পীরের কথা মুরিদের জন্য স্বর্গের সুধা

আলহাজ মোঃ জয়নাল আবেদীন

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আমি আল-জয়নাল গ্রুপের সত্বাধিকারী আলহাজ মোঃ জয়নাল আবেদীন। আমার হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ও অনুভূতি দিয়ে বলছি, খাজাবাবা কুতুববাগী পীর-কেবলাজান মানবপ্রেমের এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। তাঁর সুন্দর ব্যবহার, মধুর বুলি মানুষকে আপ্লুত করে। খাজাবাবা গত মাসে কয়েকজন সফর-সঙ্গীসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সফরে গিয়েছিলেন তরিকা প্রচারের কাজে। ওখানে বাবাজানের অসংখ্য ভক্ত-মুরিদান রয়েছেন, তাদের আমন্ত্রণে বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ-নসিহত দান করেছেন। বাবাজান সফর শেষ করে দরবারে এলে পর, আমি তাঁর সাক্ষাতে আসি। আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে তাঁর পবিত্র জবানে বললেন, ‘হাজী-বাবা, ভারত সফরে গিয়ে দেখলাম, গুরুর প্রতি ওদের অনেক মায়া, অনেক ভক্তি আর অনেক টান অনুভব করলাম। প্রতিটা মাহফিলে মানুষের ঢল নেমেছিল। আল্লাহতায়ালার অশেষ মেহেরবানিতে সবগুলো মাহফিল এতটাই শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে যে, জ্বীন ও ইনসানের দ্বারা ছিল ফয়েজে ভরপুর। এদের মধ্যে অনেকের যজবা হয়েছিল। সে দৃশ্য এমন ছিল, যেন চাতক পাখি বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে এমন অবস্থা! কেউ কেউ বলেছেন, ‘গুরু এত দেরী করে আসলেন। আপনাকে আমরা এদেশে রেখে দিব! আপনি আমাদের এখানেই থাকবেন।’ এরা এত মহব্বতে আমাকে আপন করে নিল, মনে হতে লাগলো কত দীর্ঘকাল থেকে তারা আমার পরিচিত!

বাবাজান যখন এ কথাগুলো বলছিলেন তখন তাঁকে আনন্দিত মনে হচ্ছিল। যে খুশি মুখ দেখতে পাওয়া যে কোন ভক্ত-মুরিদের জন্য অশেষ রহমত ও নিয়ামত। বাবাজান এরপর বললেন, বাবা হাজী সাহেব, বৃহস্পতিবার তাড়াতাড়ি চলে আসবেন। বাবাজানের এ দাওয়াতের মর্ম উপলব্ধি করতে পারলাম, মুরিদদের উপস্থিতিতে পীরের ফয়েজ আসে। আবার পীরের সামনে হাজির হলে আশেক-মুরিদেরা ফয়েজ পায়। কিন্তু ফাসেক বা মিথ্যাবাদি হলে সে কখনোই ফয়েজ পাবে না। এ প্রসঙ্গে বলি, এ তরিকার এক মহাসাধক হযরত হাসান বসরী (রঃ)এর জীবনে একটি ঘটনা ছিল এমন, একদিন কোন এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে বললো, ‘হযরত হাসান বসরী (রঃ) কেমন করে আমাদের সকলের উর্ধ্বের স্থান দখল করলেন? দ্বিতীয় ব্যক্তি উত্তরে বললো, সকলেই তাঁর জ্ঞানের মুখাপেক্ষি, এ কারণেই তিনি সকলের শীর্ষস্থানীয় হয়েছেন।’ কথিত আছে তিনি সপ্তাহে একদিন, শুধু শুক্রবার জুমার নামাজের সময় মসজিদে ওয়াজ-নসিহত করতেন। ওইদিন মজলিশে হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)কে উপস্থিত না দেখলে ওয়াজ থেকে বিরত থাকতেন।

লোকজন তাঁকে জিজ্ঞেস করতো, এত মর্যাদাবান বুযুর্গানে দ্বীন মজলিশে উপস্থিত, অথচ এক বৃদ্ধা স্ত্রীলোক আসেন নাই, এতে আপনার ওয়াজ থেকে বিরত থাকার কারণ কী? হযরত হাসান বসরী (রঃ) বললেন, ‘কারণ এই, যে শরবত আমি হাতির জন্য প্রস্তুত করেছি, তা পীঁপিলিকার মুখে কেমন করে ঢেলে দিবো? তখন উপস্থিত সকলেই চুপ হয়ে গেল আর কোন প্রশ্ন করলো না। কিন্তু এ উত্তর থেকে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যা বুঝলাম, হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ) ছিলেন সবার থেকে আলাদা, তাঁর বুদ্ধি-জ্ঞান ছিলো প্রখর আর গভীর। আর তাই সে পাত্রে জ্ঞানের মতো অমূল্য বস্তু রাখলে তা নিশ্চয়ই হেফাজত থাকবে। ঐ মজলিশে হয়তো জ্ঞানী লোকের কমতি ছিল না, তবু হযরত হাসান

বসরী (রঃ) এর বয়ানের মর্ম-ভেদ বুঝে, তা ধারণ করবার মতো যোগ্য পাত্রের অভাব ছিল। যে কারণে হযরত হাসান বসরী (রঃ) তাঁর মূল্যবান বয়ান থেকে বিরত থেকেছেন। মজলিশে উপস্থিত বুযুর্গগণ হয়তো শরিয়তের আলেম ছিলেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই এলমে মারেফতের গভীর জ্ঞান ছিল না। আর মারেফতের আলোচনা সব পাত্রে ধরে না। তবে আল্লাহ তত্বের এ জ্ঞান অর্জন করতে হলে, অবশ্যই আপন আপন কামেল পীরের খাঁটি শিষ্য হতে হবে। হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ) আত্মিক প্রেমের মাধ্যমে আল্লাহপ্রেমী একজন খাঁটি আশেক হতে পেরেছিলেন। মাশুকের মন জয় করেছেন বলেই তার জ্ঞানের ভা- হয়েছে পরিপূর্ণ! এ সবই মুর্শিদের শিক্ষা।

হযরত হাসান বসরী (রঃ) এর জীবনের অন্য এক ঘটনায় আছে, বাল্যকালে তিনি একটি পাপ করেছিলেন। আর তাই তিনি যখন কোন নতুন জামা তৈরি করাতেন, তখন সেই পাপকে স্মরণে রাখার জন্য জামার বুকের অংশে সেই পাপ কাজের বর্ণনাটি লিখিয়ে নিতেন। যখন সে লেখার ওপর দৃষ্টি পড়তো, তখন তিনি কাঁদতে কাঁদতে বেহুশঁ হয়ে পড়তেন। একবার খলিফা হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয (রঃ) হযরত হাসান বসরী (রঃ)কে চিঠি লিখলেন, ‘আমাকে এমন কিছু নসিহত দান করুন, যা আমি সর্বদা স্মরণ রাখতে পারি এবং তার ওপর আমল করতে পারি। উত্তরে হযরত হাসান বসরী (রঃ) লিখে পাঠালেন, ‘তুমি যদি বিশ্বাস কর যে, আল্লাহতায়ালা তোমার সঙ্গে আছেন, তাহলে আর কিসের ভয়? আর যদি মনে কর আল্লাহ তোমার সঙ্গে নাই, তবে তুমি কার নিকট থেকে রহমতের আশা করবে?’ সে যুগে খলিফা আবদুল আযীয (রঃ) একজন বাদশা হয়েও আল্লাহর ফকির হযরত হাসান বসরী (রঃ) এর কাছে উপদেশ চাইলেন এবং হযরত হাসান বসরী (রঃ) কালবিলম্ব না করে চিঠির মাধ্যমে উপদেশ পাঠিয়ে দিলেন।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমি হাজী জয়নাল আবেদীন কুতুববাগ দরবার শরীফে এসে দেখতে পেলাম, সে যুগের মত এ যুগের দেশ-প্রধানরাও খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের দোয়া নিতে দরবার শরীফে আসেন। যেমন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এ এইচ এম এরশাদ সাহেব ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ দেশ- বিদেশের অনেক নীতি-নির্ধারকরা দোয়া নিতে আসছেন বাবাজানের কাছে। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে এ কথা বলতে পারি সে যুগের হাসান বসরী, এ যুগের খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান একই পথের পথিক। ¯্রষ্টার সাধনায় সমান নিমগ্ন। জ্ঞানে ভরপুর। পরিশেষে আর একটি কথা বলি, হযরত হাসান বসরী (রঃ)এর মত সূফীবাদের জগৎবিখ্যাত সাধকেরা শুধুমাত্র একটি গুনাহের জন্যে রাত-দিন কাঁদতে পারেন। আর সেখানে আমরা ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় কত গুনাহ করছি, সে গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে কয়দিন কেঁদেছি? তাই বাবাজান বলে থাকেন, ‘বাবারা আপনারা সকাল-সন্ধ্যায় কিছু সময়ের জন্য হলেও মোরাকাবা করবেন। তাহলে আপনার আমলনামায় ষাট বছরের বে-রিয়া নফল এবাদতের সওয়াব লেখা হবে। নামাজের পাশাপাশি এ আমল করলে আল্লাহতায়ালা আমাদের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।

(Visited 445 times, 1 visits today)
Share