খাজাবাবা কুতুববাগীর ভারত সফর

মহান আল্লাহতায়ালার মনোনীত ইসলাম ও দয়াল নবীর সত্য তরিকতে সূফীবাদের দাওয়াত নিয়ে

(রাসুল (সঃ) এর সত্য তরিকার পবিত্র বাণী প্রচারের লক্ষ্যে সম্প্রতি জামানার মোজাদ্দেদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান ভারতের কয়েকটি জেলা সফর করেন। সফরে সঙ্গী হিসেবে ছিলেন কুতুববাগ দরবার শরীফের খাদেম ও কেবলাজানের বাণী প্রচারকগণ। সফর থেকে ফিরে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা আত্মার আলোর এ সংখ্যায় লিখেছেন, মোঃ শাখাওয়াত হোসেন)

বিশ্ব মানবতার কল্যাণ ও চির শান্তির বাণী দিয়ে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সমস্ত মাখলুকাতের রহমত রূপে আখেরী নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা আহম্মদ মোস্তফা (সঃ)কে এই ধরাধামে পাঠিয়েছিলেন। এরপর পবিত্র কোরআন ও শুদ্ধ হাদিসের বর্ণনা অনুয়ায়ি কামেল-মোকাম্মেল অলি-আল্লাহদের মাধ্যমে কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধু রাসুলের সত্যবাণী কায়েম রাখবেন। তাঁরাই আল্লাহকে রাজি-খুশি করার সঠিক আমল ও নিয়ম-পদ্ধতি মানুষকে শেখাবেন। আল্লাহ প্রতি শতাব্দীতে একজন মোজাদ্দেদ (সংস্কারক) প্রেরণ করেন। বর্তমান শতাব্দীতে মোজাদ্দিদের দায়িত্ব দিয়ে, আল্লাহভোলা মানুষদেরকে সঠিক পথে আনার জন্য, প্রেরণ করেছেন মাদারজাত অলি আমাদের পীর ও মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানকে। যাঁর কাছে নেই কোন দেশ-জাতির ভেদাভেদ। যিনি আল্লাহ-রাসুলের সত্যবাণী প্রচার করছেন, সকল জাতির কাছে দেশ থেকে দেশান্তরে…! তাই তাঁকে ছুটে যেতে হয় দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বুধবার সকালে খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান, রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সত্যবাণী মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছানোর জন্য ভারতের দক্ষিণ জলপাইগুড়ি, কুচবিহার, দার্জিলিং ও উত্তর দিনাজপুর জেলা সফর করেন। অতি সৌভাগ্যের বিষয়, কেবলাজানের সফরসঙ্গী হওয়ার সুযোগ মিলেছিল।

কেবলাজান যখন জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়িতে পৌছালেন, তখন হাজার হাজর হিন্দু-মুসলমান নারী-পুরুষ ছুটে আসেন, খাজাবাবাকে এক নজর দেখার জন্য। মনে হল কোন এক অলৌকিক শক্তির টানে, দূর-দূরান্ত থেকে এত মানুষ ছুটে এসেছে। তবে কেবলাজান যে ওখানে আসবেন, সে কথা আগেই কিছুটা প্রচার হয়েছিল। কিন্তু কেবলাজানকে স্বাগত জানাতেই যে, এত মানুষ সমবেত হবে, তা ভাবনারও বাইরে ছিল! আশেক-জাকের ভাইয়েরা মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন দক্ষিণ গোসাইর হাট ঈদগাহ মাঠ-প্রাঙ্গণে। সেখানেও দেখি কেবলাজানের পবিত্র বাণী শুনতে মানুষের ঢল। চারিদিক সুনশান নিরব পরিবেশ। এত মানুষ, তবু শৃংখলার কোন কমতি ছিল না সে ধর্মসভায়। নারী-পুরুষ পর্দার সঙ্গেই উপস্থিত হয়েছিল। পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে কেবলাজান একের পর এক শুনাতে থাকেন মানবপ্রেমের বাণী, ইহকাল-পরকালের জন্য করণীয় মানুষের কল্যাণের কথা। যে কথার মধ্যে দিয়ে মানুষ পেতে পারে আল্লাহকে পাওয়ার সহজ ও সরল পথের সন্ধান। মানুষে মানুষে হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা ভুলে গিয়ে, কী করে ভ্রাতৃত্ববোধের মাধ্যমে সুন্দর জীবন গড়তে পারবে, সেসব কথা। মাহফিল কমিটি নারী-পুরুষদের পাশাপাশি বসার ব্যবস্থা করেছিল, এটাই ছিল ঐ অঞ্চলের রীতি। কিন্তু কেবলাজান সেখানে মা-বোনদের পর্দার ভিতরে বসার ব্যবস্থা করতে বললেন। কমিটির ভাইয়েরা তা-ই করলেন। দীর্ঘ দিনের কু-সংস্কার, যা ইসলামের ভিতরে প্রবেশ করেছিল, জামানার মোজাদ্দিদ তা সংস্কার করে দিলেন। প্রতিষ্ঠিত করলেন নারী-পুরুষের ভিন্ন ভিন্ন পর্দা।

১৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার মাহফিল ছিল আলতা গ্রামে। ‘মানবসেবাই পরম ধর্ম’- খাজাবাবা কুতুববাগীর এ বাণীকে প্রতিষ্ঠিত করতে আলতা গ্রামের জাকের ভাইজানেরা আয়োজন করেছিল সেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। ওই দিন বিকেলে দুস্থদের মধ্যে বস্ত্রদান করা হয়। সেবাদান এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করার কথা ছিল কেবলাজানের। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে যেতে পারেননি, এ সময় কেবলাজান অবস্থান করছিলেন ধুপগুড়িতে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার সম্মানিত সদস্য (এমএলএ) শ্রীমতি মিতালী রায়।

পরে আলতাগ্রামের আশেক-জাকের ভাইদের কেবলাজান নির্দেশ দিলেন, মিতালী রায়কে দিয়ে সেবাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করাতে। মিতালী রায় তার বক্তব্যে বলেন, খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান শান্তির দূত হিসেবে আমাদের মাঝে এসেছেন। তিনি যে মহা মানব এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। খাজাবাবা কুতুববাগী জলপাইগুড়ি জেলার মাটিতে তাঁর পবিত্র পদধূলি দিয়ে, এ মাটিকে পবিত্র করেছেন। আমরা যেন সকলেই এক বাক্যে তাঁর সকল আদেশ পালন করি। প্রকৃত মানুষ হতে গেলে প্রত্যেক মানুষের কোন না কোন সিদ্ধ দীক্ষাগুরু প্রয়োজন।’ এরপর শ্রীমতি মিতালী রায় কেবলাজানের সাক্ষাতে ছুটে আসেন ধুপগুড়ি লজ্-এ। প্রথমইে আসসালামু আলাইকুম বলে কেবলাজানের হুজরায় প্রবেশ করলেন। কেবলাজানকে দেখামাত্র তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বলেনÑ ‘আপনি যে এখানে আসবেন আমি জানতাম না। লোকমুখে শুনেছি আপনার কথা। আমার সাত জনমের ভাগ্য যে, আপনার মত এক মহা মানবের দেখা পেলাম। আপনার বাণী আমি সকলের কাছে প্রচার করবো। আপনি শুধু আমাকে আর্শিবাদ করবেন।’ কেবলাজান মিতালী রায়কে জিজ্ঞেস করলেনÑ ‘মা, তুমি আমার কাছে কী আর্শিবাদ চাও? তিনি বললেনÑ ‘বাবা, আমি অত্র এলাকার বিধায়ক (এমএলএ)। আমার পার্টি বর্তমানে ক্ষমতায়। সরকার আমাকে অনেক ক্ষমতাও দিয়েছেন। আপনি শুধু আমার জন্য আর্শিবাদ করেন, যেন এই ক্ষমতার বলে আমার মনে কোন অহংকার প্রবেশ না করে।’ তাঁর এই অহংকারহীন মনোভাবে কেবলাজান খুশি হলেন। তখন আমাদের মনে হল, এই তো মনুষ্যত্ব। কত বড় জননেত্রী হয়েও অহংকারমুক্ত থাকার জন্য কেবলাজানের কাছে আর্শিবাদ চাইছেন! অথচ আমরা কয়জন আছি যারা, কেবলাজানের কাছে এমন বাসনা নিয়ে আসি? নিজেকেই এ প্রশ্ন করলাম!

এভাবে গ্রাম-শহর-উপশহর মিলিয়ে কেবলাজান প্রতিদিন প্রায় চার-পাঁচটি মাহফিল-ধর্মসভায় রাসুলুল্লাহ (সঃ)এর সত্য তরিকতের চির শান্তির বাণী প্রচার করেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো প্রায় প্রতিটি ধর্মসভা কিংবা মাহফিলেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ অসংখ্য মানুষের ঢল ছিলো। এবং তারা এসে কেবলাজানকে দেখার পর অনেকেই হাউমাউ করে কান্নাকাটি করতে লাগলো। আর বলতে থাকলো, গুরুদেব তোমাকে পেয়ে আমরা ধন্য, তুমি আমাদের জন্য আর্শিবাদ কর। কেবলাজানও অপরিসীম ধৈর্য্য নিয়ে তাদের সকলের দুঃখ সুখের কথা শুনতে লাগলেন। একজন মানুষও সাক্ষাৎ না করে যায়নি। এভাবে একের পর এক সবাইকে দোয়া-আর্শিবাদ করে তরিকতের ধ্যান ও আমল করতে বললেন। তাদের আকুতি দেখে বার বার মনে হয়েছিল, গুরু-মুর্শিদের আশেক-পাগল এ সকল মানুষ, না জানি কত দীর্ঘ সময় ধরে তীর্থের কাকের মত পথ চেয়েছিলেন। এতদিন তারা সত্যপথের সন্ধান না পাওয়ায় হন্যে হয়ে তাঁকেই যেন খুঁজছিলেন। আজ তাদের সেই প্রাণের পরমপ্রিয়-স্বজন সত্যপথের দিশারী খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানকে পেয়ে তৃষ্ণা মিটেছে যেন।

১৭ সেপ্টেম্বর শনিবার। ধুপগুড়ির ঘন লোকালয় রেখে কেবলাজান এবার যাত্রা করলেন এক দুর্গম জনপদের দিকে, যে দিকে ঘন অরণ্যের মধ্য দিয়ে নির্জন পথ। সেখানে জীব-জন্তুর অবাধে বিচরণ ভূমি। মাঝে-মধ্যে দূরে দু’একটি ঘর-বসতির রেখা দেখা যায়। এই জঙ্গলবাসী জীব-জন্তুর সঙ্গে লড়াই করে, এ অঞ্চলের মানুষকে জীবন ধারণ করতে হয়। এবার কেবলাজানের কাফেলা এসে থামলো বানারহাট থানার দুরামাড়ি গ্রামে।

এখানেই হয়েছে ধর্মসভার আয়োজন। এদিকটায় বেশ জন-বসতি আছে। কিন্তু অবাক হওয়ার মত ঘটনা! এখানকার মানুষ কেউই কেবলাজানকে আগে কখনো দেখেনি। শুধু ধুপগুড়ির মানুষের মুখে মুখে শুনেছে খাজাবাবা কুতুববাগীর আদর্শ ও গুণের কথা। আর শুধু কেবলাজানের ছবি মোবারক দেখেছে ‘আত্মার আলো’ পত্রিকার মাধ্যমে। এবার সেই অদেখা-অচেনা প্রিয় মানুষ-রতনকে চোখের সামনে পেয়ে আনন্দে যেন আত্মহারা তারা। অপলক চোখে চেয়ে অশ্রুতে বুক ভাসিয়ে, নিদারুণ যন্ত্রণা দূর করে পুণ্য পাওয়ার আশায় ব্যাকুল ছিল। মাহফিলে ছিল না কোন জাতি, ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ। মানুষ এক আল্লাহর সৃষ্টি। শুধু তারা জানতো না ধর্মের সঠিক পথ কোনটি? এবং সূফীবাদ কী? কেবলাজানকে দেখে এবং তাঁর পবিত্র বাণীতে এ জিজ্ঞাসার উত্তর তারা খুব সহজেই পেয়ে গেল। আর উপস্থিত অনেক মানুষ কেবলাজানের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলো। এরপর আকুতিভরে সবার একটাই চাওয়া ছিল, যেন এভাবে প্রতি বছর কেবলাজান তাদের মাঝে আসেন। এদের মধ্যে এত আদব, গুরুভক্তি এবং গুরুর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ, তা তাদের কথা ও কাজেরই আশ্চর্য মিলের দৃষ্টান্ত। (পরের সংখ্যায় শেষ হবে)

(Visited 307 times, 1 visits today)
Share

খাজাবাবা কুতুববাগীর ভারত সফর

মহান আল্লাহতায়ালার মনোনীত ইসলাম ও দয়াল নবীর সত্য তরিকতে সূফীবাদের দাওয়াত নিয়ে

 

(রাসুল (সঃ) এর সত্য তরিকার পবিত্র বাণী প্রচারের লক্ষ্যে সম্প্রতি জামানার মোজাদ্দেদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান ভারতের কয়েকটি জেলা সফর করেন। সফরে সঙ্গী হিসেবে ছিলেন কুতুববাগ দরবার শরীফের খাদেম ও কেবলাজানের বাণী প্রচারকগণ। সফর থেকে ফিরে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা আত্মার আলোর এ সংখ্যায় লিখেছেন, মোঃ শাখাওয়াত হোসেন)

বিশ্ব মানবতার কল্যাণ ও চির শান্তির বাণী দিয়ে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সমস্ত মাখলুকাতের রহমত রূপে আখেরী নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা আহম্মদ মোস্তফা (সঃ)কে এই ধরাধামে পাঠিয়েছিলেন। এরপর পবিত্র কোরআন ও শুদ্ধ হাদিসের বর্ণনা অনুয়ায়ি কামেল-মোকাম্মেল অলি-আল্লাহদের মাধ্যমে কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধু রাসুলের সত্যবাণী কায়েম রাখবেন। তাঁরাই আল্লাহকে রাজি-খুশি করার সঠিক আমল ও নিয়ম-পদ্ধতি মানুষকে শেখাবেন। আল্লাহ প্রতি শতাব্দীতে একজন মোজাদ্দেদ (সংস্কারক) প্রেরণ করেন। বর্তমান শতাব্দীতে মোজাদ্দিদের দায়িত্ব দিয়ে, আল্লাহভোলা মানুষদেরকে সঠিক পথে আনার জন্য, প্রেরণ করেছেন মাদারজাত অলি আমাদের পীর ও মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানকে। যাঁর কাছে নেই কোন দেশ-জাতির ভেদাভেদ। যিনি আল্লাহ-রাসুলের সত্যবাণী প্রচার করছেন, সকল জাতির কাছে দেশ থেকে দেশান্তরে…! তাই তাঁকে ছুটে যেতে হয় দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বুধবার সকালে খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান, রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সত্যবাণী মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছানোর জন্য ভারতের দক্ষিণ জলপাইগুড়ি, কুচবিহার, দার্জিলিং ও উত্তর দিনাজপুর জেলা সফর করেন। অতি সৌভাগ্যের বিষয়, কেবলাজানের সফরসঙ্গী হওয়ার সুযোগ মিলেছিল।

কেবলাজান যখন জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়িতে পৌছালেন, তখন হাজার হাজর হিন্দু-মুসলমান নারী-পুরুষ ছুটে আসেন, খাজাবাবাকে এক নজর দেখার জন্য। মনে হল কোন এক অলৌকিক শক্তির টানে, দূর-দূরান্ত থেকে এত মানুষ ছুটে এসেছে। তবে কেবলাজান যে ওখানে আসবেন, সে কথা আগেই কিছুটা প্রচার হয়েছিল। কিন্তু কেবলাজানকে স্বাগত জানাতেই যে, এত মানুষ সমবেত হবে, তা ভাবনারও বাইরে ছিল! আশেক-জাকের ভাইয়েরা মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন দক্ষিণ গোসাইর হাট ঈদগাহ মাঠ-প্রাঙ্গণে। সেখানেও দেখি কেবলাজানের পবিত্র বাণী শুনতে মানুষের ঢল। চারিদিক সুনশান নিরব পরিবেশ। এত মানুষ, তবু শৃংখলার কোন কমতি ছিল না সে ধর্মসভায়। নারী-পুরুষ পর্দার সঙ্গেই উপস্থিত হয়েছিল। পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে কেবলাজান একের পর এক শুনাতে থাকেন মানবপ্রেমের বাণী, ইহকাল-পরকালের জন্য করণীয় মানুষের কল্যাণের কথা। যে কথার মধ্যে দিয়ে মানুষ পেতে পারে আল্লাহকে পাওয়ার সহজ ও সরল পথের সন্ধান। মানুষে মানুষে হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা ভুলে গিয়ে, কী করে ভ্রাতৃত্ববোধের মাধ্যমে সুন্দর জীবন গড়তে পারবে, সেসব কথা। মাহফিল কমিটি নারী-পুরুষদের পাশাপাশি বসার ব্যবস্থা করেছিল, এটাই ছিল ঐ অঞ্চলের রীতি। কিন্তু কেবলাজান সেখানে মা-বোনদের পর্দার ভিতরে বসার ব্যবস্থা করতে বললেন। কমিটির ভাইয়েরা তা-ই করলেন। দীর্ঘ দিনের কু-সংস্কার, যা ইসলামের ভিতরে প্রবেশ করেছিল, জামানার মোজাদ্দিদ তা সংস্কার করে দিলেন। প্রতিষ্ঠিত করলেন নারী-পুরুষের ভিন্ন ভিন্ন পর্দা।

১৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার মাহফিল ছিল আলতা গ্রামে। ‘মানবসেবাই পরম ধর্ম’- খাজাবাবা কুতুববাগীর এ বাণীকে প্রতিষ্ঠিত করতে আলতা গ্রামের জাকের ভাইজানেরা আয়োজন করেছিল সেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। ওই দিন বিকেলে দুস্থদের মধ্যে বস্ত্রদান করা হয়। সেবাদান এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করার কথা ছিল কেবলাজানের। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে যেতে পারেননি, এ সময় কেবলাজান অবস্থান করছিলেন ধুপগুড়িতে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার সম্মানিত সদস্য (এমএলএ) শ্রীমতি মিতালী রায়।

পরে আলতাগ্রামের আশেক-জাকের ভাইদের কেবলাজান নির্দেশ দিলেন, মিতালী রায়কে দিয়ে সেবাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করাতে। মিতালী রায় তার বক্তব্যে বলেন, খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান শান্তির দূত হিসেবে আমাদের মাঝে এসেছেন। তিনি যে মহা মানব এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। খাজাবাবা কুতুববাগী জলপাইগুড়ি জেলার মাটিতে তাঁর পবিত্র পদধূলি দিয়ে, এ মাটিকে পবিত্র করেছেন। আমরা যেন সকলেই এক বাক্যে তাঁর সকল আদেশ পালন করি। প্রকৃত মানুষ হতে গেলে প্রত্যেক মানুষের কোন না কোন সিদ্ধ দীক্ষাগুরু প্রয়োজন।’ এরপর শ্রীমতি মিতালী রায় কেবলাজানের সাক্ষাতে ছুটে আসেন ধুপগুড়ি লজ্-এ। প্রথমইে আসসালামু আলাইকুম বলে কেবলাজানের হুজরায় প্রবেশ করলেন। কেবলাজানকে দেখামাত্র তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বলেনÑ ‘আপনি যে এখানে আসবেন আমি জানতাম না। লোকমুখে শুনেছি আপনার কথা। আমার সাত জনমের ভাগ্য যে, আপনার মত এক মহা মানবের দেখা পেলাম। আপনার বাণী আমি সকলের কাছে প্রচার করবো। আপনি শুধু আমাকে আর্শিবাদ করবেন।’ কেবলাজান মিতালী রায়কে জিজ্ঞেস করলেনÑ ‘মা, তুমি আমার কাছে কী আর্শিবাদ চাও? তিনি বললেনÑ ‘বাবা, আমি অত্র এলাকার বিধায়ক (এমএলএ)। আমার পার্টি বর্তমানে ক্ষমতায়। সরকার আমাকে অনেক ক্ষমতাও দিয়েছেন। আপনি শুধু আমার জন্য আর্শিবাদ করেন, যেন এই ক্ষমতার বলে আমার মনে কোন অহংকার প্রবেশ না করে।’ তাঁর এই অহংকারহীন মনোভাবে কেবলাজান খুশি হলেন। তখন আমাদের মনে হল, এই তো মনুষ্যত্ব। কত বড় জননেত্রী হয়েও অহংকারমুক্ত থাকার জন্য কেবলাজানের কাছে আর্শিবাদ চাইছেন! অথচ আমরা কয়জন আছি যারা, কেবলাজানের কাছে এমন বাসনা নিয়ে আসি? নিজেকেই এ প্রশ্ন করলাম!

এভাবে গ্রাম-শহর-উপশহর মিলিয়ে কেবলাজান প্রতিদিন প্রায় চার-পাঁচটি মাহফিল-ধর্মসভায় রাসুলুল্লাহ (সঃ)এর সত্য তরিকতের চির শান্তির বাণী প্রচার করেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো প্রায় প্রতিটি ধর্মসভা কিংবা মাহফিলেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ অসংখ্য মানুষের ঢল ছিলো। এবং তারা এসে কেবলাজানকে দেখার পর অনেকেই হাউমাউ করে কান্নাকাটি করতে লাগলো। আর বলতে থাকলো, গুরুদেব তোমাকে পেয়ে আমরা ধন্য, তুমি আমাদের জন্য আর্শিবাদ কর। কেবলাজানও অপরিসীম ধৈর্য্য নিয়ে তাদের সকলের দুঃখ সুখের কথা শুনতে লাগলেন। একজন মানুষও সাক্ষাৎ না করে যায়নি। এভাবে একের পর এক সবাইকে দোয়া-আর্শিবাদ করে তরিকতের ধ্যান ও আমল করতে বললেন। তাদের আকুতি দেখে বার বার মনে হয়েছিল, গুরু-মুর্শিদের আশেক-পাগল এ সকল মানুষ, না জানি কত দীর্ঘ সময় ধরে তীর্থের কাকের মত পথ চেয়েছিলেন। এতদিন তারা সত্যপথের সন্ধান না পাওয়ায় হন্যে হয়ে তাঁকেই যেন খুঁজছিলেন। আজ তাদের সেই প্রাণের পরমপ্রিয়-স্বজন সত্যপথের দিশারী খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানকে পেয়ে তৃষ্ণা মিটেছে যেন।

১৭ সেপ্টেম্বর শনিবার। ধুপগুড়ির ঘন লোকালয় রেখে কেবলাজান এবার যাত্রা করলেন এক দুর্গম জনপদের দিকে, যে দিকে ঘন অরণ্যের মধ্য দিয়ে নির্জন পথ। সেখানে জীব-জন্তুর অবাধে বিচরণ ভূমি। মাঝে-মধ্যে দূরে দু’একটি ঘর-বসতির রেখা দেখা যায়। এই জঙ্গলবাসী জীব-জন্তুর সঙ্গে লড়াই করে, এ অঞ্চলের মানুষকে জীবন ধারণ করতে হয়। এবার কেবলাজানের কাফেলা এসে থামলো বানারহাট থানার দুরামাড়ি গ্রামে।

এখানেই হয়েছে ধর্মসভার আয়োজন। এদিকটায় বেশ জন-বসতি আছে। কিন্তু অবাক হওয়ার মত ঘটনা! এখানকার মানুষ কেউই কেবলাজানকে আগে কখনো দেখেনি। শুধু ধুপগুড়ির মানুষের মুখে মুখে শুনেছে খাজাবাবা কুতুববাগীর আদর্শ ও গুণের কথা। আর শুধু কেবলাজানের ছবি মোবারক দেখেছে ‘আত্মার আলো’ পত্রিকার মাধ্যমে। এবার সেই অদেখা-অচেনা প্রিয় মানুষ-রতনকে চোখের সামনে পেয়ে আনন্দে যেন আত্মহারা তারা। অপলক চোখে চেয়ে অশ্রুতে বুক ভাসিয়ে, নিদারুণ যন্ত্রণা দূর করে পুণ্য পাওয়ার আশায় ব্যাকুল ছিল। মাহফিলে ছিল না কোন জাতি, ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ। মানুষ এক আল্লাহর সৃষ্টি। শুধু তারা জানতো না ধর্মের সঠিক পথ কোনটি? এবং সূফীবাদ কী? কেবলাজানকে দেখে এবং তাঁর পবিত্র বাণীতে এ জিজ্ঞাসার উত্তর তারা খুব সহজেই পেয়ে গেল। আর উপস্থিত অনেক মানুষ কেবলাজানের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলো। এরপর আকুতিভরে সবার একটাই চাওয়া ছিল, যেন এভাবে প্রতি বছর কেবলাজান তাদের মাঝে আসেন। এদের মধ্যে এত আদব, গুরুভক্তি এবং গুরুর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ, তা তাদের কথা ও কাজেরই আশ্চর্য মিলের দৃষ্টান্ত। (পরের সংখ্যায় শেষ হবে)

(Visited 11 times, 1 visits today)
Share