সাবেক রাষ্ট্রপতি আলহাজ্ব হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
উপস্থিত খাজাবাবা কুতুববাগী এবং আশেকান, জাকেরান ভাইয়েরা এবং পর্দার আড়ালের বোনেরা আস্সালামু আলাইকুম।
সর্ব প্রথমে আল্লাহর দরবারে হাজার শুকরিয়া আদায় করছি। হাজার দরুদ পাঠ করছি আমাদের প্রিয় নবী (স.)-এর সমীপে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি আমাদের ক্বেবলাজান হুজুরকে। ভালোবাসা জানাচ্ছি আমার আশেকান ভাই-বোনদের। একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আজকে শুক্রবার পবিত্র দিন, রাসুলেপাক (স.) বলেছেন, শুক্রবার মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন। অতএব, এটি একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এই বিশেষ দিনে আমরা ক্বেবলাজান হুজুরের কাছ থেকে মোনাজাত শুনবো, উনি বিশ্ববাসীর শান্তি ও কল্যাণের জন্য দোয়া করবেন। তাই সে জন্য বলবো, আজকের এই দিনটি অতি ফজিলতপূর্ণ দিন।
পৃথিবী বদলে যাচ্ছে, আগের পৃথিবী নেই। মানুষ দিন দিন পথভ্রষ্ট হচ্ছে। পথ হারিয়ে ফেলছে, নামাজ ছেড়ে দিচ্ছে, পাপের পথে এগিয়ে চলেছে। সেই পথ থেকে মানুষকে সৎ পথে ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় হলো সমাজের কামেল পীর সাহেবরা। ওনাদের কাছে গেলে যে নসিহত ওনারা করবেন, তাতে মানুষের জীবন পরিবর্তন হবে। আমি যখন রাষ্ট্রপতি ছিলাম তখন থেকে আজ পর্যন্ত বিপদে-আপদে পীর সাহেবদের দরবারে ছুটে গিয়েছি এবং আমার মনে হয় তাঁদের দোয়ার কারণে আমি বেঁচে আছি। ভালো আছি। হাদিসে আছে, যে মানুষকে দেখলে আল্লাহর কথা মনে হয়, যে মানুষকে দেখলে রাসুলেপাকের (স.) কথা মনে পড়ে, যে মানুষকে দেখলে পরকালের কথা মনে হয়, তিনিই যথার্থ অলি! আমার প্রশ্ন, ক্বেবলাজান হুজুরকে দেখলে সে কথা মনে হয় কি না? এত সুন্দর চেহারা! এত সুন্দর ভাবগাম্ভীর্যের চেহারা! এমন সুমধুর কণ্ঠ! ওনাকে দেখলে পরকালের কথা মনে হয়, রাসুলেপাকের কথা মনে হয়, আল্লাহপাকের কথা মনে হয়।
আমি এখানে আসি বহুদিন থেকে সত্য কথা, তিনি আমাকে আদর করেন, ভালোবাসেন। আমার থেকে বয়সে ছোট হলেও তিনি আমাকে সন্তান বলে গ্রহণ করেছেন। এর চেয়ে গর্ব আর কী হতে পারে? একজন অলি-আল্লাহর সন্তান, এটাই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়। একটু আগে তিনি বলছিলেন, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল কাবা শরীফের ভিতরে যাওয়ার। দুইবার গিয়েছি। আরেকটা সৌভাগ্য হয়েছিল রওজাপাকের ভিতরে রাসুলপাকের যে কবর আছে সে কবর জিয়ারত করার, সুযোগ হয়েছিল হাতে পবিত্র কবর স্পর্শ করার। এই সৌভাগ্য খুব কম মুসলমানের হয়। ওনাকে দেখলে পরকালের কথা মনে হয় আমার মনে হয় সেই কারণেই আল্লাহপাক আমাকে ভালো রেখেছেন। বাঁচিয়ে রেখেছেন।
একটা কথা, রাসুলেপাকের পর আর কোনো রাসুল আসবেন না কেয়ামত পর্যন্ত। পীর-মাশায়েখ যাঁরা আছেন, তাঁরাই আমাদের পথ দেখাবেন। তাঁরাই আমাদের জীবনের আলো দেবেন। তাই প্রত্যেকটি মানুষকে আমি আবেদন করবো খাঁটি পীরের দরবারে যান; তাঁদের কথা শুনুন, পরামর্শ শুনুন, নছিহত শুনুন, নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালিত করুন। আমাদের জীবন সুন্দর হবে। সারা পৃথিবীতে মুসলমানরা আজ বিপদের সম্মুখীন, সমস্ত মুসলমানের দেশে আজ বিশৃঙ্খলাÑ লিবিয়া বলেন, সিরিয়া বলেন, প্যালেস্টাইন বলেন, আফগানিস্তান বলেন, ইরাক বলেন; সমস্ত মুসলমানের দেশে আজ বিশৃঙ্খলা। আমাদের মুসলামনের দেশ; আমাদের দেশে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়। সেদিকেও আমরা দৃষ্টি রাখবো। আমরা সবাই ভাই ভাই হয়ে বাস করতে চাই। আমরা সবাই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে নিজেদেরকে আবদ্ধ রাখতে চাই। আমাদের মধ্যে ভেদাভেদ থাকবে না। সেই প্রতিশ্রুতি হোক আজকের দিনে। আমরা প্রমাণ করবো, মুসলমানের রাষ্ট্র হলেও আমাদের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলা নেই।
আমি এখানে বারবার আসি, সেই কারণে বলছি, বিপদে-আপদে পীর ক্বেবলাজান আমাকে সাহায্য করেছেন। বড় বিপদে পড়েছিলাম, কুতুববাগী পীর ক্বেবলাজান আমাকে সাহায্য করেছেন। উনি আমাকে বিপদমুক্ত করেছেন। ওনার কাছে আসেন, বিপদে-আপদে আসেন, বিপদমুক্ত হবেন। খাজাবাবার দোয়া পাবেন, আমার ব্যক্তিগত জীবন থেকে আমি এই কথাগুলো বলছি। প্রত্যেকটি দরবারে গিয়েছি, আমি এত সুন্দর দরবার কোথাও দেখিনি। এত সুশৃঙ্খল দরবার কোথাও দেখিনি। খাজাবাবার মতো এত সুন্দর মানুষ কখনও দেখিনি। আসুন, আমরা সবাই মিলে ওনার কাছে দোয়া চাই। একটু পরে মাহফিলে উনি মোনাজাত করবেন আমাদের জন্য, যেন আমাদের জীবন ওনার মনের মতো করে সাজাতে পারি। আমাদের জীবন যেন সুন্দর হয়, আল্লাহর কাছে সেই দোয়াই চাইবো। উপস্থিত হুজুরক্বেবলাজান হাজার বছর বেঁচে থাকুন। হাজার বছর বেঁচে থাকুন। কোটি কোটি মানুষের জীবন সুন্দর হোক ওনার দোয়ায়। বাবার কাছে দোয়া চেয়ে, আপনাদের কাছে দোয়া চেয়ে আমার বক্তব্য শেষ করলাম। ইনশা আল্লাহ আবার দেখা হবে। আস্সালামু আলাইকুম।
আলহাজ্ব হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি
অনুলেখক: প্রচারক/প্রতিবদক আত্মার আলো