আলহাজ মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ্ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী
যাকাত আদায়ের ব্যাপারে কোরআন শরীফে সূরা তওবা’র ৬০ নং আয়াতে আলাহতায়ালা বলেন, ‘ইন্নামা সদাকাতু লিল ফুকারায়ি ওয়াল মাসাকিনি ওয়াল আমিলিনা আলাইহা ওয়াল মোয়াল্লাহ ফাতি কুলুবুহুম ওয়া ফির রেকাবি ওয়াল গারিমিনা ওয়া ফি সাবিলিল্লাহি ওয়াব নিস সাবিল ফারিদাতাম মিনালাহি ওয়াল্লাহু আলিমুন হাকিম।
অর্থ : সদকা যাকাত কেবল দরিদ্র-নিঃস্ব যাকাত আদায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী এবং যাকে মন আকৃষ্ট করা প্রয়োজন তাদের জন্য। অর্থাৎ নতুন মুসলিম হয় এ রকম ব্যক্তি এবং দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, মুসাফিরদের জন্য, মুজলুম ও মিসকিনদের মধ্যে যাকাত বিতরণ করতে হবে।
ইসলামের পাঁচটি বেনা বা স্তম্ভের মধ্যে যাকাত একটি স্তম্ভ বা ফরজ।
সূরা তাওবাহ্, ৩৪ নং আয়াতে যাকাত সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ওয়াল্লাযিনা ইয়াকনিজুনায যাহাবা ওয়াল ফিদ্বদ্বাতা ওয়ালা ইয়ুনফিকুনাহা ফী সাবীলিল্লাহী ফাবাশ্ শিরহুম বি-আযাবিন আলিম’।অর্থ : আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যায় করে না, তাদের জন্য যন্ত্রণাময় শাস্তির ব্যবস্থা রহিয়াছে’।
(৩৫) ‘ইয়াওমা ইয়ুহ্মা আলাহা ফী-নারি জাহান্নামা ফাতুক ওয়া বিহা জ্বিবাহুহুম ওয়া জুনুবুহুম ওয়া জুহুরুম হা-যা মা কানাসতুম লি আমফুসিকুম ফাযুকু মা ওয়া কুনতুম তাকনিযুম’।অর্থ : সে জমাকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যগুলো জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা দাগ দেয়া হবে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে এবং পৃষ্ঠদেশে। তাদেরকে সেদিন বলা হবে, এটা তা-ই যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, এখন উপভোগ কর তা, যা তোমরা সঞ্চয় করে রেখেছিলে’।
সূরা তওবা ১৮ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ইন্নামা ইয়া’মুরু মাসা-জ্বিদাল্লা-হি মান আমানা বিল্লাহি ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি ওয়া আক্বামাস সালাতা ওয়া আ-তায যাকাতা ওয়া লাম ইয়াখ্সা ইল্লাল্লাহা ফা-আসা উলা-ইকা আই ইয়াকুনূ মিনাল মূহতাদীন।’ অর্থ: আল্লাহর মসজিদগুলো আবাদ করবে তারা, যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর ও পরকালের উপর এবং সালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না, আশা করা যায় এ সব লোকই সঠিক পথপ্রাপ্ত হবে।
হাদিস শরীফে উল্লেখ রয়েছে, ‘ওয়া ক্বালান নাবিয়্যু (সঃ) আতাহুল্লাহু মালান ফালান ইউয়াদ্দি যাকাতা মুছসিলু লাহু মানহু ইয়ামাল কিয়ামাতি শুজায়ান আকরা যাবিবাতানি ইউ তাব্বিকুহু ইয়াওমাল কিয়ামা ছুম্মা ইয়া খুজু বি লিহযি মাতায়হি ছুম্মা ইয়া কুলু আনা মালুকা ওয়া কানযুক। (বোখারী)
অর্থ: রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলিয়াছেন, আল্লাহ যাকে ধন দিয়াছে, সে যদি উহার যাকাত আদায় না করে, তবে কিয়ামতে তাহার ধনকে নেড়েসাপে পরিণত করা হবে। উহার দু’চক্ষুর উপরিভাগে দুটি হলদে দাগ থাকিবে, ঐ সাপ উহার মালিকের গলদেশ জড়াইয়া ধরিবে ও দুই গ- ধরিয়া বলিবে, আমি তোমার গোলায় আবদ্ধ সেই ধন সম্পদ (বুখারী শরীফ)।
হাদিস ‘ওয়াক্বালা আলাই হিস সালাম মা তালিফা মালুন ফি বাররিন ওয়ালা বাহরিন ইল্লা বি হাবসিয যাকাত (তিবরানী)।
অর্থ- হুজুর (সঃ) বলেন, জলভাগে ও স্থলভাগে মানুষের যে ধন দৌলত বিনষ্ট হয়, তাহা শুধু যাকাত বন্ধ করার কারণে হইয়া থাকে। (তিবরানী)
হাদিস- ‘ওয়া আনহু আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম মা মানা-আ কাওমুনিস যাকাতা ইল্লা হাবা সালাহু আনহুমুল মাতার (তিবরানী)
অর্থ: নবী করিম (সঃ) বলেন, কোন সম্প্রদায় যাকাত বন্ধ করিলে আল্লাহ বৃষ্টি বন্ধ করিয়া তাহাদেরকে শাস্তি দিয়া থাকেন। (তিবরানী)
হাদিস,‘ওয়া ক্বাদ জা-য়া ফিল হাদিস মানিস তাফাদা মালান ফালা যাকাতা ফি হাত্তা ইয়া হুলা আলাইহিল হাওলু।অর্থ- হাদিসে আছে, খাটানো ধনদৌলতের উপর যাকাত ফরজ হয় তখনই, যখন উহা এক বৎসর খাটে। (তিরমিযি)।
সারা বৎসর কাজ কর্ম করে আয়ব্যায় শেষে যার কাছে ৫২, ৫০০ (বায়ান্ন হাজার পাঁচশত) টাকা থাকবে তার জন্য যাকাত ফরজ হবে। সে যদি যাকাত না দেয় তাহলে গরিবের হক তার সম্পদে থেকে যাবে। সে যাকাতের পরিমাণ ২. ৫% (শতকরা আড়াই টাকা)। সে যাকাত না দেওয়ার কারণে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করিবে।