সাইফুল ইসলাম দীপক
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সুবাদে কিছু মানুষের কমেন্ট বা মতামত দেখতে পাই খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান সম্পর্কে, আমার সীমিত জ্ঞানে সেইসব কমেন্টের রিপ্লাই করার চেষ্টা করি। সেইসব কমেন্টের আলোকেই আজকের এই লেখা। কিছু সংখ্যক মানুষ আছেন দূর থেকেই বিভিন্ন মনগড়া খারাপ মন্তব্য করে থাকেন, কাছে এসে দেখার প্রয়োজনও মনে করে না। তাঁদের কমেন্ট দেখলে মনে হয় কারো সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করাটাই যেন বাহাদুরী বা অতি জ্ঞানের পরিচয়!
এমন একটা মন্তব্য হল, তিনি আরাম আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু আমিতো দেখলাম আমরা সাধারণ মানুষরা তাঁর চেয়ে অনেক বেশি আরাম-আয়েশে জীবন কাটাই। তিনি তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করছেন মানুষের কাছে আল্লাহ ও রাসুল (সঃ) এর সত্যবাণী পৌছানোর কাজে। যখন আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে-ফিরে অলস সময় অতিবাহিত করি, তিনি তখন ছুটে যাচ্ছেন দেশ-বিদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, এরমধ্যে এমন এলাকাও আছে যেখানে রাস্তাঘাট নাই, থাকার তেমন ব্যবস্থা নাই, অথচ তিনি দিনের পর দিন সেইসব এলাকায় সফর করছেন, আল্লাহভোলা মানুষদেরকে আল্লাহ ও রাসুল (সঃ)এর সত্য তরিকার বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে। আবার কখনো পবিত্র কোরআন ও হাদিসের সত্য ব্যাখা-বিশ্লেষণ করে দিনের পর দিন কিতাব লিখছেন, যাতে করে কোরআন-হাদিসের সত্য বাণীর মর্মার্থ না জানা মানুষ আলোর পথ পায়। এরমধ্যে এমনও আছে যখন তিনি একটানা বারো ঘন্টারও অধিক সময় বসে লিখছেন, নাওয়া নাই, খাওয়া নাই লিখেই চলেছেন! যাঁরা খাজাবাবা কুতুববাগীর সঙ্গ করেছেন তাঁরাই জানেন আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি কিনা?
আরেকটা মন্তব্য দেখি, তিনি নাকি ভন্ড! ভন্ড শব্দের অর্থ হল এমন ব্যক্তি যে, তিনি যা মুখে বলেন কিন্তু তিনি তা নিজে বিশ্বাস করেন না বা পালন করেন না। কিন্তু আমিতো দেখি খাজাবাবা কুতুববাগী তাঁর পবিত্র জবানে যা বলেন তা-ই করেন। এর কারণ কামেল মোকাম্মেল অলিআল্লাহদের জবান, আল্লাহর জবান হয়ে যায়, কামেল অলিআল্লাহর হাত, আল্লাহর হাত হয়ে যায়, কামেল অলিআল্লাহর কান, আল্লাহর কান হয়ে যায়, কামেল অলিআল্লাহর পা, আল্লাহর পা হয়ে যায়, এ কথা আল্লাহপাক বলেছেন (হাদীসে কুদসী)। খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান তাঁর সকল বাণীর স্বপক্ষে অসংখ্য দলিল দিয়ে অনেক কিতাব প্রকাশ করেছেন। আজ পর্যন্ত একজন মানুষও এইসব কিতাবের দলিল খন্ডন করতে পারে নাই। আমি এও দেখেছি যে, নবীজির সুন্নত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তিনি পালন করেন। কেউ যদি সত্যি ভাণ করেন তাহলে কখনো না কখনো তা ধরা পড়েই যাবে। খাজাবাবা কুতুববাগীর সান্নিধ্যে অনেক মানুষ আসেন, কেউ কি প্রমাণ দিতে পারবেন তাঁর ভেতরে রাসুল (সঃ)এর সুন্নতের খেলাপ কিছু আছে? নবীজিকে আমরা দেখিনাই সত্য, কিন্তু খাজাবাবা কুতুববাগীর সান্নিধ্যে আসলে, নবীজির সান্নিধ্য পাওয়ার অনুভূতি হয় সে কথা যাঁরা খাজাবাবা কুতুববাগীর সান্নিধ্যে এসেছেন এবং তাঁকে ভালোবেসেছেন শুধু তাঁরাই জানেন। নবী (সঃ) এর এই সকল বৈশিষ্ট্য সবার মধ্যে হবে না। যিনি নবীপাক (সঃ)কে মনেপ্রাণে ধারণ করেছেন শুধু তাঁর মধ্যেই এই বৈশিষ্ট্য থাকবে। তথাকথিত আলেম অনেক আছে, তাঁরা মুখেমুখে অনেক হাদিস আওরাতে পারেন, কিন্তু আমল আখলাকে নবীর (সঃ)-এর সুন্নতের কিছুই নাই। যদি থাকত তাহলে তারা ভ- বলে গীবত করে বেড়াতেন না এবং সাধারণ মানুষদেরকেও উস্কানি দিয়ে গোমরাহীর পথে নিতেন না।
আরেকটা কথা মানুষের মুখে শোনা যায় যে, তিনি বিরাট অট্টালিকা নিয়ে বসবাস করেন। কথা হল, এই যে বিশাল অট্টালিকা তা কি তিনি নিজের ভোগের জন্য ব্যবহার করেন? না, মোটেও তা করেন না। তাহলে কী করেন? আসুন দেখি কি কি আছে এই অট্টালিকায় অর্থাৎ কুতুববাগ দরবার শরীফের দশতলা ভবনে, এখানে আছে নিচতলায় লাইব্রেরি, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় মসজিদ, চতুর্থ তলায় আলেম ওলামাসহ খাদেমদের থাকার ব্যবস্থা ও দপ্তর, পঞ্চম তলায় মেহমানদের থাকার ব্যবস্থা, ষষ্ঠ ও অষ্টম তলায় জাকের বোনদের ওয়াজ শোনার ব্যবস্থা। সপ্তম তলায় মোজাদ্দেদিয়া লঙ্গরখানা। নবম তলায় কেবলাজানের বাসভবন এবং দশম তলায় হুজরাখানা যেখানে বসে তিনি আশেকান ও জাকেরানদের সাথে সাক্ষাত দিয়ে থাকেন, এই হলো পুরো দশতলা ভবনের বিবরণ। এখন আপনারাই বলুন, আলিশান এই ভবনে কি তিনি একাই থাকেন?
যা-ই হোক, এবার মোজাদ্দেদিয়া লঙ্গলখানার কথা কিছু বলি, এই লঙ্গরের তাবারক খেতে কারো কোনো টাকাপয়সা দিতে হয় না। প্রায় চব্বিশ ঘন্টা এই লঙ্গরখানা খোলা থাকে, যাঁরা এই লঙ্গরের তাবারক খেয়েছেন তাঁরাই বলতে পারবেন আমার কথা সত্য নাকি মিথ্যা? এই দেশে কয়জন ধনবান আছেন যাঁরা সারাবছর এইভাবে বিনামূল্যে খাবার খাওয়ান? তবে হ্যাঁ, অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এত খাবারের যোগান কোত্থেকে আসে? তাঁদের সন্দেহ দূর করার জন্য বলছি, এ লঙ্গরখানায় কিছু মানুষ দান করছেন আর কেবলাজান সেই দান অসংখ্য মানুষের সেবায় বিতরণ করছেন। টাকার প্রতি তাঁর কোনো লোভ বা মোহ কখনো আমি দেখিনাই। যাঁরা হক্কানী অলিআল্লাহ ধন-সম্পদের প্রতি তাঁদের লোভ বা মোহ থাকে না। কারণ যাঁরা আল্লাহর রঙে রঙিন হয়ে গেছেন তাঁদের কাছে এ দুনিয়াদারী অতি তুচ্ছ।
কিছু মানুষের এইসব কথা বিশ্বাস হবে না, কারণ আমরা নিজেরা যেমন অন্যকে তেমনই মনে করি। আর এ কথাও সত্যি যে, সকল জমানায় এমন কিছু লোক থাকবে যাঁদের কাছে সত্য ভালো লাগবে না। নবীপাক (সঃ)এর জমানায়ও ছিলেন আবু জাহেল, আবু লাহাবদের মতো অনেক কট্টরপন্থি গোরা বা গাফেল লোকজন। এরকম জাহেলরা এখনো আছে। আরো আছে আব্দুলওহাব নজদীর দল, তাঁরা মানুষকে এমন বিভ্রান্তির দিকে নিতে গিয়ে বলে থাকেন, আল্লাহকে সরাসরি পাওয়া যায়, আর নবী একজন সাধারণ মানুষ (নাউজুবিল্লাহ)। অথচ যেখানে আল্লাহপাক স্বয়ং নবীপাকের (সঃ) ওপর দরূদ ও সালামের মজলিশ করেন, এবং আল্লাহপাক ঘোষণা করেন যে, ‘রাসুল (সঃ) কারো জন্য সুপারিশ করলে আমি আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবো।’ কিন্তু এইসব ওহাবী পন্থীদের প্রশ্ন করি, আপনি বা আমি গুনা মাফের জন্য সুপারিশ করলে কি গোনাহ মাফ হবে? এমন অঙ্গীকার আল্লাহ করেছেন কি? কিংবা আপনার বা আমার নামে আল্লাহপাক দরূদ শরীফের মজলিশ করেন কি? এক কথায় উত্তর, করেন না। যদি না-ই করেন তাহলে নবী (সঃ) আপনার বা আমার মতো সাধারণ মানুষ হলেন কীভাবে? আল্লাহপাক বলেছেন, ‘আমি যাকে সম্মান দান করেছি তোমরাও (সাধারণ) তাকে সম্মান কর।’ এখন আপনারাই বলুন, জমানায় রাসুল (সঃ)-এর চেয়ে সম্মানী ব্যক্তিত্ব আল্লাহর সৃষ্টি জগতে আর কে আছেন? তাহলে যাঁরা রাসুল (সঃ)কে অশ্রদ্ধা করে তাঁরা কীভাবে আশা করেন যে, আপনারা সরাসরি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবেন? আমার জ্ঞানে বলে তা কোনোদিনও সম্ভব না।
এখন কথা হলো, যাঁরা নবীজি (সঃ)কে সম্মান করতে পারেন না, তাঁরা কী করে কামেল- মোকাম্মেল অল্লিআল্লাহ বা নায়েবে রাসুলগণকে সম্মান করবেন? কিন্তু যাঁদের অন্তরে রাসুল (সঃ)-এর জন্য প্রেমের আগুন আছে, তাঁরা হক্কানী অলিআল্লাহগণের মধ্যে রাসুল (সঃ)-এর ছায়া দেখতে পান এবং তাঁদের প্রতি মহব্বত অনুভব করেন। যেমন রাসুল (সঃ)-এর যুগে অনেক বড়-বড় কাফের রাসুল (সঃ)-এর চেহারা মোবারক দেখেই তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। যেমন হযরত ওমর (রাঃ) রাসুল (সঃ)-কে আঘাত করতে এসেছিলেন, কিন্তু রাসুল (সঃ)-এর নূরানী চেহারা মোবারক দেখার পর তাঁর ধারণা ও ক্রোধ পাল্টে যায় এবং তিনি রাসুল (সঃ)-এর কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন! এখন এই কঠিন সময়ে সকল রাসুল (সঃ)-এর প্রেমিক তথা আহ্লে সুন্নাত-ওয়াল-জামাতের উচিত কঠিনভাবে এইসব মওদুদী, খারেজী, ওহাবী, ইয়াজিদী, জাহেলি মতবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান তাঁর বাণী প্রচারের মাধ্যমে এ কাজটিই করে যাচ্ছেন। তিনি একজন অকুতোভয় সত্য পথের আলোকবর্তিকা। তিনি সত্য বলতে ভীত নন। আর হবেনইবা না কেন? তিনি যে হাকিকতে আল্লাহ ও রাসুল (সঃ)-এর প্রেমে নিজেকে বিলিন করেছেন। এখন প্রশ্ন হল, আমরা কি বসে থাকব? নাকি এই সত্য প্রচারে তাঁর সাথে যোগ দিব? সকলেই নিজেদের বিবেককে এই প্রশ্ন করি। আল্লাহপাক আমাদের সকলকে সত্য বুঝবার তৌফিক দান করুন। আমীন।