‘রূহ্’ অর্থাৎ, মানবাত্মা বা বিবেক ও আক্কেল, ইহার দুইটি বিভাগ, যথা : ফেরেশতার আত্মা ও মনুষ্য আত্মা।
রাসুলুল্লাহ্ (সঃ) বলিয়াছেন, ‘আলা ইন্নাফিল জাসাদি মুদগাতান’। বলিয়া মানব দেহের যে বিশিষ্ট অংশটির প্রতি আঙ্গুল নিদের্শ করিয়াছেন, সে অংশটি হইতেছে এই ‘রূহ্ বা আক্কেল কিংবা বিবেক। ইহার উন্নতিতে পূর্ণ মানবদেহের উন্নতি এবং ইহার অবনতিতে পূর্ণ মানব দেহের অবনতি হইয়া থাকে। তাহাই রাসুলেপাক (সঃ) বলিয়াছেন, ‘ইযা সালুহাত সালুহাল যাসাদু কুল্লুুহু ওয়া ইযা ফাসাদাত ফাসাদাল যাসাদু কুল্লুহু’। এখন দেখিতে হইবে যে, ঐ অংশটির উন্নতির অর্থ কি? বস্তুত : প্রতিটি জিনিসের উন্নতি বা অবনতির গুণাগুণ বিচার করা হয়, উহার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের সুষ্ঠতার দ্বারা। তাই এখানে দেখিতে হইবে যে, রুহ্ বা বিবেকের উপর কি কি দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পিত হইয়াছে। এই প্রশ্নের উত্তর অতি সহজ। কারণ রুহ্ বা বিবেক বলিয়া যে দুইটি আত্মার কথা হইয়াছিল, অর্থাৎ, ফেরেশতার আত্মা ও মানবাত্মা, উহাদের কর্তব্য ছিল সদাচার, সততা, সত্যতা ও আল্লাহর বশবর্তীতে ইত্যাদির প্রতি আকৃষ্ট করা। তাহার সঙ্গে সঙ্গে নফসের মধ্যে যে অপর তিনটি শক্তি বা আত্মা আছে, উহাদিগকে বশে আনিয়া ফেরেশতার আত্মার মতো সদগুণাবলীতে পরিচালিত করা। অতএব, রূহ্ বা বিবেকের দায়িত্ব ও কর্তব্যও তাহাই হইবে। এই মহান কর্তব্য পালনে রূহ্, মানবাত্মা বা বিবেক যতটুৃকু উন্নতি করিতে পারিবে, পূর্ণ মানব দেহটি ততটুকুই উন্নতি লাভ করিবে। এমনকি অবশেষে এ রূহ্ বা মানবাত্মা যে উর্ধ্ব জগত হইতে আসিয়াছিল, পুনরায় সেই মানবাত্মা, সেই উর্ধ্ব জগতে অর্থাৎ, বেহেশতে গিয়া পৌঁছিবে। পক্ষান্তরে রূহ্ বা মানবাত্মা নিজের এ কর্তব্য ক্রটি দ্বরা, সে নিজেই যদি নফস বা এ তিন প্রকার আত্মার বশ্যতা স্বীকার করিয়া অবনতিতে পতিত হয়, তা হইলে মানবাত্মা অবনতির তিমির গহব্বরে পতিত হইবে এবং শেষ ফলে ঐ রূহ্ বা মানবাত্মা সর্বনিম্ন জগতে অর্থাৎ, জাহান্নামে যাইয়া পৌঁছিবে।
আধ্যাতিক জ্ঞানবিশারদগণ বা তরিকতের মোস্তাহেদগণ, রূহ্ বা বিবেকের উন্নতির পাঁচটি স্তর বর্ণনা করিয়াছেন এবং প্রত্যেকটির নামকরণও করিয়াছেন। পূর্বেই ইঙ্গিত করা হইয়াছিল যে, রূহ্-মানবাত্মা বা আক্কেল ও বিবেককে তাসাউফের পরিভাষায় ‘লতিফা’ নামে নামকরণ করা হইয়া থাকে। সেই অনুসারেই রূহ্রে উন্নতির পাঁচটি স্তরের নিম্নলিখিত রূপে নামকরণ করা হইয়াছে। যথা : এক, লতিফায়ে ক্বালব, মানুষ যখন আল্লাহ্কে সরণ করে, অল্লাহ্র নাম উচ্চারণ দ্বারা আল্লাহ্র জিকির করে, তখন সে এই লতিফায় ক্বাল্বের কর্তব্য পালন করে। দুই, লতিফায়ে রূহ্, মানুষ যখন আল্লাহ্র মহৎ গুণাবলীর ধ্যান করে এবং এ ধ্যানের দ্বারা নিজের মধ্যে এ গুণের প্রতিবিম্ব হাসিল করে যেমন, আল্লাহ্ দয়ালু দয়াময় ইহার ধ্যান করে নিজের ভিতর এরূপ অবস্থার সৃষ্টি করা যে, আমাকেও দয়ালু হইতে হইবে এবং দয়ালুর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতে হইবে। ইহা হইতেছে, লতিফায় রূহ্রে কর্তব্য পালন করা। তিন, লতিফায়ে ছের, মানুষ যখন আল্লাহ্র গুণাবলীকে ধ্যানের দ্বারা সেই গুণাবলী নিজের মধ্যে হাসিল করার জন্য সচেষ্ট হয়, তখন তাহার সিনার অভ্যান্তরে আল্লাহ্র মারেফতের দ্বার খুলিয়া যায়, ইহাই হইতেছে লতিফায়ে ছেরের কর্তব্য। চার, লতিফায়ে খফী, মানুষের মধ্যে যখন আল্লাহ্র মারেফতের দ্বার খুলিয়া যায়, তখন মানুষ আল্লাহর গুণে মুগ্ধ ও অভিভূত হইয়া আল্লাহ্র আশেকে ও প্রেমিকে পরিণত হইয়া যায় এবং নিজের নফসের মধ্যে যে সব কু-প্রবৃত্তি আছে, উহার প্রতি ঘৃণা জন্মিয়ে যায় এবং সেগুলিকে ‘ফানা’ বিলুপ্ত করিয়া দেয়। অর্থাৎ, সেগুলিকে পূর্ণরূপে দখল ও অধিকার করার শক্তি ও সামর্থ্য অর্জন করা, ইহাই হইতেছে, লতিফায় খফির কর্তব্য। পাঁচ, লতিফায়ে আখফা, মানুষ ‘ফানা ফিল্লাহ্’ অর্থাৎ, নফসের সমুদয় কু-প্রবৃত্তিগুলিকে দখল ও দমন করার সামর্থ্য লাভ করার পর, বাকা বিল্লাহ্’ অর্থাৎ, আল্লাহ্র গুণে গুণান্বিত হওয়ার মর্তবায় পৌঁছে, অর্থাৎ, আল্লাহ্র মারেফত লাভ করে, ইহাই হইতেছে, লতিফায় আখফার মর্তবা ও মর্যাদা। এই অবস্থাতেই রূহ্, বিবেক বা আক্কেলের পূর্ণ শুদ্ধি হইয়া যায়। এই অবস্থার পর আর বিবেক-আক্কেলকে কু-প্রবৃত্তির বশীভূত হইতে হয় না। রাসুলুল্লাহ্ (সঃ) মানবকে স্বীয় আক্কেল-বিবেককে সঠিক করার প্রেরণাও দান করিয়াছেন। উহার উদ্দেশ্য হইতেছে, পর্যায়ক্রমে উল্লেখিত ব্যবস্থা ও অবস্থাসমূহের সৃষ্টি করা এবং ইহাই হইতেছে, মানবাত্মার চরম ও পরম উন্নতির শেষ পর্যায়।