‘হুজুরকেবলার নূরের তাজাল্লি আমাকে বারবার টানে…’

মক্কাশরীফ থেকে কুতুববাগে…

 

মোহাম্মদ সাঈফ এইচ আল ইয়ামেনি

পবিত্র মক্কা নগরীর এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর নাম মোহাম্মদ সাঈফ এইচ আল ইয়ামেনি। ইয়েমেনি মা এবং আরব পিতার এই সফল সন্তান আধুনিক ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত এক অসাধারণ সজ্জন। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের (সঃ) প্রতি গভীর অনুরাগী জনাব সাঈফ সূফি-সাধকদের প্রতিও গভীর আস্থাশীল। আমাদের দরদী মুর্শিদ একুশ শতকের আধ্যাত্মিক মহা-সাধক খাজাবাবা আলহাজ মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ নকশবন্দি-মোজাদ্দেদি কুতুববাগী হুজুর কেবলাজানের মহব্বতের টানে আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি মক্কা থেকে ছুটে এসেছিলেন ঢাকায়। মুর্শিদকেবলার ঘনিষ্ট সোহবতে কয়েকটি দিন কাটিয়ে পরম প্রশান্তি নিয়ে ফিরে গেছেন তিনি। কুতুববাগ দরবার শরীফের জাকের ভাইদের সঙ্গে ওইদিন সাপ্তাহিক গুরুরাত্রি পালন করতে গিয়ে গত ২৫ আগস্ট রাতে তিনি যে অনুভূতি প্রকাশ করেন, আরবি ভাষায় থেকে তা অনুবাদ করা হয় কথা বলার সময়েই। সেই অনূদিত বক্তব্যের রেকর্ড থেকে এই লেখা।

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আমি সুদূর মক্কা থেকে আপনাদের মাঝে এসেছি শুধুমাত্র হুজুর কেবলার মহব্বতে। আজ থেকে সতেরো বছর আগে আরো একবার তাঁর সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়েছিল, তাঁরই একজন আশেক সাবেক এম.পি মরহুম নাসিম ওসমান সাহেবের সাথে। হুজুরকেবলা তখন তাঁর নারায়ণগঞ্জ, বন্দর কুতুববাগ খানকা শরীফে অবস্থান করতেন। ওঁনাকে প্রথম দেখেই তাঁর প্রতি আমার ভক্তি-শ্রদ্ধা অনুভব হলো। আর আমার দৃষ্টি যে নূরের জ্যোতি দেখতে পেল এমন জ্যোতি আমার দৃষ্টি কখনো দেখেনি। ঐশ^রীক নূরে নূরান্বিত একজন কামেল মানুষ দেখলাম। ওঁনাকে দেখলে আমি শান্তি পাই। তাঁর চেহারা মোবারকের যে নূর সে নূরের তাজাল্লি আমাকে বারবার টানে, তা আমি অনুভব করতে পারি এবং তাছাব্বুরে শায়েখ অর্থাৎ তাঁর চেহারা মোবারকের ধ্যান করি। মক্কা শরীফ থেকে ঢাকা বেশ দূরের পথ। সব সময় আসা সম্ভব না। যারা আসছেন তারা অবশ্যই অনেক সৌভাগ্যবান। আপনারা সব সময় আসবেন এবং তাঁর নির্দেশনা-হুকুম মেনে চলবেন, তাঁর হুকুম মানলেই নবীজির (সঃ)এর হুকুম মানা হবে এবং আল্লাহু সুবহানুতায়ালার পথে চলতে পারবেন। তিনি কামেল-মোকাম্মেল আল্লাহু সোবহানুতায়ালার খাস-বন্ধু, তাঁর সাথে আমার প্রথম সাক্ষাতের পর থেকেই আমি তাঁকে ভালোবাসি, উঁনিও আমাকে অতি ভালোবাসেন। তাঁর সান্নিধ্যে আসলে আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি আপনাদের ঈমান শক্ত হবে। আপনাদের কোন ভয় নাই। আপনারা জান্নাতি হবেন। নামাজ কায়েম করবেন, নামাজ আল্লাহু সোবহানুতায়ালার কাজ। আল্লাহু সোবহানুতায়ালা জ্বীন এবং ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীর জন্য। আল্লাহু সোবহানুতায়ালাই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং সকলের জন্য রিজিকদাতা। তিনিই সবকিছুর অধিকারী। আমরা যে নিদ্রা যাই আবার জেগে উঠি, এ সবকিছুই আল্লাহু সোবহানুতায়ালার হুকুমে হয়ে থাকে। আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই এবং তিনিই সমস্ত কিছুর মালিক। সবাইকে একদিন কবরের দেশে যেতে হবে এবং এ কথা যেন আমরা কেউ কখনো না ভুলি। আমাদের সঙ্গে দুইজন ফেরেশতা ‘কেরাবিন-কাতেবিন’ আছেন, তারাই সমস্ত আমলের হিসাব লিপিবদ্ধ করে রাখছেন, কিয়ামতের দিন যার উছিলায় পুলসিরাত পার হবেন সে বিষয়ে আপনাদের ভাবতে হবে। জামানার কামেলপীর, মাশায়েখদের ছোহবত লাভ করতে হবে, এ কথা পবিত্র কোরআনুল কারীমে উল্লেখ আছে, আপনারা সন্ধান করুন। আল্লাহু সোবহানুতায়ালাই সমস্ত ইবাদত ও ভালো-মন্দের মালিক এবং তিনিই সঠিক বিচারক-সবজান্তা। তাঁকে আমাদের ভালোবাসতে হবে এবং আল্লাহর প্রতি মহব্বত সৃষ্টি করতে বলেছেন। জমানার কামেলপীর- মাশায়েখ-ওস্তাদদের দিক-নির্দেশনা নিয়ে পথ চলতে হবে।
আল্লাহর জন্য কার অন্তরে কতটুকু মহব্বত আল্লাহু সোবহানুতায়ালাই ভালো জানেন। জামানায় নবী-রাসুল থেকে শুরু করে বর্তমানে পীর-মাশায়েখদের অনুসরণ করেই আমাদেরকে পথ চলতে হবে। আলিমুল গাইবের মালিক একমাত্র আল্লাহ। মানুষের অন্তর বা কলবের ভিতরেই আল্লাহু সোবহানুতায়ালা থাকেন। সেখানে ধ্যানের মাধ্যমে আল্লাহ সোবহানুতায়ালাকে খুব গভীরভাবে সন্ধান করতে হবে। সন্ধান করলে তাঁকে পাওয়া যায় এবং শুধু মুত্তাকিনকেই আল্লাহ ভালোবাসেন। আমরা যদি আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী পীর-মাশায়েখদের পথে চলি, তবে এর পুরস্কার হিসাবে আমাদেরকে জান্নত দান করবেন এবং জান্নাতে সত্তরটি হুর এবং সত্তরটি গেলমান দিবেন। মুত্তাকিনদেরকে আল্লাহতায়ালা বিদ্যুৎ চমকের চেয়েও কম সময়ের মধ্যে জান্নাতে পৌঁছে দিবেন।
মুত্তাকিন হতে গেলে সাধনার দরকার হবে এবং সে সাধনা একা একা হবে না, কামেল ওস্তাদের দীক্ষা নিতে হবে। যাদের কানে আল্লাহ সোবহানুতায়ালার আদেশ-নিষেধ পৌঁছায় তারাই জান্নাতে যেতে পারবেন। এ সময়ে যদি কামেলপীর-মাশায়েখদের হুকুমের বাইরে কিছু করেন, সত্যি বলছি, তবে আল্লাহর দিদার থেকে বঞ্চিত হবেন। আল্লাহ সোবহানুতায়ালা যেন আমাদেরকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করে উজ্জল তারকার মত রাখেন এবং আমাদের অন্তর নবী-রাসুল ও কামেলপীর মাশায়েখদের অন্তরের সাথে মিশিয়ে পবিত্র করে দেন। আল্লাহতায়ালা যেন এই দরবার শরীফকে কিয়ামত পর্যন্ত কবুল করেন। আমরা যারা আজ এই পবিত্র দরবার শরীফের জাকের মজলিসে উপস্থিত হতে পেরেছি, সবাইকে যেন আল্লাহ কবুল করেন। আমাকে-আপনাকে যেন হেদায়েত দান করেন। আমরা যেন কেউ কারো প্রতি জুলুম না করি। কেউ মদ-শরাব পান না করি। জিনা না করি। আমাদের স্ত্রী ও সন্তনদের যেন কবুল করেন এবং অন্তরে সর্বদা থাকেন, সমস্ত আমল যেন কবুল করেন। পৃথিবীর সমস্ত মুসলমান ভাই-বোনদের যেন হেদায়েত দান করেন এবং এ পবিত্র দরবারে জাকের মজলিসের সবাইকে যেন একই রশি দ্বারা বেঁধে দেন। আমরা যেন দ্বীন-ইসলামের খেদমত করতে পারি এবং এ খেদমত যেন রাসুল (সঃ)এর খেদমতের সাথে কবুল করেন। আমরা যেন আল্লাহ এবং রাসুল (সঃ)কে ভুলে না যাই এবং অন্তর থেকে রাসুল (সঃ)কে ভালোবাসি। কামেলপীর-মাশায়েখদের ভালোবাসি। আমরা যেন কোরআন ও সহি হাদিসের অনুসরণ করি। আমাদের অন্তরের নিয়ত যেন হয় একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য। এর মাধ্যমেই আমাদের ওপর রহমত দান করবেন। আল্লাহতায়ালা সমস্ত নিয়ামত দান করেছেন এর জন্য আমরা শুকরিয়া আদায় করি। আর যারা অসুস্থ আছেন তাদের সুস্থতা দানের জন্য দোয়া করি।
হুজুরকেবলা আমাদের যে আমল শিক্ষা দিচ্ছেন তা যেন পালন করতে পারি। আল্লাহ যেন আমাদেরকে সুরা ফাতিহার কথা অনুযায়ী ইহ্দ্বীনাস ছিরাত্বয়াল মুস্তাকিমের পথে চলার তাউফিক দান করেন। আল্লাহতায়ালা আয়তুল কুরসী আয়াত নাজিল করে বলেছেন, সমস্ত পাওয়ার বা শক্তি একমাত্র তাঁর। আমরা ইসলামের যে সূফীবাদের মধ্যে প্রবেশ করেছি, কোন শয়তান যেন আমাদেরকে সেখান থেকে বের করতে না পারে। আর আল্লাহতায়ালা যাকে হেদায়েত করেন, সে ব্যতিত অন্য কেউ হেদায়েত হতে পারে না। আমি এ মজলিসের সবাইকে খুব ভালোবাসি, আপনারাও আমাকে ভালোবাসবেন এবং আমাকে ভুলবেন না, আমিও আপনাদেরকে ভুলবো না। দ্বীন ইসলাম ও সুফীবাদের আলো যেন আরো উজ্জলভাবে জ¦লে এবং সবার অন্তরাত্মা যেন প্রশান্তি লাভ করে। আপনারা সর্বদা জিকির করবেন। ধ্যানের মাধ্যমে তাছাব্বুরে শায়েখ লাভ করার চেষ্টা করবেন। আল্লাহর কিতাব ও রাসুল (সঃ)কে আমাদের মাঝে পাঠিয়েছেন একমাত্র লিল্লাহ হিসাবে এবং তাঁর প্রতি ঈমান আনার জন্য। সারা পৃথিবীতে যত বড় বড় পীরে কামেল আছেন, তাঁদের কথা মত যেন আমরা চলতে পারি, সে জন্য আল্লাহর কাছে দয়া চাই। অলি-আউলিয়াগণ শুধু আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতেই কাটিয়ে থাকেন। তাঁদের দুনিয়া এবং আখেরাতে কোন ভয় নাই এবং তাঁরা চিন্তাযুক্তও হবেন না। আল্লাহ কামেল অলিদের দোয়া কবুল করেন। যাদের অন্তর আল্লাহর অলিদের সাথে মিশে গেছে আল্লাহ তাদেরকে কবুল করে নিয়েছেন। জুমার রাত অনেক বরকতপূর্ণ রাত। এ রাতে যেন আমাদের সবাইকে কবুল করে নেন। আল্লাহ যেন সবাইকে হেদায়েত দান করেন এবং হুজুরকেবলার উছিলায় আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমরা যেন কাল হাশরের দিন এক সঙ্গে থাকতে পারি, আমিন।

(Visited 302 times, 1 visits today)
Share