নাসির আহমেদ
পরিচিত অনেকেই প্রশ্ন করেন, কুতুববাগে কেন যান? সেখানে গিয়ে কী পান? তাদের ভাষ্যমতে, ঠিকমত নামাজ- রোজা করলে, আল্লাহকে ডাকলে আবার পীর লাগে নাকি? আর পীরের কথা কোরআনেও তো নাই। কোরআনে যে একাধিক জায়গায় মুর্শিদ শব্দটি আছে, আর মুর্শিদ শব্দটি আরবি ভাষা থেকে ফার্সি ভাষায় গিয়ে এই উপমহাদেশে পীর নামে পরিচিত হয়েছে, এ কথা আর কতজনকে বলবো? তবু কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে চাই। প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবার আগে কিছু প্রাসঙ্গিক কথা বলা যেতে পারে। সুফিবাদই যে শান্তির পথ, সে কথা আমাদের মহান মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে নিজেকে যেমন দিনরাত নিবেদিত রেখেছেন, তেমনই যারা তাঁর আশেক-জাকের তাদেরকেও তিনি সুফিবাদের দাওয়াত শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে দেবার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বের দেশে দেশে সেই দাওয়াত যাচ্ছে জাকের ভাই-বোনদের মাধ্যমে। একুশ শতকের আধ্যাত্মিক মহাসাধক খাজাবাবা সৈয়দ হযরত জাকির শাহ্ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি নিজে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা সফর করে মানুষকে সুফিবাদের দাওয়াত দিচ্ছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফর করছেন। অক্লান্ত তাঁর এই ভ্রমণ। তিনি বলেন, বাবারাÑ আমিও আমার মহান মুর্শিদের হুকুম পালন করছি মাত্র। আমিও আপনাদের মতো তরিকতের একজন কর্মী। অনেকে বলবেন তরিকত আবার কী? আরবি তরিকুন শব্দ থেকে তরিক। তরিক শব্দের অর্থ যে পথ, আর তা থেকেই, তরিকা বা জ্ঞানের রাস্তা, তা বুঝতে হলেও সুফিবাদের দীক্ষা গ্রহণ করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
যারা সুফিবাদ কী বুঝতে পারেন না, তাদের মনে অনেক খটকা থাকতেই পারে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ-রোজা পালন করার পর আল্লাহর হুকুম আহকাম মানলে আবার সুফিবাদ শিখতে পীরের কাছে যেতে হবে কেন? হয়তো এ কারণেই পরিচিতজনরা এমন কঠিন প্রশ্ন করেন। অনেকে এমনও বলেন, আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া একজন আধুনিক মানুষ, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শক্ত যুক্তি দিয়ে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের বিরুদ্ধে কলাম লেখেন, অন্ধ বিশ্বাসের কাছে গিয়ে কেমন করে আত্মসমর্পণ করেন? তাদের এ প্রশ্নেরও জবাব আশা করি এ লেখা থেকে তারা পাবেন। ইসলাম আর জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ যে এক জিনিস নয়, ইসলামের বিপরীতে এর অবস্থান, এই সত্যটুকু উপলব্ধি করলে হয়তো এমন শান্তির ধর্ম ইসলাম আর সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মিলিয়ে প্রশ্ন করতেন না। ধার্মিক হয়েও প্রগতিশীল হওয়া যায়। ধর্মের সঙ্গে প্রগতির বিরোধ নেই। ইসলামে তা বলে না।
পৃথিবীতে আস্তিক এবং নাস্তিক দুই শ্রেণির মানুষ আছেন। আস্তিকরা বিশ্বাস করেন, সর্বশক্তির উৎস আল্লাহ বা স্রষ্টা আছেন। ইহকালের পরে মরণোত্তর আর একটি জীবন আছে, যার নাম পরকাল। একদিন কিয়ামত হবে, ভালোমন্দ কর্মের বিচার হবে সেই পরকালে। ভালো কর্মের জন্য অনন্ত শান্তির জগতে বিরাজ করবে মানবাত্মা আর কুকর্ম বা পাপের জন্য অনন্তকাল অশান্তির অনলে জ্বলতে হবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ এবং তাঁর প্রেরিত রাসুল মহাপুরুষ নবীগণ আর আসমানি কিতাবের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করেন আস্তিকেরা।
পক্ষান্তরে নাস্তিক বা অবিশ্বাসীরা মনে করেন আল্লাহর অস্তিত্ব তারা স্বীকার করেন না। এমন কি মৃত্যুর পর যে আবার মানবাত্মার উত্থান হবে আর অন্য একটা জগতে বাস করবে এবং কর্মফল অনুসারে বেহেশত-দোজখ বা স্বর্গ-নরকে যেতে হবে, এসবের কোনো কিছুই তারা যৌক্তিক মনে করেন না। বিশ্বাসও করেন না। সুতরাং দুই শ্রেণির মানুষের দৃষ্টভঙ্গি দুই রকম। ইসলামসহ পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মই বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বসীদের জন্যই ধর্ম। অবিশ্বাসীদের জন্য নয়। সুতরাং আমরা যারা এক আল্লাহ এবং তাঁর প্রেরিত মহাপুরুষ সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) এর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি, পবিত্র কোরআন-হাদিস এবং কালেমাসহ ইসলামের যাবতীয় বাধ্যবাধকতায় বিশ্বাস স্থাপন করেছি, তাদেরকে কেমন করে গ্রহণ করবেন, যারা এসব বিশ্বাস করেন না? তাদের কাছে তো ‘অন্ধ বিশ্বাস’ মনে হবেই। কারণ, সর্বশক্তিমান আল্লাহ চর্মচক্ষে দৃশ্যমান কেউ নন। ধর্মমতে তিনি সর্বত্র বিরাজমান। শুধু নিমগ্ন অন্তরে সহি নামাজেই মমিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে। তাই কোরআন-হাদিস মতে ‘আল্লহর স্থান মমিন লোকের ক্বলব’ বা হৃদয়ে। আল্লাহর প্রেরিত নবীগণ, কোরআনসহ আসমানি কিতাবসমূহ এবং বেহেশত-দোজখ, এমন কি স্বয়ং আল্লাহও তো বিশ্বাসেরই বিষয়। সেজন্যই হয়তো বিখ্যাত এই প্রবাদ, বিশ্বাসে মিলায় স্বর্গ, তর্কে বহু দূর…। সত্যি তা-ই। ধর্ম বিষয়টা বিশ্বাসীদের জন্য বলেই কোরআন মজিদে “হে বিশ্বাসীগণ! হে মানবসকল” বলে মানবজাতিকে সম্বোধন করা হয়েছে।
পরিপূর্ণ বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ধর্ম। তাই যারা সর্বশক্তিমান স্রষ্টাকে বিশ্বাস করেছেন, তারা না দেখেই করেছেন। পরকালে বিশ্বাস করেন বলেই তারা পৃথিবীতে যা খুশি তা করতে পারেন না। কিয়ামত, শেষ বিচার ইত্যাদি বিষয়গুলো গভীরভাবে বিশ্বাস করেন। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কী গভীর বিশ্বাসে লিখেছেন :
“যেদিন রোজ হাশরে করতে বিচার তুমি হবে কাজী…
সেদিন তোমার দিদার আমি পাবো কি আল্লাজী ॥
——————————-
আমি তোমায় দেখে হাজারো বার দোজখ যেতে রাজি ॥”
যা-ই হোক, শুধু নজরুল নন, রবীন্দ্রনাথ, ওমর খৈয়াম, মির্জা গালিব, মাওলানা রুমী, শেখসাদী (রহ:), এমন অনেক বিশ্ববিখ্যাত কবি-সাধক ছিলেন গভীরভাবে আস্তিক তথা একেশ্বরবাদী। রবীন্দ্রনাথের মতো কবি লিখলেন ‘আমার মাথা নত করে দাও হে প্রভু তোমার চরণ তলে…।’ এঁদের মধ্যে রুমী, খৈয়াম, গালিব, শেখসাদীর মত কবিরা ছিলেন পীর বা মুর্শিদে বিশ্বাসী। এক কথায় সুফিবাদে দীক্ষিত প্রেমময় সাধক। সেই প্রেম একদিকে আল্লাহপ্রেম, অন্যদিকে মানবপ্রেমও। এই প্রেমের তাৎপর্যও অতুলনীয়। সেই মানবপ্রেমের শিক্ষা ইসলামে একমাত্র সুফিবাদেই পাওয়া যায়। তাইতো দেখি শেখসাদী (রহ:) এর একটি কবিতার অনুবাদ এরকম:
“তসবিহ আর পাগড়ি দেখে এলাহী ভুলবে না
মানবসেবার পুঞ্জি ছাড়া স্বর্গদুয়ার খুলবে না।”
তাহলে কী? শুধু শরিয়তে মুক্তি মিলবে? মহান সুফিসাধক কুতুববাগীর দরবারে কেন আসবেন, তার উত্তর এরই মধ্যে হয়তো অনেকে পেয়ে গেছেন। তারপরও আরো কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। শুধু কি প্রেম পেতে আর প্রেম বিলাতেই এখানে আসি? না, আরো অনেক কিছু এখানে পাওয়া যায়। “সুফিবাদই শান্তির পথ” খাজাবাবা কুতুববাগীর এ মহান বাণীর গূঢ় অর্থ কী? এ প্রশ্নের উত্তরও জানা সম্ভব তাঁর সোহবতে এলেই। কুতুববাগে এলে ইসলামের পরিপূর্ণ আদর্শ শেখা যায়। ডিগ্রিধারী এক শ্রেণির মাওলানা আছেন, আলেম আছেনÑ যারা সুফিবাদের সমালোচনা করেন, অলি-আল্লাহর মাজার জিয়ারত নাজায়েজ বলেন। এমন কি যাঁকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আঠারো হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করতেন না, সেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স:)-এর শানে দাঁড়িয়ে দরূদ বা মিলাদ শরীফে কেয়াম করাকেও “বেদাত” বলতে এতটুকু বুক কাঁপে না এই আলেমদের। আসলে তাদের দোষ দেয়া যায় না, এ তাদের বদনসিব। তারা ইসলামের প্রকৃত স্বাদ এবং নবীপ্রেম থেকে বঞ্চিত। এই শ্রেণির মাওলানারা শুধু শরিয়ত মানাকেই ইসলাম মনে করেন। কোনো অলির কাছে তারা দীক্ষা গ্রহণ করলে জানতেন, শুধু শরিয়ত ইসলাম নয়, মারেফতের জ্ঞানও লাগে। শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফত, এই চারটি বিষয় নিয়েই যে পরিপূর্ণ ইসলাম, সে সত্য কুতুববাগে এলেই প্রাকটিক্যালি শেখা যায়। শুধু থিউরি দিয়ে ইসলাম হয় না। ধর্মের থিউরি অনেক ধর্মতত্ববিদ জানেন, যাদের কেউ কেউ অমুসলিমও রয়েছেন। যারা তরিকত কিংবা মারেফত বোঝেন না বা বুঝতেও চান না, তারা ক্বলব কী জিনিস, তা কী করে বুঝবেন? মোরাকাবা বা ধ্যান ইংরেজিতে যাকে মেডিটেশন বলে, তা-ই বা জানবেন কেমন করে? অথচ ইসলাম এসেছে মোরাকাবার ভিতর দিয়েই।
ইসলামের ইতিহাস পড়লেই জানা যায় আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) পঁচিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত টানা পনেরো বছর মক্কার হিরা পর্বতের গুহায় বসে গভীর নিমগ্নতায় দিনের পর দিন মোরাকাবা বা ধ্যান করেছিলেন। সেই ধ্যানের মধ্যেই আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধুর কাছে জিব্রাইল ফেরেশতার মাধ্যমে ওহি পাঠাতেন। এভাবেই আল্লাহ তাঁর বন্ধু আখেরী নবীকে সর্ববিষয়ে গভীর জ্ঞানী করেছিলেন জিব্রাইলের মাধ্যমে সিনার এলেম পাঠিয়ে। নবুয়ত লাভ তো বটেই, এমন কি পবিত্র কোরআনও নাযিল করেছেন এই ধ্যানের যুগেই। নামাজ-রোজা এসেছে নবুয়তলাভের পরে যখন তিনি মিরাজ শরীফে গেলেন আল্লাহর সঙ্গে দিদারের জন্য। এই মিরাজও তো মোরাকাবার ফলেই সম্ভব হয়েছে। জিব্রাইল (আ:) যে শিক্ষা আল্লাহর নির্দেশে আখেরী নবীকে দিয়েছিলেন, সেই এলেম বা জ্ঞানই সিনার এলেম! এখানেই তো মারেফতের তত্ব লুকিয়ে আছে। আল্লাহর প্রিয় বন্ধু হযরত মুহাম্মদ (স:) কোনো স্কুল, মাদ্রাসা বা কলেজে পড়েছেন? সেকালে তো এমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমগ্র আরব জাহানেই ছিলো না। ওই সিনার এলেমের শক্তিতেই সর্ববিষয়ে জ্ঞানী হয়ে বিশ্বনবী বিশ্বজয় করে গেছেন।
প্রেমময় নবীর অনুসারি সাহাবাগণ কীভাবে তাঁকে ভালোবাসতেন, তা বুঝতে হলেও কোনো কামেল মুর্শিদের সান্নিধ্যে যেতে হবে। দেখতে হবে মুরিদরা কীভাবে সেই প্রেমের ঐতিহ্য আজো অনুসরণ করে চলেছেন। মসজিদে নববীর বারান্দায় দিনরাত বসে বসে রাসুলপ্রেমে মশগুল আসহাবে সুফফা ও আহলে সুফফাগণ যে গভীর প্রেমের পরিচয় রেখে গেছেন, তার কোন তুল না নেই। সেই বিশ্বশ্রেষ্ঠ মুর্শিদ বা পথপ্রদর্শকের প্রতি প্রেমের মধ্য দিয়েই মানবপ্রেমের শিক্ষা সুফিরা বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন। কেন না প্রেমেই শান্তি। তাই খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর বলেন : ‘আল্লাহকে পাওয়ার দুটি পথ, প্রেম আর ইবাদত।’ প্রেমের মধ্য দিয়েই সুফিসাধক অলি-আল্লাহগণ বিশ্বময় ইসলামের ভ্রাতৃত্ব, শান্তি আর তৌহিদের অমিয় বাণী প্রচার করেছেন। এই উপমহাদেশে তো ইসলাম এসেছে অলি-আল্লাহদের হাত ধরেই। সুফিরা সংঘাত সমর্থন করেন না। প্রেম দিয়েই তাঁরা অসাধ্য সাধন করেন। সবকিছু জয় করেন। সব মানুষকে ভালোবাসতে শিখান। ধনী-গরিব সবার জন্যে তাঁদের সেবা আর ভালোবাসার দুয়ার খোলা।
এই দৃশ্য দেখতে হলে কুতুববাগ দরবারে আসতে হবে। মানবসেবাই যে পরম ধর্ম, তা-ও এখানে প্রত্যক্ষভাবে শেখা যায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, নামাজ শেষে তসবিহ, মোরাকাবা, মোশাহেদা, রাতের শেষপ্রহরে আল্লাহর রহমতের তিন নাম ধরে কান্নাকাটি করে ডাকা, তাহাজ্জুত নামাজ আদায় শেষে ফজরের নামাজ ও তসবিহ-তাহলিল এ সবইতো এই দরবার শরীফে এসে শিখছেন মুরিদরা। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের ক’জনার নামাজ সহি হয়? যে নামাজে আল্লাহর সঙ্গে দিদার হওয়ার কথা (আসসালাতু মেরাজুল মোমেনিন) সেই নামাজ কীভাবে পড়তে হয়, তা কুতুববাগে না এলে কেমন করে শিখতেন এই দরবারের মুরিদরা? নিমগ্ন চিত্তে আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে চোখ বন্ধ করে সালাত আদায় করা না হলে প্রকৃত নামাজ হয় না। নামাজও এক ধরনের মোরাকাবাব। আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, এবাদতে হুজুরি না হলে সব এবাদতই বৃথা। আফসোস, বিপুলসংখ্যক মানুষ ইসলাম ধর্মের এই অনিবার্য শিক্ষার কথা জানেন না। আমরা অনেক ভালো ভালো কথা বলি, বাস্তবে তা পালন করি না। এখানে এলে দেখা যায় বাস্তবেই ভালো কাজ করা সম্ভব। কুতুববাগে চব্বিশ ঘন্টা লঙ্গরখানার চুলায় আগুন জ্বলে, দিন-রাত্রি জাকের মুরিদ ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ এখানে খানা খেতে পারেন। অনেকে আছেন শুধু একটু তবারক খেতেই দরবার শরীফে আসেন। প্রশ্নহীন তারা খেয়ে চলে যান। হাজারো জাকের খেদমত দেন, লক্ষ জাকের খান। শীতে বিনামূল্যে দেয়া হয় বস্ত্রহীনদের জন্য শীতবস্ত্র। এখানে এসে নিষ্ঠুর হয়ে যান দয়ালু। কৃপণও দাতা হন। বেনামাজী নামাজি হন। বেরোজদারী রোজা রাখতে শুরু করেন। শরাবখোর শরাব ছেড়ে দেন। গীবত করা ভুলে যান। কারণ, খাজাবাবার শিক্ষাÑ বাবারা অন্যের দোষ দেখার আগে নিজের দোষ তালাশ করেন। গীবতের মতো ঘৃণ্য কাজ, পরনিন্দা কেউ করবেন না। বড়কে শ্রদ্ধা করবেন, ছোটকে স্নেহ করবেন, মা-বাবাকে খেদমত করবেন, ক্ষুধার্ত মানুষ পেলে খাওয়াবেন, মা-বোনদের পর্দায় রাখবেন, ইজ্জত দিবেন, নিযমিত নামাজ পড়বেন, অজিফা আদায় করবেন। সব কিছুতে সবুর করবেন। সবরকারীর সঙ্গে আল্লাহ আছেন। আত্মশুদ্ধির এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবো না কেন?
লেখক : কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট
খাদেম, কুতুবাগ দরবার শরীফ