কুতুববাগী কেবলাজানের বড় কেরামতি মানুষের অন্তরকে শুদ্ধ করানো

সাইফুল ইসলাম দীপক

অসংখ্য মানুষ খাজাবাবা কুতুববাগীর সান্নিধ্যে এসেছেন, তাদের মধ্যে অনেকেরই একাধিকবার খাজাবাবার বিভিন্ন অলৌকিকতা দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। মাসিক ‘আত্মার আলো’তে কেউ কেউ তা সুন্দরভাবে বর্ণনাও করেছেন। যারা ‘আত্মার আলো’র নিয়মিত পাঠক তারা নিশ্চয়ই এ কথা জানেন। অলি আল্লাহগণ এইসব অলৌকিক ঘটনা ঘটানোর ক্ষমতা আল্লাহর কাছ থেকে পেয়ে থাকেন। আউলিয়াদের এমন ঘটনাকেই কেরামতি বলা হয়। কেউ হয়ত কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন, কেউ পেয়েছেন বড় বিপদ থেকে রক্ষা। কারো বেড়েছে জমিতে ফসল, আবার কারো ব্যবসায় উন্নতি। অবিশ্বাসীরা ভাবতে শুরু করেছেন তিনি কীভাবে এসব করবেন? তিনি কি অলৌকিক শক্তির অধিকারী? মুরিদ হওয়া তো শিরক! কিছু কিছু মানুষ আছে তারা মনের করেন পীরের কাছে যাওয়া শিরক! তারা কথায় কথায় শিরক খুঁজে পায়। শিরকের গন্ধ পায়। আমার কথায় বিরক্ত না হয়ে একটু শুনুন! খাজাবাবা কুতুববাগী কিন্তু কখনোই বলেননি যে, তিনি অলৌকিক শক্তিধর কেউ? খাজাবাবা বলেছেন, ‘আমি আল্লাহতায়ালার কাছে মুরিদের জন্য রহমত, বরকত ও নিয়ামত চাই, সবার জন্য প্রার্থনা করি আল্লাহর কাছে। মহান আল্লাহ কখনো কখনো তা কবুল করেন। এতে করে মানুষ উপকৃত হয়। এখন সন্দেহকারীদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, তিনি দোয়া করলেই কি আল্লাহ দিবেন? আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, হ্যাঁ দিবেন! যদি আপনি সরল বিশ্বাসে তা গ্রহণ করেন। এখানে বিশ্বাসই হল বড় কথা। শক্ত বিশ্বাস না থাকলে জগতে আসল কিছুই পাওয়া যাবে না। আর তাই তো কোন এক সাধক বলেছেন, ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’। কিছু মানুষ আল্লাহর প্রেমময় নাম জপের ভিতর ডুবে থাকেন। সকল সময়, সকল অবস্থায় আল্লাহর অলি-বন্ধুগণ আল্লাহর সরণে থাকেন। তাঁরা আমাদের মত দুনিয়াদারীতে আসক্ত নন। দুনিয়াতে তাঁরাও সংসারধর্ম পালন করেন, এটাই আল্লাহর শরিয়তি বিধান। কিন্তু তাঁদের দুনিয়াদারীতে কোনো মোহ নাই। যদি সাধনার বলে আপনার কখনো এমন অবস্থা হয়, তখন কারো জন্য আপনি দোয়া করলে আল্লাহতায়ালা তা নিশ্চয়ই শুনবেন। এটা হল বিশ্বাসের জগত। বিশ্বাস করলে আছে,না করলে নাই। এখন বাকিটা আপনার ইচ্ছাশক্তির ব্যাপার। আল্লাহ তো সেই স্বাধীনতা ও বিবেক বুদ্ধি আমাদের দিয়েছেন।

আমিও বেশ কয়েক বছর ধরে খাজাবাবা কুতুববাগীর সান্নিধ্যে আছি। আমার ব্যক্তিগত জীবনে অনেকবার অনেক অলৌকিক ঘটনা দেখেছি, সে সব ঘটনা বলতে চাচ্ছি না। যাদের জীবনে এমন ঘটেছে, শুধু তারাই বুঝতে পারবেন। ইদানিং মনে হচ্ছে, এ সব অলৌকিক ঘটনা আসলে খাজাবাবা কুতুববাগীর মত কামেল মুর্শিদদের কাছে তেমন কোনো বড় কেরামতি নয়। সবচেয়ে বড় কেরামতি, তিনি মানুষের আত্মার কু-স্বভাব পরিবর্তন করিয়ে দিতে পারেন। আত্মাকে শুদ্ধ করার কৌশল দিতে পারেন। মানুষের অন্তরের পরিবর্তনটাই হল আসল। আল্লাহভোলা মানুষকে আল্লাহর রাস্তায় আনতে পারেন। আল্লাহর ভয় মানুষের মনে তৈরি করতে পারেন। মনে হতে পারে এটা সহজ কাজ, কিন্তু আসলে সহজ নয়। মানুষের অন্তর পরিবর্তন করা সবচেয়ে কঠিন কাজ। নিজে নিজে সারাজীবন চেষ্টা করেও অনেক সময় একটা কু-খাসলতের পরিবর্তন করা যায় না। লোক দেখানোর মত পরিবর্তন করা হয়ত যায়। কিন্তু লোক চক্ষুর আড়ালে, সেই স্বভাব চরিতার্থ করা থেকে সব সময় বিরত থাকা সম্ভব না। এ কাজ একমাত্র কামেল মুর্শিদগণ পারেন। তাঁরা মানুষের কঠিন থেকে কঠিনতর খাসলতের পরিবর্তন করাতে পারেন। আল্লাহ তাদেরকে সেই শক্তি দান করেছেন। এখন কথা হল, অনেকেই তো অলি-আল্লাহর, পীর-মুর্শিদের দরবারে যান, তা হলে সবার হয় না কেন? তার কারণ আমরা নিজেরাই। আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে। কামেল মুর্শিদরা তো পথ দেখান। কিন্তু আমি নিজে যদি সেই পথে না চলি, চেষ্টা না করি, তাহলে ফল পাবো কিভাবে? সাধকের গানে বলেÑ ‘চাইতে জানলে রয় না কাঙ্গাল, মুর্শিদ তোমার দরবারে…’। আবার মনে হতে পারে আমি তো নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, ইসলাম ধর্মের অন্যান্য হুকুম মেনে চলি। তাহলে আত্মা শুদ্ধ করার দরকার আছে কি? আত্মা শুদ্ধ না হলে দিল বা অন্তর জাগ্রত হবে না। আর অন্তর জাগ্রত না হলে, নামাজে বা ইবাদতে হুজুরি হবে না। হুজুরি হল এমন এক অবস্থা, যাতে মনে হবে আল্লাহ আমার সামনে হাজির-নাজির আছেন। মনে হবে আমি আমার মালিকের সামনে উপস্থিত। তখন অন্য কোনো কিছুই আর মনে থাকবে না। আর মনের এই অবস্থা ছাড়া কোনো ইবাদতই আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। খাজাবাবা কুতুববাগী বলেনÑ ‘আল্লাহ দেখেন বান্দার মনের হাল। আত্মা যদি শুদ্ধ না হয় তবে নিয়ত শুদ্ধ হবে না। আর নিয়ত শুদ্ধ না হলে, ওই নামাজ রোজার কোনই ফল নাই’। অনেকেই বলেন, নিয়মিত নামাজ পড়তে পড়তেই হয়ে যাবে এমন অবস্থা। কিন্তু আমি দেখেছি অনেক মানুষ হয়ত ত্রিশ-চল্লিশ বছর ধরে নামাজ পড়ছেন, কিন্তু তাদের মধ্যে সেই হাল দেখা যায় না। ভাবছেন আমি কি করে বুঝলাম। এটা খুবই সহজ ব্যাপার, কারণ আমি দেখেছি, যে মানুষের মধ্যে আল্লাহর হুজুরি আছে, তাঁদের স্বভাব-চরিত্র, ওঠা-বসা, আচার-ব্যবহারই অন্যরকম। তাদের মধ্যে কোনো অহংকার নাই। কোনো কাজে আদবের খেলাপ হয় না। তাঁদের কথায় মধু থাকে, দৃষ্টিতে মায়া থাকে। যা না দেখলে বোঝা যায় না। আমার মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগীর মধ্যেও আমি এর সব গুণই দেখি। যে সব মানুষের অন্তরে সামান্য হুজুরি এসেছে, তাঁদের মধ্যে এসব বৈশিষ্ট্য কিছুটা হলেও চলে আসে। যেমন চুম্বকের সাথে লোহা লাগলে লোহাও চুম্বকে পরিণত হয়। আর এই হুজুরি বা কোমল অবস্থা অন্তরে হাসিল হওয়ায় আল্লাহর অলি ও সূফী সাধকগণ সর্বাবস্থায় একটা অনাবিল শান্তির জগতে বাস করেন।

আসলে আমাকে আজকাল এই লোভে ধরেছে। আমি জানি, আমি পাপী, অধম, গুনাহ্গার। তারপরেও মন চায় আহা! যদি আমার আত্মা এই রকম পরিস্কার হত, সাদা হত! তা হলে সেই শান্তির জগতের সন্ধান পেতাম। জীবনের অনেকটা সময় গুনাহ্র কাজে পার করলাম। কাজের কাজ কিছুই হল না। আমার মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগীর পবিত্র জবানে শুনেছি, ‘আল্লাহ বলেন, তোমরা আমার রহমত থেকে নিরাশ হইও না’। এ কথায় বিশ্বাস রেখে আল্লাহর জিকির ও ইবাদত বন্দেগি করার চেষ্টা করি, আর এ সবই প্রতিনিয়ত আমার দীক্ষাগুরুর কাছে শিখছি ।

আল্লাহর মনোনীত আউলিয়াগণ আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী। তাই তাঁরা মানুষের অন্তর থেকে কু-স্বভাব দূর করে, সুন্দর চরিত্র গঠনের ক্ষমতা রাখেন। অনেকে বলাবলি করেন, খাজাবাবা কুতুববাগী এত বড় দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাঁর স্বার্থ কী? আসলে কামেল পীর-মুর্শিদের স্বার্থ হল, যত বেশি আল্লাহভোলা মানুষকে আল্লাহর সন্ধান দেয়া যায়। যত বেশি মানুষের সেবা করা যায়। খাজাবাবা বলেনÑ ‘আল্লাহ আমাকে এই কাজের জন্যই পাঠাইছেন’। অনেকেরই হয়ত বিশ্বাস হবে না আমার কথা। বিশ্বাস করার দরকার নাই, নিজেই এসে যাচাই করে দেখুন। তবে একটা কথা আছে, যদি সরল মনে আসেন তাহলে কিছু না কিছু পাবেন। আর যদি মনের মধ্যে আগে থেকেই থাকে, আমি সব জানি, আমি অনেক বড় আলেম-মহা-জ্ঞানী, তাহলে কিছুই পাবেন না। যদি সরল মনে আল্লাহকে বলেন, আল্লাহ আমাকে তোমার সত্য পথের সন্ধান দাও। আমার বিশ্বাস আল্লাহ সেই সব মানুষকে সত্য পথ দেখান। পথ এখন অনেক আছে। ইসলামের নাম নিয়ে অনেক মানুষ ফায়দা লুটছে। কিন্তু আল্লাহর সত্য পথ হল নবীজির দেখানো পথ, নবীজির পরে সেই পথ দেখিয়েছেন, খোলাফায় রাশেদীনগণ, সাহাবিগণ ও আহ্‌লে বায়েতগণ। এরপর যুগে যুগে কামেল মোকাম্মেল অলি-আল্লাহ, পীর-মাশায়েখগণ তথা সূফী সাধকরা একই পথ দেখিয়ে আসছেন এবং এঁরাই হলেন রাসুল (সঃ)-এর মনোনীত আহলে বায়েতের অর্ন্তভুক্ত। তাঁদের দেখানো পথে কোনো হিংসা, মারামারি, হানাহানির নাই। শুধু আল্লাহর প্রতি প্রেম ও মানবসেবায় আন্তরিকতার এক যুগান্তকারী সত্যের পথ। এ পথ বা তরিকা চির শান্তি-শৃংখলা ও সূফী-সাধকদের সূফীবাদের পথ। কামেল মুর্শিদের কাছে বাইয়াত ও সান্নিধ্য ছাড়া আত্মা কখনই শুদ্ধ হবে না। আর আত্মার শুদ্ধতা ছাড়া কেউ কখনই শান্তিময় পথের সন্ধান পাবে না। এই চিরসত্য উপলব্ধি আমার মত মূর্খের এত দিনে উদয় হয়েছে! সেই আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দিচ্ছেন খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান হুজুর। একবার আসুন ৩৪ ইন্দির রোড, ফার্মগেট, কুতুববাগ দরবার শরীফে দেখে যান। দেখতে দোষ কি?

(Visited 659 times, 1 visits today)
Share