সেহাঙ্গল বিপ্লব আল মোজাদ্দেদি
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। সুরা, ত্ব-হা, ১৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নামাজ কায়েম কর আমার জিকির বা স্মরণার্থে।’ সবচেয়ে সরল ও সুন্দর নিখুঁত এক ইবাদত নাম ‘জিকিরে খফী’ কলবের জিকির। আধ্যাত্মিক মহা-সাধক খাজাবাবা কুতুববাগী পীরকেবলাজান বলে থাকেন, ‘চৈতন্য বা দিব্যজ্ঞান ছাড়া কেউ আল্লাহর দেখা পাবেন না।’ এ জ্ঞান অর্জন করতে হলে প্রথম শর্ত হলো চৈতন্য কামেল গুরুর হাতে শিক্ষা-দীক্ষা নেওয়া। জিকিরই হলো একমাত্র শান্তি। আল্লাহতায়ালার মহান সৃষ্টির আঠারো হাজার মাখলুকাতই এক আল্লাহর জিকির করেন। আর নামাজ মানুষের তথা মুসলমানদের জন্য ফরজ করেছেন, বাকি সতেরো হাজার নয়শত নিরানব্বইটি মাখলুক শুধু জিকির ও তাসবীহতে মশগুল। আল্লাহর জিকির থেকে কেউই বিরত নেই। এবং আল্লাহর নিদর্শন নেই এমন কোন স্থান খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেখানে সৃষ্টি আছে সেখানেই আল্লাহর উপস্থিতি। বিশ্বজুড়ে অগনিত তরিকাপন্থি জাকের ‘জিকিরকারী’ ভাই-বোন, পীরভাই-বোন, কুতুববাগী পীর কেবলাজানের শিক্ষা ‘আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, নামাজে হুজুরি’ অনুযায়ী আমলের চেষ্টা করি। পীর কেবলাজান বলেন, ‘যার কামেলপীর আছে, তার আল্লাহ, তার সঙ্গে আছেন।’ সত্যিই তো, যে হৃদয় যত বেশি আল্লাহর দিকে সমর্পিত হয়ে অন্তরে জিকিরের মাধ্যমে স্রষ্টার প্রেমে বিভোর থাকতে পারেন, তাদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সঃ) এরশাদ করেছেন, ‘নির্জন একাকী মানুষগুলো অগ্রবর্তী হয়ে গেছে।’ সাহাবায়ে কেরামগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, নির্জন একাকী মানুষ কারা? নবীজি (সঃ) উত্তরে বললেন, তারা ওইসব নারী-পুরুষ, যারা আল্লাহর জিকির করে’ (মুসলিম শরীফ, হাদিস: ২০৬২)। আল্লাহর জাতপাকের জিকির হলো নিখুঁত ইবাদত, যে ইবাদতের মধ্যে ভুলত্রুটির আশঙ্কাও থাকে না। নামাজ আল্লাহতায়ালার হুকুম। ইসমেজাতের জিকিরও আল্লাহর হুকুম। এ সকল হুকুম শুধু আল্লাহর স্মরণার্থেই। তবে সঠিকটা না জেনে বুঝে উদ্দেশ্যহীন নামাজ কিংবা জিকির করলেই হবে না। যে কোন বিষয়ের যেমন দিক, উদ্দেশ্য কিংবা লক্ষ্যবস্তু থাকে এবং সেটা নির্ধারণ করে, মন সংযোগ দিয়ে চর্চা-শ্রম দিলে সফলতা আসবেই। এ সাফল্য জীবনের সকল ক্ষেত্রেই দেখা যায়। তবে, জীবনের যে কোন মহৎ ও ভালো অর্জন কখনোও এককভাবে আসে না, একান্তভাবে আস্থাশীল কাউকে না কাউকে লাগে। যেমন, যেই রোগের যে ডাক্তার কেবল তিনিই পারেন সঠিক রোগ চিনে সঠিক চিকিৎসা দিতে এবং এতে রোগমুক্ত হওয়া যায়। কলবের মুখে আল্লাহর জিকির না থাকা একটি মহা রোগ, জিকিরহীন মানুষ মাত্রেই সে রোগের রোগী সবাই। সংসারে একজন দূরারোগ্য কঠিন রোগী যেমন আস্তে আস্তে কর্মহীন হয়ে পড়েন, তেমনই কলবে আল্লাহর জিকিরহীন ব্যক্তিও আল্লাহর দরবারে অচল-পাপী হিসেবে চিহ্নিত হন। তবে, কলবের মুখে জিকির জারি আপনাআপনি হয় না, কামেল-মোকাম্মেল পীরের খাস তাওয়াজ্জহ্ বা স্পর্শ লাগে। কারণ, আল্লাহর করুণা ও সান্নিধ্যে পেতে হলে, আগে কলবের মুখ চিনতে হবে। কোথায় সে মুখ? কোন মুখে ডাকলে পাওয়া যাবে মহান সৃষ্টিকর্তাকে? আল্লাহকে শুধু মুখে মুখে ডাকলেই সে ডাকের সাড়া মিলবে কি না? সে বিষয়ে আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন। পীরে-কামেল মুর্শিদে মোকাম্মেল খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের দেখানো পথের কোন বাঁক নেই, সরল রেখার মতো সোজা রাস্তা। এবং এ রাস্তায় চলতে কোন প্রতিবন্ধকতাও নেই। আছে আল্লাহর অফুরন্ত রহমত, বরকত ও নিয়ামত। যা মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকেই আসতে থাকে। আমরা এ কথার সত্যতা বিভিন্ন প্রাজ্ঞ মনীষীদের রচিত অমূল্য গ্রন্থমালার মধ্যে দেখতে পাই। আর এ কথাই চিরদিন সত্য বলে বিশ্বাস করি যে, ধ্যান-জ্ঞান ছাড়া কস্মিনকালেও আল্লাহকে দেখা যাবে না, পাওয়া যাবে না। আমরা জানি, দেখি ও শুনি যাপিত জীবনেই দিন শেষে কেউ কোটিপতি, কারো নুন আনতে পান্তা ফুরোয় জলে! এ সত্য আর কঠিন বাস্তব। দিন শেষে আল্লাহতায়ালার ইবাদতের বেলায়ও প্রাপ্তি আছে। যার যেমন কাজ বা ইবাদত, তার প্রাপ্তিও তেমন। কুতুববাগী পীরকেবলাজান তালিমী শিক্ষা দানের সময় বলে থাকেন, ‘বাবারা, চব্বিশ ঘন্টায়, চব্বিশ হাজার ছয়শত বার কোন কোন কিতাবে আছে, একুশ হাজার ছয়শত বার মানুষের দম আসা-যাওয়া করে, এ সময়ে যদি প্রত্যেক দমের সাথে কলবের মুখে সার্বক্ষণিক আল্লাহর জিকির থাকে, তবে এর চেয়ে নিখুঁত ইবাদত আর নাই।’ পবিত্র হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বান্দা আমাকে যেমন ধারণা করে, আমাকে তেমনই পাবে। যখন সে জিকির (স্মরণ) করে, আমি তার সঙ্গে থাকি। সে যদি তার অন্তরে আমার জিকির করে, তাহলে আমিও তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি। আর যদি সে কোন জনগোষ্ঠীর সামনে আমার জিকির করে, তাহলে আমি তাদের চেয়ে উত্তম জনগোষ্ঠীর কাছে তাকে স্মরণ করি।’ (মুসলিম শরীফ, হাদিস-২০৬১), আল্লাহতায়ালাও অন্তরের মুখে জিকিরের (স্মরণ) প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। আমরা নামাজে দাঁড়িয়ে ইমাম সাহেবের তেলওয়াতের প্রতি কান দিয়ে থাকলেও, মনের ভিতর নানান গুঞ্জন যেন অন্তরকে তোলপার করে তোলে, যা অনেক চেষ্টাতেও দমিয়ে রাখা কঠিন। আর এভাবেই একসময় ওয়াক্তের নামাজ শেষ করে যার কাজে সে যুক্ত হই। কিন্তু ইবাদত হওয়া উচিৎ সৃষ্টিকে ভুলে স্রষ্টার প্রেমে দিল-মন একাকার করে সমর্পিত হয়ে আদায় করা। আমরা তা কতটুকু করতে পারছি? বর্তমানসহ যে কোনও সময় থেকেই আমাদের মধ্যে নামাজ শুদ্ধভাবে আদায় ও প্রতিষ্ঠা না হওয়ার কারণে, বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদী আর হিংসা অশান্তির দাবানল লেগেই আছে। আধুনিকতার নামে সভ্যতা ও মানবতা থেকে কতখানি দূরে সরে আছি আমরা, তা ভাবতে গেলেও মূর্ছা যেতে হয়! কুতুববাগী পীর কেবলাজান আরো বলে থাকেন, ‘মানুষকে নামাজের মধ্যেই শয়তান সবচেয়ে বেশি ধোঁকা দিয়ে থাকে।’ সত্যিই তো, শয়তানকে না তাড়িয়ে নামাজে দাঁড়ালে তার ধোঁকা থেকে কখনোই রক্ষা নাই।’ তাই আমাদের উচিৎ হুজুরি (একাগ্রচিত্ত) দিলে নামাজ আদায় ও প্রতিষ্ঠা করে চলা। জিকির সম্পর্কে সুরা, রাদ’-এর ২৮ নং আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(আল্লাহর দিকে অভিমুখী হেদায়েতপ্রাপ্ত লোক তারাই) যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে তাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়। জেনে রেখো, শুধু আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়।’ এ আয়াতের মধ্যে মহান আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে তাঁর জন্য ইবাদতের সহজ সুন্দর ও নিখুঁত উপায় নির্দেশ করেছেন। যেমন কষ্টবিহীন মনোরম এক ইবাদতের নাম জিকির-এ ‘খফী’। দৈনন্দিন কাজের মধ্যে ডুবে থেকেও জিকিরের ‘খফী’ ইবাদত করা যায়, তাতে কোন খেলাপ হয় না বরং ঈমানদারদের অন্তর জাগ্রত হয় এবং প্রশান্তির পরিসর কল্পনাতীতভাবে বাড়তে থাকে। জিকিরের মাধ্যমে শয়তানের প্ররোচণা থেকে মুক্ত থাকা যায়। পবিত্র কোরআনের সুরা আরাফ-এর ২০১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যারা পরহেজগার, শয়তান যখন তাদের কুমন্ত্রণা দেয়, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। তৎক্ষণাত তাদের চোখ খুলে যায়।’ মহানবী (সঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার রবের জিকির করে, আর যে জিকির করে না তাদের দৃষ্টান্ত হলো, জীবিত এবং মৃতের মতো।’ (বোখারি শরীফ, হাদিস- ৯৫৮৭), সার কথা, জিকিরকারীর অন্তর চিরজাগ্রত থাকে। অন্তরের মুখে আল্লাহর জিকির এক মহা নিয়ামত ও নিখুঁত ইবাদত। হে আল্লাহ! পরম বিশ্বাস ও ভক্তির সঙ্গে আপনার জিকির-স্মরণ অন্তরে নিয়েই যেন আপনার ডাকে হাজির হতে পারি, সবাইকে সে তাওফিক দান করেন, আমিন।
Its a useful to learn about way of sunnah and a way of authentic Tarika.