মাওলানা আবদুল আউয়াল
আল্লাহতায়া’লা যুগে যুগে এই ধরাধামে নবী-রসুল ও আল্লাহর অলি-বন্ধুগণকে পাঠিয়েছেন, সময়ের আলোকর্তীকা রুপে। আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) নবী থেকে শুরু করে, আখেরী নবী জিন্দা নবী তাজদ্বারে মদিনা হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা আহাম্মদ মুজ্তবা (সঃ) পর্যন্ত, প্রায় পনেরো শতাব্দী আগে। এরপর পবিত্র কোরআন-হাদিসে আল্লাহ-রসুলের ওয়াদা অনুসারে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, নানান বেশে যখন যেখানে যাঁকে দরকার আল্লাহতায়া’লা তাঁর প্রিয় অলি-বন্ধুদের পাঠিয়েছেন।
আমরা মানুষ আশরাফুল মাখ্লুকাত সৃষ্টির সেরা জীব, আল্লাহতায়া’লা আমাদের সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর হুকুম ও ইবাদত পালন আর তাঁর দেয়া মহা নিয়ামত ভোগ করে অশেষ শুকরিয়া আদায় করার জন্য। কিন্তু আমরা তার কতটুকু নিয়ম সত্যভাবে পালন করতে পারছি? আমরা যাতে আল্লাহতায়া’লার হুকুম আহকাম সঠিকভাবে পালন করতে পারি, সে জন্যেই যুগে যুগে অলি-আউলিয়াদের আগমন।
যখন সমাজ কলুষিত, অশিক্ষা-অন্ধকার, কুসংস্কার ও ভুল শিক্ষার আবর্তে ঢেকে যেতে বসে, তখনই আল্লাহতায়া’লা পৃথিবীতে তাঁর অলি-বন্ধুদের পাঠিয়ে, পথভ্রষ্ট মানুষদের সুশিক্ষার আলোকিত পথের সন্ধান দিয়ে, সত্য আর চির সুন্দরের অমিয় বাণী দিয়েছেন। যেহেতু বর্তমান যুগ নবী-রাসুলের যুগ নয় কিন্তু এখন বেলায়েতে মাশায়েখ অলি-আউলিয়াগণের যুগ এবং কেয়ামত পর্যন্ত এই অলি-আউলিয়াগণের মাধ্যমেই আল্লাহতায়া’লা তাঁর নেয়ামত ও রহমতের বাণী শুনাবেন বিশ্ববাসীকে। আর তাই অলি-আউলিয়াগণের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহতায়া’লা বলেনÑ ফাইয়া আউয়্যুহাল মুহ্লিমুনাল হাজিরুনা আহিব্বু আউলিয়া আল্লাহি, ফাইন্নাহুম হুমুল মাকবুলুন।‘
অর্থ: হে উপস্থিত মুসলিমগণ, তোমরা আউলিয়াগণকে মুহব্বত করবে। কেন না, তাঁরা আল্লাহর গ্রহণীয় বন্ধু।
অলি-আল্লাহগণের ব্যাপারে আল্লাহতায়া’লা হুশিয়ার করে আরোও বলেনÑ ওয়াল তাবগেদুহুম ফাইন্নাহুম হুমুল মানছুরুন।‘
অর্থ: তাঁদের সঙ্গে শত্রুতা করবে না। কেন না, তাঁরা আল্লাহর খাস সাহায্যপ্রাপ্ত বান্দা।
হাদিস শরীফে বর্ণিত আছেÑ ফাইন্নান্নাবিয়্যা (সঃ) ক্বলা ইন্নাল্লাহা তারারাক ওয়াতায়ালা ওয়াক্বলা মান দায়ালি ওয়ালিয়্যা ফাক্বাদ আজানতুহু বিলহারবি।’ (আল-বুখারী)
অর্থ: দয়াল নবী (সঃ) (হাদিসে কুদসীতে) ইরশাদ করেন, আল্লাহতায়া’লা বলেন, যে ব্যক্তি আমার অলি-বন্ধুর সঙ্গে শত্রুতা করে, আমি তাকে আমার সঙ্গে যুদ্ধের জন্য আহ্বান করছি। (সহিহ্ বুখারী শরীফ)
বর্তমান মুছিবতের জামানায় নক্শবন্দিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার একমাত্র ধারক-বাহক একবিংশ শতাব্দীর মহা সত্য সাধক পীরে কামেল, মুর্শিদে মোকাম্মেল, আলেমে হক্কানী, আলেমে রাব্বানী, মাহ্বুবে ছোবহানী, মোফাস্সিরে কোরআন শাহসুফি আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ হযরত জাকির শাহ্ নকশ্বন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর অলিত্বের ভার নিয়ে এ পৃথিবীতে এসেছেন। তাঁর সাধনা এবং মানুষের কল্যাণে কর্ম পরিধি লক্ষ্য করলেই তা সহজে বুঝা যায়। আমি বাবাজান হুজুরকে তাঁর ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, তিনি আল্লাহতায়া’লা ও রাসুল (সঃ)-এর প্রেমে ৩-এর পাতায় দেখুন
সুফিবাদই শান্তির পথ
শেষ পৃষ্ঠার পর
মশগুল থাকতেন ও থাকেন। ওই সময়ে তিনি যখন ধ্যান-মোরাকাবা মোশাহাদা করতেন, তখন এমন জজ্বার হাল হত যে, দুনিয়ার কোন শক্তি ছিল না তাঁর জজ্বা বন্ধ করতে পারে।
একদিনের ঘটনা আনুমানিক ১৯৭৫-৭৬ সাল। বাবাজান হুজুর মাগরিবের নামাজ আদায় করে মোরাকাবায় বসার পর, এমন এক জজ্বার হাল উঠল যে, বহু চেষ্টা করেও কেউ তাঁর জজ্বা বন্ধ করতে পারলো না। বাবাজান ক্বেবলা আগেই একবার ইশারা দিয়েছিলেন যে, যখন আমার এমন হালত হবে তখন ডাক্তার, কবিরাজের ব্যবস্থা না করে আমার ওস্তাদ মাওলানা আবদুল আউয়াল সাহেবকে নিয়ে আসবেন। আমি অধম তখন বাবাজানের নানা বাড়িতে হাজী শাহজাহান সাহেবের ঘরে লজিং থাকি। বাবাজানের বাড়ি সেখান থেকে পায়ে হেঁটে দশ মিনিটের পথ। সত্যিই ওই দিন আমাকে ডাক দেয়ার পর তাড়াতাড়ি গিয়ে বাবাজানের শিয়রে বসে, করুণ সুরে ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহ্মানু, ইয়া রাহিম, ইয়া রাহ্মাতাল্লিল আলামিন বলে কয়েকবার ডাক দিলে পর দেখি, তিনি আস্তে আস্তে স্থির-শান্ত হয়ে গেলেন। এই রকম বহু ঘটনা বাবাজানের ছোটবেলায় ঘটেছে, যা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে এই অধমের। ওই সময় বাবাজান হুজুর দীর্ঘ তিন বছর, মাটি গর্ত করে (কবর-মোরাকাবা) মাটির নিচে আল্লাহতায়া’লার ধ্যানে মগ্ন ছিলেন।
বাবাজান হুজুর আল্লাহ ও রাসুল (সঃ)-কে রাজি-খুশি করার জন্য, দেশ-বিদেশের অসংখ্য অলি আউলিয়াগণের দরবার-মাজার শরীফে অবস্থান করেন এবং তাঁদের খাস দোয়া ও এত্তেহাদি তাওয়াজ্জ্বু অর্জন করেছেন। পাশাপাশি নিগুঢ়ভাবে জীবনের পুরোটা সময় ব্যয় করে চলেছেন কঠোর তপস্যায় ও মানুষের কল্যাণে। আমি তাঁর বাল্যকালের শিক্ষক ছিলাম বলে তাঁর বেড়ে ওঠা ও সাধনার প্রায় সবটাই আমার দৃষ্টিতে ভাসছে। এই যুগে আল্লাহ-রাসুলের এমন এক সাধক ও মানব প্রেমী অলি-মুর্শিদ সত্যিই বিরল। এমন সাধনা তো তিনিই করবেন, কারণ তিনি তো মোজাদ্দেদ তাঁকে দেখে অন্যরা শিখবে। যেমন শিখছেন দেশ-বিদেশে তাঁর লক্ষ লক্ষ সৌভাগ্যবান ভক্ত-আশেক জাকের ভাই-বোনেরা। বাবাজান হুজুরও আল্লাহ-রাসুল প্রেমী মানুষদের শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফতের অসীম জ্ঞানের শিক্ষা-তালিম দিচ্ছেন। যার মাধ্যমে অসংখ্য মানুষ তাঁদের অন্তরের ময়লা দূর করে শুদ্ধ আত্মার তৃপ্তি লাভ করছেন। তাইতো আশেকের মন কেঁদে বলে ওঠেÑ
পীর তো সামান্য নয়
তিনি নবীর নায়েব হয়
পাপীদের পার করতেÑ
বাবা হয়েছেন উদয়।
খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুরের তপস্যা ও গুণ-জ্ঞান সমন্ধে লিখতে গেলে আমার মত অধম লিখে শেষ করতে পারবো না।