ইসলাম ধর্মে যত প্রকার প্রার্থনা, আরাধনা উপাসনা, রিয়াজত সাধনা, জিকির-আজগার যা কিছু আছে তার মধ্যে নামাজই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত

ইসলাম ধর্মে যত প্রকার প্রার্থনা, আরাধনা উপাসনা, রিয়াজত সাধনা, জিকির-আজগার যা কিছু আছে তার মধ্যে নামাজই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত


সালাত অর্থ রহমত, দোয়া, প্রশংসা, জিকির স্মরণ ইত্যাদি যা আরবিতে বলা হয় ‘সালাত’। ফার্সিতে বলা হয় নামাজ, বাংলায় বলা হয় প্রার্থনা এবং ইংরেজিতে বলা হয় (prayer)। আল্লাহ তায়া’লা বান্দাদের ওপর তৌহিদের পর নামাজের চেয়ে বেশি প্রিয় আর কোনো জিনিস ফরজ করেননি।

আল্লাহ তায়া’লা পবিত্র কোরআনের সূরা আনকাবূত, আয়াত-৪৫-এ বলেছেন, ” ইন্নাছ্ ছা্‌লা-তা তান্হা আনিল ফাহ্শা-ই ওয়াল মুনকারি” অর্থ – নিশ্চয়ই নামাজ, অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।

সূরা-বাকারাহ, আয়াত- ৭ “খাতামাল্লা-হু আলা-কুলূবিহিম; ওয়া আ’লা-সাম্ই’হিম্; ওয়া-আলা আব্ছা-রিহিম্ গিশা ওয়াতুওঁ, ওয়ালাহুম আ’যা-বুন আ’জীম” অর্থ- আল্লাহ তাদের অন্তরে ও তাদের কানে মোহর মেরে দিয়েছেন, তাদের চক্ষুর ওপর পর্দা রয়েছে, তাদের জন্য আছে কঠর শাস্তি ও ওয়াইল দোজখ।

হাদিস “আস্‌সালাতু মিরাজুল মু’মিনিন্” অর্থ- নামাজ মুমিনের জন্য মেরাজ (যার বাংলা অর্থ হলো দেখা বা সাক্ষাৎ)। তাফসিরে ইবনে কাছির, হাদিসে জিব্রিলে বর্ণনা আছে “আন্তা বু দুল্লাহা কা-আন্নাকা তারাহু ফা-ইল্লাম তাকুন্ তারাহু ফা-ইন্নাহু ইয়া রাক” অর্থ- তুমি এমনভাবে সালাতে দন্ডায়মান হও ও সালাত আদায় কর, যেন তুমি আল্লাহকে দেখতেছ, যদি তুমি দেখতে অক্ষম হও, কিংবা দেখতে না পাও, তাহলে মনে কর আমি আল্লাহ তোমাকে দেখতেছেন। হযরত আলী (রা.) বলেছেন, “লাম্ আ-বুদ্ রাব্বা লাম্ আ-রা-হু” অর্থ- আমি এমন প্রভুর উপাসনা করি না, যাঁকে আমি দেখি না। এই দর্শন প্রসঙ্গে হযরত উমর (রা.) ও এরূপ দর্শন লাভের দাবি করিয়া বলিয়াছেন, “রায়া ক্বল্বি রাব্বী বিনূরি রাব্বী” অর্থ- আমার প্রভু প্রদত্ত নূরের দ্বারা আমার ক্বল্ব আমার প্রভুকে দেখিয়াছে।(সূত্র: সিররুল আসরার) হযরত আনাছ (রা.) হইতে হাদিসে রেওয়াত আছে যথা- “ইন্নামাল্ মু’মিনিনা ইজাকানা ফিস্ সালাতি ফা-ইন্নামা ইউনাজি রাব্বাহু” অর্থ- নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি নামাজের মধ্যে তাহার পালনকর্তার সহিত কথোপকথোন করিয়া থাকে। রাসূল (স.) বলেন, “লা-সালাতা ইল্লাবি হুজুরী ক্বাল্‌ব”। অর্থ- হুজুরী দেল ব্যতীত নামাজ শুদ্ধ হয় না।

                                                                            সূরা মাউন, আয়াত ১ থেকে ৭

১. “আরআইতাল্ লাযী ইউকায্যিবু বিদ্দীন” অর্থ- আপনি কি দেখেছেন তাকে, যে বিচার দিবসকে অস্বীকার করে। ২. “ফাযা-লিকাল লাযী ইয়াদু’য়্যুল ইয়াতীম” অর্থ- সে সেই ব্যক্তি, যে এতিমকে দরজা থেকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়। ৩. “ওয়ালা- ইয়াহুদ্দু আ’লা-ত্বআ’-মিল মিস্কিন” অর্থ- সে নিজেও দান করে না, অন্যকেও দান করতে উৎসাহিত করে না। ৪. “ফাওয়াইঁলুল্ লিল্ মুছাল্লীন” অর্থ- সুতরাং দুর্ভোগ সেই সমস্ত নামাজীর। ৫. “আল্লাযীনা হুম আ’ন ছালা-তিহিম সা-হূন” অর্থ- যাদের নামাজে মন বসে না। ৬. “আল্লাযীনা হুম ইয়ূরা-ঊনা” অর্থ- যারা তেমন নামাজ পড়ে; লোক দেখানোর জন্য পড়ে। ৭. “ওয়া ইয়াম্না’ঊনাল মা-ঊন।” অর্থ- নিত্য ব্যবহার্য বস্তু অন্যকে দেয় না। তাই যদি কেউ আল্লাহকে লাভ করতে চান, দেখতে চান, পেতে চান, ও মেরাজ বা দর্শন করতে চান, তাহলে প্রত্যেক নর-নারীকে অবশ্যই সালাত আদায় করতে হবে। কেননা ইতিহাসে দেখা যায়, সকল নবী-রাসুল ও অলী-আউলিয়াগণ সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়া’লার নৈকট্য লাভ করেছেন। হাদিসে কুদসিতে এরশাদ করা হয়েছে, “মা ইয়া যালু আবদি ইয়া তাকাররাবু ইলাইয়া বিন নওয়াফিলি হাত্তা আহাবাব তুহু ফা ইযা আহাবাব তুহু ফাকুনতু সাময়ু হুল্লাযী ইয়াসমাউ বিহী ওয়া বাছারু হুল্লাজী ইয়াবছুরু বিহী ওয়া ইয়াদাহুল্লাতী ইয়াবতিশু বিহা ওয়া রিজলু হুল্লাতী ইয়ামশী বিহা” অর্থ- বান্দা যখন নফল ইবাদতের দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, তখন আমি তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করি। যখন আমি তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই, যে কান দিয়ে সে শোনে, আমি তার চোখ হয়ে যাই, যে চোখ দিয়ে সে দেখে, আমি তার হাত হয়ে যাই, যে হাত দিয়ে সে ধরে, আমি তার পা হয়ে যাই, যে পা দ্বারা সে হাঁটে।