সেহাঙ্গল বিপ্লব ও বাদল চৌধুরী (প্রতিবেদক : আত্মার আলো )
‘সুফিবাদই শান্তির পথ’ এই অমিয় সত্য বাণীকে বুকে ধারণ করে খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর বিশ্বের সকল মানুষকে শান্তির পথে আহ্বান করছেন। ইসলাম ধর্মের সত্য তরিকা প্রচারের লক্ষ্যে সুফিবাদের পতাকাতলে জমায়েত হয়ে ইসলামের খেদমত করার ধারাবাহিকতায় কুতুববাগ দরবার শরীফ জামে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন, কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর। পরমকরুণাময় আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানীতে গত ৩০ আগস্ট, রোজ শনিবার বাদ জোহর নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন (পুরাতন রেল স্টেশন সংলগ্ন) কুতুববাগ দরবার শরীফ জামে মসজিদের শুভ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। জামে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, লক্ষ লক্ষ আশেক-জাকেরদের নয়নমণি, মাথার মুকুট, আরেফে কামেল,মুর্শিদে মোকাম্মেল, হাদিয়ে জামান, জামানার মুরাদ ফকির দয়াল খাজাবাবা শাহসুফি আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ হযরত জাকির শাহ নকশবন্দি-মোজাদ্দেদি মাদ্দাজিল্লুহুল আলি কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর। ঐদিন সকাল ১০টায় কুতুববাগ দরবার শরীফ ৩৪ ইন্দিরা রোড, ফার্মগেট, ঢাকার সদর দপ্তর থেকে অসংখ্য আশেকান, জাকেরান ও ভক্ত মুরিদানদের সঙ্গে নিয়ে গাড়ীর বিশাল (কাফেলা) বহর নিয়ে, বন্দর দরবার শরীফের অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আগে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ও অত্র এলাকার ভক্ত-মুরিদের অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে ওঠে। এত মানুষ তবু কোথাও কোনো উঁচু শব্দ নেই। একটু পরেই দরবারের বর্তমান মসজিদে জোহরের আজানের ধ্বনি ভেসে উঠলো। আজান শেষে মাইকে ঘোষণা এলো, সবাইকে অজু করে মাঠে নামাজে যাওয়ার জন্য। বিশাল মাঠ, যেই স্থানে মসজিদ নির্মাণ হবে। সেখানে পাটের চট বিছিয়ে দেয়া হয়েছে, তার উপরে সবাই একই জামাতে ক্বেবলাজান হুজুরের সঙ্গে নামাজ আদায় করলাম। দুপুর বেলা কড়া রৌদ্র আকাশের দিকে তাকালাম দেখি কোথাও তেমন মেঘ নেই। শুধু একফালি মেঘ পূর্ব পশ্চিম দিকে আড়াআড়ি হায়ে আছে। দেখতে প্রায় চারকোণা, মঞ্চের ঠিক পিছনে দক্ষিণে স্থীর হয়ে আছে, এরপর অনেক সময় ধরে লক্ষ্য করছি। হাল্কা বাতাসও উড়ছে কিন্তু মেঘ সরছে না। সুন্দর মনোরম পরিবেশ, মাইকে ভেসে আসছে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক কুতুববাগ মোজাদ্দেদিয়া বাণী প্রচার কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. মীর্জা মাহাবুব বাচ্চু, তিনি বিনীতভাবে ক্বেবলাজান হুজুর মঞ্চে আগমনের আগাম বার্তা জানিয়ে দিচ্ছেন। আশেক-জাকেরেরা দুইপাশে সারিবদ্ধ হয়ে দরবার থেকে শুরু করে মঞ্চ পর্যন্ত অতি আদব ও শৃংখলার সঙ্গে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। এরইমধ্যে ক্বেবলাজান হুজুর বিশিষ্ট ভক্ত অতিথিদের নিয়ে ফুলে ফুলে সাজানো মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন।
শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন, কুতুববাগ মোজাদ্দেদিয়া বাণী প্রচার কমিটির সম্মানীত উপদেষ্টা, সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত আলহাজ্ব হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ক্বেবলাজানের কাছে আসি, ওঁনার কাছে আসলে আমি শান্তি পাই। আপনারা জানেন আমি অনেক পীরের মাজার-দরবারে গিয়েছি কিন্তু এখানের মত আমি কোথাও দেখিনি। কী সুন্দর নিয়ম শৃংঙ্খলা। আমি ক্বেবলাজানের কাছে শিখছি, ওঁনার যে জ্ঞান তা পৃথিবীতে খুব কম মানুষেরই হয়। আল্লাহ ওঁনাকে বিশাল জ্ঞান দান করেছেন। তিনি আরো বলেন, সারাপৃথিবীতে এখন মুসলমানদের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে দরকার সুফিবাদের শিক্ষা, কারণ সুফিবাদে কোনো হানাহানি, মারামারি নেই। সুফিবাদ শান্তির কথা বলে। তাই সারাবিশ্বে এখন সুফিবাদের শিক্ষা জরুরি হয়ে পড়েছে। এখানে একটি সুন্দর মসজিদ নির্মাণ হবে। এখানে সুফিবাদ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় হবে। তিনি মাসিক ‘আত্মার আলো’র প্রসংশা করে বলেন, ক্বেবলাজান হুজুর খুব সুন্দর একটি পত্রিকা বের করেন, ‘আত্মার আলো’ এই পত্রিকাটি আপনারা নিয়মিত পড়বেন, অনেক কিছু জানতে পারবেন, শিখতে পারবেন। আমিও নিয়মিত পড়ি।
খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান হুজুর তাঁর মহা মূল্যবান নসিহত বাণীতে বলেন, দয়াল নবীর সত্য তরিকার খেদমতে আমিও আপনাদের মত কর্মী। আপনারা হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তরিকার প্রচারের কাজ করে যাবেন। এক জাকের ভাই আরেক জাকের ভাইয়ের সঙ্গে মিল মহব্বত রাখবেন। পীরের দেয়া অজিফা আমল করবেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন। আরো বলেন, জাকেরেরা অত্যন্ত কষ্ট স্বীকার করে দূর দূরন্ত থেকে আসছেন, সবাই তবারক খেয়ে যাবেন, কেউ না খেয়ে যাবেন না। তিনি বলেন, এই প্রচ- গরমের মধ্যে জাকেররা কষ্ট করছে আল্লাহ, দোয়ার আগে বৃষ্টি হলে নাকি দোয়া কবুল হয় আল্লাহ। তুমি তোমার রহমতের চাদর দিয়া আমার আশেক-জাকেরদের ঢেকে রাখো আল্লাহ। তুমি তাদের নেক আশা পূরণ করো আল্লাহ। আমি আকাশের দিকে তাকালাম সত্যি তখনো সেই আগের স্থানে একখ- ঘনো কালো মেঘ ছাড়া আকাশের কোথাও মেঘ নেই কিন্তু হঠাৎ আকাশে একটা গুমোট ভাব দেখা গেল। এরপর ক্বেবলাজান ভক্ত অতিথিদের নিয়ে কুতৃুববাগ দরবার শরীফ জামে মসজিদের শুভ ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করে মোনাজাত শেষ, প্রায় একশো গজ হেঁটে দরবার শরীফের দরোজায় কদম রাখার সঙ্গে সঙ্গেই বড় বড় ফোটার এক পসলা বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিলো! মাত্র কয়েক মিনিটের এই বৃষ্টি উপস্থিত সবার মধ্যেই সস্তির হাওয়া বইয়ে গেল। লক্ষ্য করলাম মঞ্চের পিছনের সেই মেঘ এখন আর নেই। সবাই বলাবলি করছিল, মানুষের পায়ে পায়ে যেভাবে মাঠের বালু উড়ছিলো, বৃষ্টি না এলে তবারক খাওয়া কষ্টের ছিল। অনেকেই বলছিল, এটা আল্লাহর অলির দরবার এখানে কোনো কিছুর সমস্যা হয় না। আল্লাহর তরফ থেকে সুন্দর পরিচ্ছন্নভাবে সব ব্যবস্থা হয়ে যায়।
এ কে এম সেলিম ওসমান এমপি‘র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরোও উপস্থিত ছিলেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, শামীম ওসমান এমপি, মোঃ নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, আবদুল মান্নান এমপি, জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু, পীরজাদা আলহাজ্ব মীর হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী, এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান হারুন-উর রশিদ, কুতুববাগ মোজাদ্দেদিয়া বাণী প্রচার কমিটির সভাপতি ও ইউনুছ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুছ, কুতুববাগ মোজাদ্দেদিয়া বাণী প্রচার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও আল জয়নাল গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জয়নাল আবেদিন-সহ দরবারের বিশিষ্ট খাদেম ও ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, দরবার শরীফের মোজাদ্দেদিয়া ওলামা মিশনের প্রখ্যাত আলেম মুফতি গোলাম আম্বিয়া ও এ্যাড. মির্জা মাহ্বুব বাচ্চু।