শরিফুল আলম
অধম গুনাহগার মিসকীন নালায়েক নাখান্দা আমি। মাসিক আত্মার আলো পত্রিকায় লেখার মত কোনপ্রকার যোগ্যতাই আমার নেই। সম্মানীত পাঠক, ভুল-ত্রুটি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কুতুববাগ দরবার শরীফ এলমে তাসাওফের একটি বিশ্ববিদ্যালয়, এ বিদ্যালয়ের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র আমি। আমার শিক্ষক ওয়ারেসাতুল আম্বিয়া, জামানার হাদী খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান।
আমি ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে এখানে ভর্তি হয়ে, এলমে তাসাওফ বা মারেফতের জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাই। প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সাপ্তাহিক দোয়ার মাহফিলে আমাদের মুর্শিদকেবলা খাজাবাবা কুতুববাগী এলমে শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফতের অমূল্য শিক্ষা দান করেন, আমি নিয়মিত উপস্থিত থেকে দূলর্ভ অমূল্য জ্ঞান অর্জন করে যাচ্ছি। বাবাজানের পবিত্র বাণী ‘এই বিদ্যালয়ের এমনি ধারা, সিনায় সিনায় লেখাপড়া’। একজন শিশু থেকে শুরু করে ৯০-১০০ বছর বয়সের মানুষ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এখানে শরিয়তের কঠিন পর্দার ভিতর থেকে মা-বোনেরা তরিকতের শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন। পুরুষদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যবস্থা। বর্তমান জামানার মোজাদ্দেদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান প্রত্যেক গুরুরাতে ও জুমা’র নামাজের পরে দয়াল নবীজির সত্য তরিকতের ‘বাইয়াত-এ তাবারক’ দান করেন। একজন সাধারণ মানুষ এ তাবারক গ্রহণ করে অসাধারণ মানুষ হয়ে যেতে পারেন, যদি তা সহিহ্ নিয়তে গ্রহণ করেন। কেবলাজানের পবিত্র শাহাদাৎ অঙুল মানুষের হৃদপি- নামের কলবে স্পর্শ লাগার সঙ্গে সঙ্গে মরা দিল জিন্দা হয়ে আল্লাহ নামের জিকির জারি হয়। যার হয়েছে সে-ই বুঝেছে, আহা! একি মধুর অনুভূতি। কুতুববাগী কেবলাজানের মূল শিক্ষা হচ্ছেÑ ‘আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা ও নামাজে হুজুরি’। শুধুমাত্র একজন শুদ্ধ আত্মার মানুষকেই প্রকৃত মানুষ বলা যায়। আমাদের মত মানুষরূপী মানুষের পশু আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে প্রকৃত মানুষ বানানোর জন্যই রাত-দিন নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান। আল্লাহতায়ালা নিজে সুন্দর এবং তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। মহান আল্লাহপাক তাঁর অলি-বন্ধু খাজাবাবা কুতুববাগীকে অতি সুন্দর চেহারা মোবারক দান করেছেন এবং খাজাবাবা কুতুববাগীর প্রতিটি কর্মই অতি সুন্দর। বর্তমানে মিডিয়ার যুগে সারাবিশ্ব আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। ফলে কোথায় কী ভালো-মন্দ ঘটছে তা আমরা জানতে পারছি। আজ আমরা প্রায় অর্ধকোটি আশেক জাকেরান ভাই-বোনদের জানা মতে খাজাবাবা কুতুববাগী অতি উত্তম চরিত্রের অধিকারী। যারা নিয়মিত কুতুববাগ দরবার শরীফে দীক্ষা নিতে আসি, তারাও নিশ্চয়ই আমরা মত বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য অলৌকিক কেরামতি প্রত্যক্ষ করে আসছি খাজাবাবা কুতুববাগীর কাছ থেকে। ২০১৪ সালে বর্ষা মৌসুমে কেবলাজানের সফরসঙ্গী হয়ে মাদারীপুর, যশোর, খুলনা ও ঝিনাইদহে দয়াল নবীজির সত্য তরিকা প্রচারের সৌভাগ্য হয়েছিল।
আমার সফরকালে অসংখ্য কারামতি প্রত্যক্ষ করেছি। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো বর্ষা মৌসুম হওয়ার কারণে রাত-দিন প্রচুর বৃষ্টি হয়ে পথ-মাঠ-ঘাট কাদা হয়ে যায়। যে এলাকাতেই মাহফিল হতো সে এলাকার লোকজন বলাবলি করতো এত বৃষ্টির মধ্যে কীভাবে যে মাহফিল হবে? আবার মাঠে কাদা। সে সব এলাকার অনেকেই কেবলাজানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলতো, হুজুর কয়েকদিন যাবৎ মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, মাঠ-ঘাট কাদা হয়ে গিয়েছে, বৃষ্টি থামছেন না এমতাবস্থায় কীভাবে মাহফিল হবে? বাবাজান কেবলা তাদের কথা শুনে বললেন, বাবারা চিন্তা করবেন না আল্লাহপাক সাহায্য করবেন। সত্যি আমরা দেখেছি জোহরের নামাজের পর বৃষ্টি বন্ধ হয়ে ঝলমলে রোদ উঠতো আর তাতেই মাঠ-ঘাট শুকিয়ে যেতো।
বাদ আসর থেকে কুতুববাগী কেবলাজানের শুভ আগমন উপলক্ষে ‘ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিল’ শুরু হতো। বাদ এশা কেবলাজান মাহফিলের মঞ্চে আসন গ্রহণ করে মহা মূল্যবান নসিহতবাণী পেশ করে, মোনাজাত শেষে দয়াল নবীজির সত্য তরিকার সবক দিতেন। কেথাও আবার দেখা যেতো মাহফিল শেষ হলেই মুষল ধারে বৃষ্টি শুরু। সেই সব এলাকার লোকজন মুখে মুখে, ঠোটে ঠোটে বলাবলি করতো একজন কামেল মোকাম্মেল পীর মুর্শিদ এর দ্বারাই এইসব সম্ভব। এভাবে বারবার দেখেছি। আমার চোখ দিয়ে অঝরে জল পড়েছে। আহা একি মধুর অনুভূতি!