আলহাজ মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ্ নক্শবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী
কেউ যদি ওযু-গোসল ছাড়া, শরিয়তের কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ছাড়া, যদি কোন লোক আকাশ দিয়া উড়িয়া যায় কিংবা পানির উপর দিয়ে হাঁটিয়া যায় এবং যদি দেখ মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতে, তবুও তাকে অনুসরণ করিও না। কারণ তার ভিতরে শরিয়তের আমল নাই বিধায়, তার নিকট গেলে ঈমান নষ্ট হইয়া যাইবে।
পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারাহ্ এর ২০৮ নং আয়াতে আল্লাহতায়া’লা বলেন, ‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাযিনা আমানুদ্ খুলু ফিসসিলমে কাফ্ফাতান, ওয়ালা তাত্তাবিউ খুতুওয়াতিস শায়তনে, ইন্নাহু লাকুম আদুব্বুম্মুবিন। অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে পূর্ণভাবে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। শয়তানের প্রকারভেদ : মানুষ সুরতি শয়তান, জ্বীন শয়তান, খবিশ শয়তান, নফস শায়তান, আরওয়াহ্ শয়তান।
সুরা আনফাল এর ২ নং আয়াতে আল্লাহতায়া’লা বলেন, ‘ইন্নামাল মু’মিনুনাল্লাযীনা ইযা যুকিরাল্লাহু ওয়াজ্বিলাত কুলুবুহুম। অর্থ: নিশ্চয় মু’মিন তারাই, যখন তাদের সামনে আল্লাহর যিকির করা হয়, তখন তাদের অন্তর কম্পিত হয়। অর্থাৎ, শরীর কাঁপিয়া ওঠে এবং এক ধরণের হাল-জয্বা হয়।
সুরা মু’মিন, ৩৮, ৩৯ ও ৪০ নং আয়াতে আল্লাহতায়া’লা বলেন, ‘ওয়াক্বা লাল্লাযী আমানা ইয়া ক্বাওমিত তাবিউনি আহ্দিকুম সাবীলার রাশাদি। ইয়া ক্বাওমি ইন্নামা হাযিহিল হায়া-তুদ্ দুন্ইয়া মাতাউওঁ ওয়া ইন্নাল আখিরাতা হিয়া দারুল ক্বারার। মান্ আমিলা সাইয়ি আতান্ ফালা ইউজয্বা ইল্লা মিছ্লাহা ওয়ামান্ ‘আমিলা ছালিহাম্ মিন্ যাকারিন্ আওউন্ছা ওয়া হুওয়া মু’মিনুন্ ফা-উলাইকা ইয়াদ্খুলুনাল্ জান্নাতা ইউরায্বা কুনা ফীহা বিগাইরি হিসাব।’
অর্থ: সে মুমিন ব্যক্তি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমার অনুসরণ কর, আমি তোমাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করব। হে আমার সম্প্রদায়! এ পার্থিব জীবন অতি ক্ষণস্থায়ী ভোগের বস্তুমাত্র এবং পরকাল হল স্থায়ী নিবাস। যে পাপ করে, তাকে সেই পাপের প্রতিফল প্রদান করা হবে এবং যে নেক কাজ করে, সে পুরুষ হোক বা নারী হোক, সে প্রবেশ করবে জান্নাতে এবং সেখানে অপরিমিত রিযিক দেয়া হবে।
হে পাঠকগণ! এখন চিন্তা করিয়া দেখুন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা মুমিন ব্যক্তির কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন কেন? মুমিন ব্যক্তির পথ অনুসরণ করতে বললেন কেন? যারা কথায় কথায় বলিয়া থাকেন, কোন পীর-মুর্শিদের কাছে যাওয়ার দরকার নাই। অথচ আল্লাহতায়ালা সুরা মুমিন আয়াত-৩৮, ৩৯ ও ৪০ নম্বরে মুমিন ব্যক্তি বা কামেল মুর্শেদের কাছে যাওয়ার কথা বলেছেন। সুতরাং পীর কামেল মুর্শিদই মুমিন। মুমিন ব্যক্তি কাবার চাইতে অধিক সম্মানিত (ইবনে মাজহা)।
সূরা মায়িদাহ্ আয়াত ৪৮
‘লিকুল্লিন্ জ্বা‘আল্না মিন্কুম শির্ আতাওঁ ওয়া মিন্হা জ্বা’। অর্থ: আমি তোমাদের জন্য দুটি পথ দিয়েছি। একটি শরীয়ত আরেকটি মারফত।
এলেম দুই প্রকার। একটি জাহেরী এলেম আরেকটি বাতেনি এলেম। চার ইমামের ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, যে শুধু শরীয়ত পালন করলো মারেফত পালন করলো না, সে হলো জিন্দীক বা কাফের আর যে, শুধু মারফত করলো শরীয়ত করলো না, সে হলো ফাসেক।
যে শরিয়ত ও মারেফত উভয় এলেমের উপর আমল করে, সে হকের মধ্যে আছে। ইমামে আজম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, শরিয়তের এলেমের দ্বারা বাহিরকে দূরস্ত করে এবং এলমে মারেফতের দ্বারা ভিতরকে পবিত্র করে। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ নৈকট্যলাভ করতে হলে শরীয়ত ও মারফতের উভয় আমলই হাছিল করতে হবে।
সম্মানীত পাঠকগণ! আপনারাই চিন্তা করিয়া দেখুন, শরিয়ত ও মারেফত-এর এলেম শিক্ষা করা দরকার আছে কি না? কিছু কিছু মানুষের ধারণা, তাঁরা বলে থাকেন, পীরের কাছে মুরিদ হলে অজু-গোসল, নামাজ, রোজা লাগে না। তাঁদের এ সমস্ত উক্তি করা ভ্রান্ত আকিদা। কাজেই যাঁরা এ সমস্ত ভ্রান্ত আকিদার শিক্ষা দেয়, তাঁরা নিজেরাও বিপদে আছে এবং তাঁদের অনুসারিরাও বিপদে আছে। কারণ, এ শিক্ষা দ্বারা মানুষ গোমরাহ্ বা পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। একজন কামেল পীর কোনদিন বে-শরা শিক্ষা দিতে পারেন না। তাঁরা প্রকৃত পক্ষে রাসুলুল্লাহ্ (সঃ)-এর সুন্নতের সত্য তরিকা শিক্ষা দিয়া থাকেন। তাই, পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা হক্কানী কামেল পীর-মুর্শিদের নিকট যাওয়ার হুকুম করেছেন। সূরা তওবা। হক্কানী কামেল পীর যাঁরা, তাঁরা শরিয়তের ছোট-বড় যাবতীয় হুকুম-আহ্কাম ও তরিকতে আমল পালন করার জন্য, ভক্ত-মুরিদকে জোর আদেশ করেন। দুনিয়ামুখি বা আল্লাহভোলা মানুষদেরকে দ্বীনি শিক্ষা দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামজের সাথে অজিফা আমল, মোরাকাবা-মোশাহেদা করাইয়া আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, নামাজে হুজুরি পয়দা করে, আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিয়ে থাকেন।