ঈদুল আযহার কোরবানী : এক হৃদয় বিদারক ইতিহাস
আলহাজ মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ্ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী
(সুরা সাফফাত, আয়াত ১০২-১২)
১০২- ‘ফালাম্মা বালাগা মা’আহুস সাইয়া ক্বা-লা ইয়া বুনাইয়া ইন্নি আরা-ফিল মানা-মি আন্নী আয্-বাহুকা ফান্জুর মা-যা তারা ; ক্বা-লা ইয়া আবাতিফ্ আল্ মা-তু’মারু সাতাজিদুনী ইনশা আল্লা-হু মিনাস্ব স্ব-বিরীন’।
অর্থ: যখন সে সন্তান (ইসমাঈল) তার পিতার সাথে চলা-ফেরার মত বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহিম (আঃ) বললেন, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবেহ করছি। এখন তুমি ভাবিয়া দেখ, এ ব্যাপারে তোমার মতামত কি? সে (ইসমাঈল) বললেন, হে আমার আব্বা! আপনাকে যে ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেইভাবেই তাহা পালন করুন। আপনি আমাকে পাবেন ধৈর্য্যশীল হিসেবে, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন।
১০৩- ‘ফালাম্মা আসলামা-ওয়া তাল্লাহু লিলজ্বাবিন’।
অর্থ: যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রদর্শন করলেন এবং তিনি তাঁর পুত্রকে কাৎ করে শোয়াইলেন।
১০৪- ‘ওয়ানা দাইনা-হু আই ইয়া ইব্রাহিম’। অর্থ: তখন আমি (আল্লাহ) তাকে ডেকে বললাম, হে ইব্রাহিম!
১০৫- ‘ক্বাদ স্বাদ্দাক্বতার রু’ইয়া ইন্না-কাযা-লিকা নাজ্বযিল মুহ্িসনীন’। অর্থ: আপনি আপনার স্বপ্ন সত্যিকার ভাবেই বাস্তবায়ন করেছেন। এভাবেই আমি পূণ্যবানদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।
১০৬- ‘ইন্না হা-যা লাহুয়াল বালা-উল্ মুবীন’।
অর্থ: নিশ্চয়ই এটা ছিল একটি প্রকাশ্য পরীক্ষা।
১০৭- ‘ওয়া ফাদাইনা-হু বিযিব্হীন আজীম’।
অথ: এবং আমি তার জবেহর বিনিময়ে, বড় একটি জবেহর পশু দিয়ে দিলাম।
১০৮- ‘ওয়া তারাক-না আলাইহি ফিল আখিরীন’
অর্থ: তার উত্তম আলোচনা পরবর্তীদের মাঝেও জারি রেখেছি।
১০৯- ‘সালা-মুন্ আলা ইব্রাহিম’। অর্থ: সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক ইব্রাহিমের প্রতি।
১১০- ‘কাযা-লিকা নাজ্বযিল্ মুহসিনীন’।
অর্থ: আমি এভাবেই পূণ্যবানদের
২-এর পাতায় দেখুন
প্রথম পৃষ্ঠার পর
প্রতিদান দিয়ে থাকি।
১১১- ‘ইন্নাহু মিন্ ইবা-দিনাল মু’মিনীন’।
অর্থ: সে ছিল আমার মুমিন বান্দাদের মধ্য হতে।
১১২-ওয়া বাশ্শারনা-হু বিইসহা-কা নাবিয়্যাম মিনাস্ব স্বা-লিহীন’।
অর্থ: আমি তাকে সুসংবাদ দিয়েছিলাম ইসহাক সম্পর্কে, যিনি নবী হয়ে পূণ্যবানদের অর্ন্তভুক্ত হবেন।
বিস্তারিত ঘটনা
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) স্বপ্নে দেখলেন, কে যেন তাঁকে বলছেÑ ‘হে আল্লাহর দোস্ত! আপনি আল্লাহর রাস্তায় কোরবানী করুন। নবীর প্রতি স্বপ্ন আদেশ ওহির সমতুল্য। তাই হযরত ইব্রাহিম (আঃ) স্বপ্নে কোরবানীর আদেশ পেয়ে অস্থির হয়ে উঠলেন। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে তিনি দুম্বা উট কোরবানী করে দিলেন। দ্বিতীয় রাত্রে তিনি আবার স্বপ্ন দেখলেন, কেউ একজন তাঁকে বলছেন, ‘হে নবী আপনি আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করুন।
এবারেও নবী দুই‘শ উট কোরবানী করলেন। অত:পর তৃতীয় রাতেও তিনি একই স্বপ্ন দেখলেন। তৃতীয় বারেও তিনি দুই‘শ উট কোরবানী করলেন। চতুর্থ রাতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন, ‘কে যেন তাকে বলছেন, ‘হে আল্লাহর দোস্ত! আপনি আল্লাহর রাস্তায় আপনার প্রিয় বস্তু বা সন্তানকে কোরবানী করুন। এবারের স্বপ্ন দেখে তিনি বুঝতে পারলেন প্রিয় ব স্তু তার সন্তান হযরত ইসমাইল (আঃ)। সে সন্তান তার নির্বাসিত মাতার নিকট থাকে। নবী তাদের সঙ্গে তেমন সম্পর্ক পযর্ন্ত রাখেন না। এমতাবস্থায় এহেন এক চরম প্রত্যাদেশ কীভাবে তিনি কার্যকর করবেন, এ কথা ভেবে স্থির করলেন। ভোরবেলায় নবী তাঁর আর এক স্ত্রী সায়েরার নিকট তাঁর স্বপ্নের কথা আলোচনা করলেন। সায়েরা নবীকে অতি সত্ত্বর স্বপ্নের আদেশ কার্যকর করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করলেন।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মক্কার পথে রওয়ানা হলেন। সঙ্গে তিনি একখানা ছুরি ও কিছু রশি নিলেন। তিনি মক্কা পৌঁছে হাজেরা যেখানে অবস্থান করতেন, সেখানে গিয়ে বসলেন। সেখানে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে হাজেরাকে বললেন, তুমি ইসমাইলকে ভালো পোশাক পরিয়ে, আতর গোলাপ লাগিয়ে উত্তমরূপে সাজিয়ে দাও। ইসমাইলকে আমি এক জায়গায় নিয়ে যাব। অনেকদিন যোগাযোগ না থাকার পর পিতা পুত্রের নতুন করে গভীর সম্পর্ক হতে যাচ্ছে দেখে হাজেরা খুব খুশি হলেন এবং পুত্র ইসমাইলকে উত্তমরূপে সাজিয়ে দিলেন। হযরত ইসমাইল (আঃ) এর বয়স ছিল তখন তের/চৌদ্দ বছর। দেখতে ফুটফুটে সুন্দর।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) পুত্রকে নিয়ে রওয়ানা হলেন। ইতোমধ্যে শয়তান এসে বিবি হাজেরাকে বলল, তোমার পুত্র ইসমাইল কোথায়? সাজেরা বললেন, তার পিতার সঙ্গে এক জায়গায় গিয়েছে। শয়তান বলল, মিথ্যা কথা, তোমার স্বামী পুত্রকে কোরবানী করার জন্য আল্লাহতায়লার আদেশ পেয়েছেন। সে মর্মে ইসমাইলকে কোরবানী করার জন্য এক নির্জন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। বিবি হাজেরা মানুষ সুরতধারী শয়তানকে বললেন, যদি আল্লাহতায়লা কোরবানীর মাধ্যমে ইসমাইলকে কবুল করেন, তবে আলহাম্দুলিল্লাহ! এতে আমার উদ্বিগ্ন হবার কোন কারণ নেই। শয়তান যখন এখানে কোন সুবিধা করে উঠতে পারল না, তখন হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর নিকট গিয়ে পিছন থেকে ইসমাইল (আঃ)-কে বলল, ইসমাইল! তুমি কোথায় যাচ্ছ? ইসমাঈল (আঃ) বললেন, আমি পিতার সঙ্গে এক জায়গায় যাচ্ছি। শয়তান বলল, আল্লাহতায়ালার নির্দেশে তোমাকে কোরবানী করার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। একটু পরে তোমার গলায় ছুরি চালিয়ে আল্লাহর নামে কোরবানী করা হবে। হযরত ইসমাইল (আঃ) তখন বললেন, আল্লাহতায়ালা যদি আমার বাবার মাধ্যমে আমাকে কোরবানী করেন, তাহলে আমার জীবন ধন্য হবে। এতে আপত্তি করার কোন কারণ নেই। অত:পর তিনি পিতাকে সম্বোধন করে বললেন, হে পিতা! পিছন থেকে কে যেন বলছে, আপনি আমাকে কোরবানী করার জন্য নির্জন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। তখন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) বললেন, শয়তান তোমাকে প্রতারণা করছে। তুমি ওর প্রতি সাত খ- পাথর নিক্ষেপ কর। হযরত ইসমাইম (আঃ) পিতার আদেশ পেয়ে সাত খ- পাথর নিক্ষেপ করলেন। শয়তান দূরে সরে গেল। এই পাথর নিক্ষেপ হজ আদায়ের জন্য একটি জরুরী শর্ত ও ছুন্নাত হিসেবে গণ্য হয়েছে।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) মীনা নামক এক নির্জন স্থানে গিয়ে থামলেন এবং পুত্রকে বললেনÑ ‘হে প্রিয় পুত্র! আমি চার রাত ধরে স্বপ্নযোগে কোরবানী করার আদেশ পেয়ে আসছি। আমি সে পরিপ্রেক্ষিতে ছয়‘শ উট কোরবানী করেছি। শেষবারে আমার প্রিয় সন্তানকে কোরবানী করার আদেশ পেয়ে তোমাকে আল্লাহর নামে কোরবানী করার উদ্দেশ্যে এখানে নিয়ে এসেছি। হযরত ইসমাইল (আঃ) পিতার মুখে এ কথা শুনে বললেন, আলহাম্দুলিল্লাহ। আল্লাহতাআলার এরূপ নির্দেশ আমার জন্য সৌভাগ্যের দ্বার খুলে দিয়েছেন। আমাকে আল্লাহতায়লা কবুল করেছেন। এ জন্য আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আপনি এ কাজ সমাধার ক্ষেত্রে আমাকে ধৈর্যশীলদের অর্ন্তভূক্ত দেখতে পাবেন। আপনি আর বিলম্ব না করে আল্লাহতায়লার আদেশ অনুসারে কাজ আরম্ভ করুন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) বললেন, ইহা আমি কিভাবে সমাধা করব? ইসমাইল (আঃ) উত্তরে বললেন, প্রথমে আপনি আমার হাত পা বেঁধে নিন। এরপর আমাকে বিপরীত দিকে কাৎ করে শুইয়ে নিন। যেন আপনি সরাসরি আমার মুখম-ল না দেখতে পান। তারপরে আমার গলদেশে ছুরি চালনা করুন, এতে আপনি অবশ্যই কৃতকার্য হবেন। তৃতীয়ত আমার রক্তে ভেজা কাপড়গুলো আমার আম্মার হাতে পৌঁছে দিবেন। তিনি এগুলো দেখে আল্লাহর রেজামন্দির উপর খুশি থাকবেন। এবং আমার কথা স্মরণ করে কিছুটা স্বস্তি লাভ করবেন। কারণ, তাঁর আর কোন সন্তান নেই, যার দিকে তাকিয়ে তিনি স্বস্তি লাভ করতে পারেন।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) পুত্রের কথা অনুসারে আস্তিনের মধ্যে রক্ষিত রশিগুলো বের করে তা দিয়ে ইসমাইলের হাত পা বেঁধে নিলেন। অতএব তাকে কাৎ করে শুইয়ে নিলেন। তারপর আস্তিন থেকে ধারাল ছুরি বের করে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে ইসমাইলের গলদেশে ছুরি চালিয়ে দিলেন । কিন্তু তাঁর ছুরি চালনায় কোন কাজ হল না। ছুরি ইসমাইল (আঃ) এর গলদেশের চামড়ায় কোন ক্ষত সৃষ্টি করতে পারল না। তখন ইব্রাহিম (আঃ) আরও জোরে, শক্ত করে ছুরি চালাতে লাগলেন কিন্তু না , কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হল না। তখন ইসমাইল (আঃ) বললেন, পিতা আপনি ছুরির তীক্ষè মাথা টাগলার উপরে শক্তি দিয়ে চেপে ধরুন, তাহলে সম্ভবত আপনার উদ্দেশ্য সফল হবে। নবী এবার তাই করলেন কিন্তু ছুরির তীক্ষè মাথাও চামড়ার ভিতরে প্রবেশ করে না। তখন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) রাগ করে ছুরি দূরে নিক্ষেপ করিলেন। তখন ছুরি বলে উঠলÑ ‘হে ইব্রাহিম (আঃ) তুমি আমাকে ইসমাইলের গলা কাটার জন্য একবার বল কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিন আমাকে দশ বার বারণ করছেন। অতএব, তোমার কথার গুরুত্ব দিব? না আল্লাহতায়ালার কথার গুরুত্ব দিব? অতএব তুমি অন্য পন্থা গ্রহণ কর। হযরত ইসমাইল ও হযরত ইব্রাহিম (আঃ) উভয়ে ছুরির কথা শুনলেন। ইসমাইল (আঃ) তখন পিতাকে বললেনÑ ‘হে প্রিয় পিতা! সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে জবেহ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এ কাজ হয়ত আল্লাহতায়লা পছন্দ করছেন না। অতএব আপনি কাপড় দিয়ে আপনার চোখ দুটি বেঁধে নিন, যাতে আমার চেহারা আপনি দেখতে না পান। তখন আপনার চেষ্টা অবশ্যই কাজে আসবে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ইসমাইল (আঃ)-এর পরার্মশ অনুসারে, নিজ চক্ষু দুটি বেঁধে নিলেন এবং পূর্বে মত ইসমাইলকে কাৎ করে শুইয়ে দিলেন অত:পর বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে ছুরি চালালেন। এবার ছুরি সহজে চলল। কলকল রবে রক্ত প্রবাহিত হয়ে জবেহর কার্য সমাধা হল।
আল্লাহতায়লা তাঁর নবীর শেষ পরীক্ষার সফলতা দেখে সন্তুষ্ট হলেন। যার পরিণামে আল্লাহতায়লা জিব্রাইল (আঃ) মারফত বেহেশত থেকে আনা এক দুম্বাকে জবেহর মুহূর্তে ইসমাইল (আঃ)-এর স্থলে শুইয়ে দিয়ে ইসমাইল (আঃ)-কে একটু দূরত্বে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। যার সামান্য লেশমাত্র বোঝা নবীর পক্ষে সম্বব হয় নি। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) জবেহর কাজ সুষ্টুভাবে সম্পন্ন হয়েছে ভেবে, আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করলেন এবং চোখের কাপড় খুলে ফেলেন। তখন তিনি যা দেখলেন তা তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাই তিনি একবার চোখ দুটি হাত দিয়ে মুছে চতুর্দিকে তাকালেন। বাস্তব দৃশ্য ভালোভাবে দেখে তিনি ক্ষণিক নিস্তদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। হযরত ইসমাইল (আঃ) ও নির্বাক, তিনি পিতার দিকে তাকিয়ে রইলেন। ক্ষণিক পরে পিতা পুত্রের কাছে গিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন এবং দু’চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে পাঠ করলেনÑ সোবহানাকা আল্লাহুম্মা। অত:পর পিতা ও পুত্র একত্রিত হয়ে শোকরানা নামাজ আদয়ের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন।
এ মুহূর্তে হযরত জিব্রাইল (আঃ) সেখানে অবতীর্ণ হলেন। তিনি সজোরে উচ্চারণ করছিলেন। আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’। অত:পর তিনি হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর নিকট এসে বললেÑ ‘হে আল্লাহর দোস্ত! আল্লাহ আপনাকে সালাম প্রেরণ করেছেন। আল্লাহতায়লা নবীকে লক্ষ্য করে আরো বলেছেনÑ ‘হে ইব্রাহিম! তুমি আল্লাহতায়ালার উদ্দেশে তোমার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছ। নিঃসন্দেহে এটা ছিল একটা মহাপরীক্ষা। আমি এভাবে আমার সৎ ও উদার বান্দাদরে পুরস্কৃত করে থাকি। আমি সন্তান কোরবানীর ক্ষেত্র বদল করে পশু কোরবানী দ্বারা পুরস্কৃত করেছি। এক্ষেত্রে আরো যা দিবার তা পরকালের জন্য রইল। আমি আমার সৎ, নিষ্ঠাবান বান্দাদের পুরস্কার দিয়ে থাকি। ইব্রাহিম (আঃ) আমার ঈমানদার, কৃতজাত বান্দাদের অন্যতম থাকবেন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহতায়ালার প্রেরিত সুসংবাদ শুনে অত্যন্ত খুশি হলেন এবং তাঁর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলেন। অত:পর তিনি ইসমাইল (আঃ)-কে নিয়ে বিবি হাজেরার নিকট চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে হাজেরাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। হাজেরা তখন আল্লাহতায়ালার শুকরিয়া আদায় করলেন।
হে সম্মানীত পাঠকগণ! সূরা আল সাফফাত-১০২-১২ নং আয়াত পর্যালোচনা করে দেখা গেল, আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় বৃদ্ধ বয়সের নয়নের মণি একমাত্র ইসমাইল (আঃ)-কে তার মাসহ মক্কায় নির্জন ভূমিতে নির্বাসনে দিয়ে আসতে তার হৃদয় টলেনি। অবশেষে ঐ সন্তানকে (জবেহ) কোরবানী করার মত কঠিনতম কাজ করতে তাঁর হাত কেঁপে উঠেনি। এ কারণে মহান আল্লাহতায়ালা সকল পরীক্ষা নেওয়ার পরও ইব্রাহিম (আঃ)-কে, ইব্রাহিম খলিলুল্লা, আবুল আম্বিয়া, আবুল আরব, মিল্লাতে ইব্রাহিম (জাতির পিতা) ইত্যাদি ইত্যাদি লকব দান করেন। যার কারণে আমরা ঈদুল আযহায় পশু কোরবানী করি, যে সব পশু কোরবানীর যোগ্য, তা হল উট, দুম্বা, গরু, মহিষ, ভেড়া, বকরি। মূলত এ কোরবানীর বিধানটি ইসমাইল (আঃ) থেকে চলে আসছে। মানব জাতির দেহের ভিতর যে সমস্ত রিয়া, অহংকার,তাকাব্বরী, ক্রোধ-মোহ, হিংসা, ধৈয্যহীনতা, নিন্দা-গীবত, আত্ম-অহমিকা, ধন-সম্পদের বাহাদুরী, অন্যায়-অবিচার, অন্যের হক নষ্ট করা, পরশ্রী কাতরতা, লোভ-লালসা এ সমস্ত খারাপ দোষ দূরীভূত করে কেউ যদি কোরবানী করে, তার কোরবানী আল্লাহতায়ালা কবুল করেন।
হে পাঠকগণ! যাদের ওপর কোরবানী ওয়াজিব হয়েছে, তারা কোরবানী করার পর গোস্ত আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, গরিব-দুখি ও মিসকিনদের ভিতর সঠিকভাবে বন্টন করুন। জিলহজ মাসের চাঁদের তৃতীয় দিন ১০, ১১ ও ১২ পর্যন্ত কোরবানী করার বিধান আছে।