মোহাম্মদ ইউনূছ
(সভাপতি, কুতুববাগ দরবার শরীফ পরিচালনা কমিটি ও চেয়ারম্যান, ইউনূছ গ্রুপ । কুতুববাগ দরবার শরীফের মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্ব জাকের ইজতেমা গত ১২, ১৩, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪-এর আখেরি মোনাজাতের আগে ওরছ কমিটির আহবায়কের বক্তব্যে তাঁর আত্মিক ও সামাজিক উন্নয়নের অভিজ্ঞতার কিছু কথা লাখ আশেকান-জাকেরান ভাই-বোনদের উদ্দেশে এভাবেই সংক্ষেপে উপস্থাপন করেন এই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক। রেকর্ড থেকে অনুলিখন করে হুবহু আত্মার আলোতে সে বক্তব্য প্রকাশ করা হলো। প্রতিবেদক : আত্মার আলো )
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, আজকের এই মহাপবিত্র ওরছ শরীফ ও বিশ্ব জাকের ইজতেমার মধ্যমণি আমার প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ, উপস্থিত বিশেষ অতিথিবৃন্দ এবং টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সারাদেশ থেকে আগত মুসল্লি ভাইয়েরা এবং দেশের বাইরে থেকে আগত থাইল্যান্ড, আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া এবং অন্যান্য দেশ থেকে আগত জাকের ভাই ও বোনেরা। আপনাদের জানাচ্ছি, বিশ্ব জাকের ইজতেমার পক্ষ থেকে আন্তরিক মোবারকবাদ। আমি এই দরবারে প্রায় নয় বছর আগে বাবাজানের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করি। এই নয় বছরে আমার অভিজ্ঞতায় আমি বুঝতে পেরেছি যে, পশু-পাখির সঙ্গে আমাদের কী পার্থক্য এবং কী করণীয়। আমি যেটি মনে করি, তা হলো, দুনিয়ায় আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে আল্লাহ-তায়া’লা আমাদের সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে পাঠিয়েছেন। কিন্তু দুনিয়ায় কেউই থাকতে পারবে না, সবাইকেই চলে যেতে হবে এক সময়। কেউ বলতে পারবে না, এই দুনিয়ায় চিরদিন থাকতে পারব। কিন্তু যাওয়ার আগে দুনিয়ায় আমাদের কিছু করে যেতে হবে। আল্লাহকে চিনতে হবে, জানতে হবে। সৃষ্টিকর্তার শান আমাদের জানতে হবে, যাতে আখেরাতে আমরা আল্লাহর কাছে সৎ মানুষ হিসেবে মূল্যায়িত হই, সেই আশা করি। সেই কাজটি করার জন্য একটি প্লাটফর্ম দরকার। ঠিক যেমনি আল্লাহকে পেতে হলে রাসুল (সাঃ)-এর সাহায্য দরকার হয়, রাসুলকে ছাড়া আল্লাহকে আমরা পাব না। ঠিক তেমনি রাসুলকে পেতে হলেও কোনো বুজুর্গ পীর-মুর্শিদ, কারো না কারো মাধ্যম দরকার হয়। কুতুববাগ দরবারের মুর্শিদক্বেবলা সেই রকম একটি প্লাটফর্ম। কারণ এই প্লাটফর্ম ছাড়া কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। তাই আমার এই নয় বছরের অভিজ্ঞতায় আমি মনে করি এই প্লাটফর্মে আমি আসতে পেরেছি এবং এখানে আমি বারবার আসি। ভালো লাগে, আমি আত্মায় শান্তি পাই। আমি আসি, খাজাবাবার সঙ্গে দেখা করি, ইসলামের বিভিন্ন বিষয়, শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফাতের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করি। তাই আপনারাও এসে, এই শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেরা উপলব্ধি করুন, নিজেকে চিনুন এবং জানুন। আমি মনে করি, আপনারা বিচক্ষণ ব্যক্তি। এই দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার আগে কিছু করে যেতে হবে। এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করার আগে নিজের মেধা-বুদ্ধি খাটিয়ে দেখে-শুনে-বুঝে তারপর আপনারা বাইয়াত গ্রহণ করবেন। কারণ, আমি আমার নিজেরটা আপনাদের কাছে উপস্থাপন করলাম, যাতে করে আপনাদের চিন্তার সহায়ক হয়, বুঝতে উপকার হয়। আসলে আমি মঞ্চে এ ধরনের বক্তব্য কখনও রাখিনি বলে আমার ভুলত্রুটি হতে পারে। আশা করি আপনারা ভুল হলে ক্ষমা করবেন। আমি আমাদের কর্মীদের উদ্দেশে দুই-একটি কথা বলতে চাই, তিন দিনব্যাপী এই মহা মিলনমেলায় হাজার হাজার কর্মী অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যাঁরা পাকভা-ারে রাত-দিন আগুনের তাপ সহ্য করে নিরলসভাবে রান্না করছেন। সুশৃংখলভাবে মাঠে খাবার বণ্টন করছেন, যাঁরা তেজখানার উট, গরু, মহিষ, বকরি জবাই করছেন। এই বিশ্বজাকের ইজতেমা ও ওরছ শরীফ অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে সাজানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তাঁদের প্রতি আমি আমার আন্তরিক অভিবাদন জানাচ্ছি। যাঁরা ৩ দিন পর্যন্ত প্রায় সারা দেশ থেকে আগত তাঁরা যেন সুষ্ঠুভাবে শান্তিতে তাঁদের নিজ নিজ গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছে যেতে পারেন সে জন্য আমাদের পীর ক্বেবলারজানের কাছে দোয়া চাই। আর এই মুহূর্তে যাঁরা আমার সামনে আছেন, পর্দার আড়ালে বোনেরা আছেন, তাঁদের উদ্দেশে আমি কিছু কথা বলতে চাই। যাঁরা আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন, তাঁদের কাছে আমার অনুরোধ, আল্লাহর কথা সবসময় অন্তরে গেঁথে রাখবেন। সবসময় সত্য কথা বলবেন, সবসময় ভালো চিন্তা করবেন। দেশের জন্য চিন্তা করবেন, আর সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করবেন। খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের মানব সেবার কথা মনে রাখবেন। এখানে উপস্থিত সাংবাদিক ভাইদের, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কর্মী ভাইদের অবদান স্মরণযোগ্য। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ভাইয়েরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এই পবিত্র মহামিলনমেলা সুষ্ঠ সফল করার জন্যে। তাঁদের সবাইকে দরবার শরীফের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।