শান্তির জন্য সুফিবাদ

খালেদ ফারুকী আল মোজাদ্দেদী

ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই ধর্মে উগ্রবাদের কোনও স্থান নেই। জীবন জীবিকার সঙ্গে ধর্ম যে কীভাবে সম্পর্কিত, তা কেবল ইসলাম মনেপ্রাণে অনুসরণকারীরাই বুঝতে পারেন। এর অন্যতম আকর্ষণীয় দিকটি হলো সুফিবাদ। ধর্মের এই মরমী দিকটি কালেকালে যুগে যুগে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষ শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকল মানুষকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেছে। এই জমানায় বাংলাদেশে সুফিবাদের চর্চা মূলত এগিয়ে চলছে খাজাবাবা কুতুববাগীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।

সুফিবাদের সরল সোজা যে দিকটি খাজাবাবা শিক্ষা দিয়ে থাকেন, তার মর্মবাণী হলো আত্মঅনুসন্ধান। মানুষ নিজেকে না চিনলে আল্লাহতায়ালাকে যেমন চিনতে পারবে না, তেমনি নিজের পেছনে লেগে নিজেকে ঠিক না করলে অন্ধের হাতি দর্শনের মতো জীবন পার হয়ে গেলেও ইসলামের মর্মমূলে পৌঁছাতে পারবে না। সারাজীবনের সকল চেষ্টা হবে ব্যর্থ।
খাজাবাবা কুতুববাগী নিরবচ্ছিন্ন সাধনারত এক মহাপুরুষ, যার শিক্ষা যে কোনো ধর্মের মানুষ বিবেচনায় নিতে বাধ্য হবেন। কুতুববাগ দরবার শরিফে সুফিবাদ চর্চার যে কেন্দ্র তিনি গড়ে তুলছেন, একদিন তা সারাবিশ্বের অনন্য উদাহরণ হিসাবে বিবেচ্য হবে। তার শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষ আত্মঅনুসন্ধানে ব্যপৃত হলে সমাজের ছোটবড় অনেক অসাম্যই দূর হবে। তিনি বলেন, সূফিবাদই শান্তির পথ। ঝাঞ্জাবিক্ষুব্ধ দুনিয়ায় এই বাণী ব্যাপকভাবে প্রচার হলে শান্তির ছায়াতলে চলে আসবে এই পৃথিবী।
খাজাবাবা কুতুববাগীর জীবন চরিত্র অনুসরণ করলে ইসলামের শান্তিময় মরমী দিকটি ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, পরনিন্দা-পরচর্চা থেকে বিরত থেকে নিজেকে শোধরাণের কাজটি সবচে গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের প্রতিটি পরতে তার নির্দেশ একদিকে যেমন ইসলামের বর্ণ-গন্ধ-ছন্দ-গীতি অনুসরণের আবশ্যকতা তুলে ধরে, তেমনি ইসলামকে সার্বজনীন ধর্ম হিসাবে প্রতিপন্ন করে বিবেকবান যে কোনো নারী-পুরুষের কাছে।
তিনি শরিয়তের ছোটবড়ো সকল অনুশাসন পালনের ওপর গুরুত্ব দেন। এখানে কোনো ছাড় বা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে তিনি সতর্কবাণী দেন। আর এগুলো পালনের জন্য অহিংস পথ অনুসরণের যে শিক্ষা খাজাবাবা দেন, তার তুলনা কেবল তিনিই, অন্য কেউ নন। তাঁর অমিয়বাণীগুলো বিদগ্ধ প্রাজ্ঞজনকে ক্ষণকাল না ভাবিয়ে পারে না। আর সেই বানী অনুসরণ করলে সকল ধর্মের মানুষই উপকৃত হবেন। আত্মার আলো’র প্রতিটি সংখ্যায় খাজাবাবা ধর্মীয় যে দলিল উপস্থাপন করছেন, তা এই জমানায় অদ্বিতীয়। খাজাবাবার প্রতিটি লেখা শরিয়তের ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো, যার তত্ত্বতালাশে পৌঁছা যায় মারেফতের নিগুঢ় সত্য অনুসন্ধানের দ্বারপ্রান্তে।
খাজাবাবার শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে লাখ-লাখ আশেক-জাকের ভক্ত-মুরিদ বছরের নির্দিষ্ট সময়ে যে ওরশে সমবেত হন, সেখানেও ফুটে ওঠে ইসলাম চর্চার মরমী দিক সুফিবাদ। লাখ লাখ লোকের সমাবেশ শহরের যে কোনো

প্রান্তেই হট্টগোল সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু কুতুববাগ দরবার শরিফের ওরছ- তা রাজধানীর ফার্মগেটের আনোয়ারা উদ্যানেই হোক, নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন কুতুববাগ খানকা শরীফেই হোক অথবা মময়নসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার কানিহারি ইউনিয়নের আহাম্মদ বাড়ি (সেনবাড়ি) হোক, সব জায়গায় লাখ-লাখ ভক্ত-আশেকের শৃঙ্খলা রক্ষার যে নজীর, তা অতুলনীয়। সেখানে প্রশ্ন দেখা দেবে, কোন গুরুর শিষ্য তারা? এ প্রশ্নের সমাধানও রয়েছে ওই মহাপবিত্র ওরছেই, তারা খাজাবাবার অনুসারী, যারা নিরবে-নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন ইসলামের মরমী দিকটিকে পাথেয় করে। আমি দেখছি এ দরবারে এক পক্ষ দিচ্ছে, আরেক পক্ষ তা বণ্টন করে দিচ্ছে, নেই কোনো হট্টগোল। শরিয়তকে পূর্ণজ্ঞানে সামনে রেখে- এর ছোটবড় সকল অনুসাশনকে পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করে ইসলামের শান্তির দিকটি নিরবচ্ছিন্নভাবে চর্চা করছেন খাজাবাবা কুতুববাগী, আপন আশেক-ভক্ত-মুরিদ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে। জয় হোক খাজাবাবার চেষ্টা, সফল হোক সুফিবাদ, শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক পৃথিবীতে।
লেখক : সাংবাদিক ও খাদেম, কুতুববাগ দরবার শরীফ

(Visited 230 times, 1 visits today)
Share