রেবেকা সুলতানা রোজী
পরম করুণাময় আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে আজ আমার কুঁড়েঘরে চাঁদের আলো। পথহারা মানুষ আমি পেয়েছি পথের সন্ধান। অন্ধ চোখে ফিরে পেয়েছি দৃষ্টি। কুঁড়েঘর হচ্ছে আমার অন্তর। চাঁদ আমার দয়াল মুর্শিদ এবং চাঁদের আলো আমার দয়াল মুর্শিদের ফয়েজ।
আমার দরদি পীর দস্তগীর আরেফে কামেল, মুর্শিদে মোকাম্মেল, মোজাদ্দেদে জামান শাহসুফি আলহাজ্ব মাওলানা খাজাবাবা সৈয়দ হযরত জাকির শাহ্ নকশ্বন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী (মা: জি: আ:) ক্বেবলাজানে কাছে বাইয়াত গ্রহণ করার পর, আমার জীবনের অসীম পরিবর্তন হয়েছে। ভয়াবহ সিডর এর মত ঝড় মানুষের জীবনেও এসে জীবনকে তছনছ করে দিয়ে যায়। তেমনি আমার জীবনটা তছনছ হয়ে গিয়েছিল। আজ আল্লাহর অশেষ দয়া ও রহমতের বরকতে আমি বাবাজানকে পেয়ে আমার অন্ধকার জীবন বাবাজানের নূরের আলোয় আলোকিত। বাবাজানের তরফ থেকে যে বরকত ও ফয়েজ আমার অন্তর হাসিল হয়েছে, আজ আমি তার কিছু প্রকাশ না করে পারছি না। বাবাজানের কথা বলতে গেলেই অঝোরে দুই চোখে বৃষ্টি ঝরে। ছোট শিশুর মত কান্নায় বুক ভেসে যায়। মাঝে মাঝে কান্না করতে করতে অস্থির হয়ে যাই। তখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরি এবং দেখি বাবাজান এসে আমাকে ডেকে বলেনÑ মা, আমি আপনার জন্য সব সময় দোয়া করি এবার শান্ত হোন মা।’ সঙ্গে সঙ্গে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভাঙ্গার পর এমন এক আর্শ্চায্য অনুভূতিতে ভরে ওঠে মন, বলে বা লিখে বোঝাতে পারব না। এক কথায় সে যেন এক ঐশ্বরীক অনুভূতি। আর তাকিয়ে দেখলাম, যে স্থানে বাবাজান ক্বেবলা দাঁড়িয়ে আমাকে মা বলে ডাকলেন সেই স্থান থেকে এমন সুন্দর একটা আতরের সুগন্ধ বিরাজ করে আমার ঘরময় তথা অন্তর সেই বেহেশতি সুগন্ধে বিমোহিত হয়ে আছে। তখন আমি, আমার স্বামীকে বলি দেখ, কী সুন্দর আতরের সুগন্ধ! আমার স্বামীও সেই বেহেশতি আতরের সুঘ্রাণ পেয়ে বললেন, সত্যি তো!
মুর্শিদের সঙ্গে মুরিদের এ সর্ম্পক দুনিয়াবী কোন সর্ম্পক নয়। এযে কী মায়া! কী প্রেম ভালোবাসা! যে এই প্রেম সুধা পান করেছে, শুধু সে-ই পেয়েছে এর স্বাদ। যে দিন থেকে বাবাজানকে পেয়েছি, সেই দিন থেকে পেয়েছি জীবনের পূর্ণতা। আগে হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করতে পারতাম না। দুনিয়াবি বিভিন্ন চিন্তা এসে জড়ো হতো। তখন নামাজে আর একাগ্রতা ধরে রাখতে পারতাম না। আর এখন বাবাজানের দোয়ার বরকতে হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করার তাওফিক মহান আল্লাহতায়া’লা দান করেছেন। এখন ইবাদতের স্বাদ উপলব্ধি করতে পারছি। বাবাজানের উছিলায় আমি, আমার অন্ধ চোখে (অন্তরের চোখে) দৃষ্টি পেয়েছি। অন্তরে পেয়েছি পরম শান্তির ছোঁয়া। এই দুনিয়ার মায়াজালে পড়ে যে দু:খ-কষ্ট পেয়েছি, আজ সবকিছু ভুলে এক আল্লাহর ইবাদত ও জিকিরে মনপ্রাণ হয়েছে উত্তাল সাগর। বাবাজানের কাছে বাইয়াত নিয়ে তাঁর শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করার পর থেকে নামাজে, মোরাকাবায় অনেক পরিবর্তন অনুভব করতে পারছি। আমি যখন নামাজ পড়ি, তখন আমার ধ্যান এক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর দিকে এমনভাবে অগ্রসর হয়, যেন আল্লাহ আমার সামনে এবং এতো কাছে মনে হয় যেন আমি আল্লাহর আরশে রূহানি কদমে সিজদা করছি। আর যখন দরূদ শরীফ পাঠ করি, তখন চোখ বন্ধ করলেই আমার পিয়ারা নবীর পবিত্র রওজার কাছে চলে যাই। মনে হয়, আমার দয়াল নবীর পবিত্র চেহারা মোবারক দেখতে পাই। কারণ, আমি আমার জীবনে আমার পিয়ারা নবীকে অনেক বার স্বপ্নে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। বাবাজানের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করার পর, স্বপ্নে আমার পিয়ারা নবীর দীদার লাভ করি এবং দেখি, দয়াল নবীর হাসিমাখা পবিত্র মুখখানি। তিনি যেন বলছেন বাবাজানের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করার কারণে দয়াল নবীজি অনেক খুশি হয়েছেন।
বাবাজানের দোয়ার বরকতে আমাদের তরিকার পীরানে পীরগণের দীদার ও দোয়া স্বপ্নের মাধ্যমে লাভ করি, প্রথমে দাদা হুজুরের দীদার ও দোয়া লাভ করি। তারপর হযরত এনায়েতপুরী (রহ.)-এর দীদার ও দোয়া লাভ করি। তারপর হযরত চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর দীদার ও দোয়া লাভ করি। বাবাজানের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি ছয় মাস শেষ হয়েছে মাত্র। এই ছয় মাসে তিন বার স্বপ্নে নবীজির দীদার লাভে ধন্য হয়েছি। তিন বারই দয়াল নবীকে সন্তুষ্ট দেখেছি। সবই আমার মুর্শিদের দোয়া আর পরম করুণাময় আল্লাহর অশেষ রহমত। এ সবই তোমার ইশারা। আমার মুর্শিদ মানুষ গড়ার মহান কারিগর। অমানুষকে মানুষ হবার পথ দেখান। গুনাহ-পাপের পথ থেকে সৎপথ দেখিয়ে শেওলাপড়া ময়লা’ অন্তর এক আল্লাহ নামের জিকিরের মাধ্যমে চকচকে পরিস্কার করে তোলেন। কারণ, মহান আল্লাহ মানুষের ভিতর বাহির উভয় দিক পরিস্কার পবিত্র ভালোবাসেন। মানুষের অপবিত্র দিল পবিত্র করে, এক আল্লাহর ধ্যান ও রাসুলের সুন্নত অনুসারে দুনিয়াদারির লোভ-লালসা, হিংসা, অহংকার, জেনা, মিথ্যা প্রবঞ্চনা, চুরি-ডাকাতি, খুনখারাপি যত রকমের অন্যায় কাজ আছে, এসব থেকে মুরিদকে সংযত থাকার শিক্ষা দিয়ে থাকেন। ভক্ত হৃদয়ে এমন এক রুহানি মহব্বত সৃষ্টি করে দেন, যে মহব্বতের জন্য মুরিদ তার প্রেম ও ভালোবাসা, জানমাল সবকিছু মুর্শিদের কদমে সোপর্দ করে মুর্শিদের রঙে রঙ্গিন হয়ে যায়। অর্থাৎ সুন্দর ও সৎ জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে সবার সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে বাঁচা।
তাসাউফের উচ্চস্তরে পৌঁছতে হলে, তাসাউফের জনক রাসুলে করিম (সঃ)-এর নির্দেশ অনুযায়ি জাগতিক চিন্তা, ভালোবাসা বর্জন করে আল্লাহর দর্শন লাভে মগ্ন হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর নির্দেশ রয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর রঙে রঙ্গিন হয়ে যাও।’ এই মহান উক্তির প্রকৃত অর্থ হলো, আল্লাহরতায়া’লার যে সব ঐশী গুণাবলি রয়েছে, সেই গুণাবলি নিজের মধ্যে অর্জন করা এবং আল্লাহতায়া’লার রঙে রঙ্গিন হওয়াকে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহর রঙে রঙ্গিন হতে পারলেই, জৈবিক উপাদানে আবদ্ধ মানবাত্মা ঐশী সত্তায় পৌঁছতে পারে। পরিণত হতে পারে পরশমণিতে। এই অর্থেই আল্লাহতায়া’লা ঘোষণা করেছেনÑ ছি¦বগাতাল্লা-হি, ওয়ামান আহ্সানু মিনাল্লা-হি ছি¦বগাতাওঁ ওয়ানাহ্নু লাহূ আ-বিদূন। অর্থাৎ, আমরা আল্লাহর রঙ ধারণ করেছি, আল্লাহ অপেক্ষা কে অধিকতর সুন্দর? আমরা তাঁরই উপাসক, (সূরা-বাক্বারাহ, আয়াত-১৩৮)। সুতরাং যিনি আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রান্বিত, আল্লাহর ঐশীগুণে গুণান্বিত, আল্লাহর স্বভাবে স্বভাবিত তিনিই আল্লাহর বেলায়েতপ্রাপ্ত অলিআল্লাহ, সুফি-সাধক, পীর-মুর্শিদ। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে হলে, আগে অবশ্যই মুর্শিদের নৈকট্য লাভ করতে হবে। মুর্শিদের নৈকট্য লাভের মধ্য দিয়েই মহান আল্লাহর দেখা পাওয়া যায়। যখন মুরিদের মধ্যে মুর্শিদের গুণাবলি অর্জিত হয়, মুরিদ তখনই মুর্শিদের রঙে রঙ্গিন হতে থাকে।
বাবাজানের দেয়া শিক্ষা ও ফয়েজের উছিলায় এখন আমার অন্তরে এক আল্লাহর ভয়, আল্লাহর প্রেম ও রাসুলের মহব্বত সৃষ্টি হয়েছে। মনের ভিতর যত রকমের সংকীর্ণতা, মিথ্যা, হিংসা, অহংকার, পাপ, লোভ ও বেহায়াপনা সবকিছুই যেন তওবার কুয়াতের ফয়েজে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে আমার। কিন্তু এই যে পরিবর্তন কার উছিলায়? কে দেখালো আমাকে মুক্তির পথ? কে খুলে দিলো অন্তরের চোখ? কোথায় ক্বলব? কোথায় খোদা? কোন পথ ধরে গেলে মাশুকের দেখা মিলবে। কে দেখালো আমাকে সেই পথ? দেখিয়েছেন যিনি আল্লাহর রঙে রঞ্জিত হয়েছেন। আল্লাহর রৌশনে রৌশন হয়েছেন। আল্লাহর রৌশনই যাঁর মনের খোরাক, তিনি আমার মুর্শিদ আল্লাহর বেলায়াতপ্রাপ্ত হাদী। সুফিকুলের চাঁদ (সুফিয়ায়ে কামরুস), মোজাদ্দেদে জামান খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর।বাবাজানের দোয়ার বরকতে আমার অন্তরে ফয়েজ প্রবেশ করেছে, আর তাই মনের কুড়েঁঘরে ঐশীচাঁদের আলোর বন্যা বয়ে চলছে। পরম করুণাময় আল্লাহরতায়া’লার দরবারে অশেষ শুকরিয়া আদায় করি। দয়ালু মহান আল্লাহ আমাকে এতো বড় দয়া দান করেছেন। এতোদিন অনেক দু:খ-কষ্টের পরও আমার ভাগ্যে এতো বড় পুরস্কার। আমি যে এতো সৌভাগ্যবতি সেটা বাবাজানের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করার পরই বুঝতে পেরেছি। বাইয়াত না হলে হয়তো কোনোদিন বুঝতে বা জানতেই পারতাম না। হে আল্লাহ আপনি আমাদের তরিকার সমস্ত জাকের ভাই ও বোনেদের তাওফিক দান করুন। হে আল্লাহ! আমরা যেন দয়াল মুর্শিদের পবিত্র কদমের ধুলোবালি হয়ে থাকতে পারি। মুর্শিদের রঙে রঙ্গিন হতে পারি এবং এক আল্লাহ হাজির-নাজির আছেন এই ধ্যানে ও ইবাদতে রাসুল (সঃ)-এর সুন্নত অনুসরণ করে ইহকাল ও পরকালের যাত্রায় সফল যাত্রী হতে পারি। আমিন।