আল্লাহর সঙ্গে প্রেম হলেই অন্তরে শান্তি আসে

সাইফুল ইসলাম দীপক

আমরা মানুষ লালসামুক্ত সরল প্রাণ না হলে সূফীবাদের জ্ঞান সমুদ্রের খবর জানতে পারবো না, যে জ্ঞান আত্মার মুক্তি বা আত্মশুদ্ধির একমাত্র পথ। যে পথে প্রেম হলো পুঁজি। আত্মিক প্রেম। সহজ মানুষ-গুরুর সঙ্গে নিগুঢ় প্রেম-মহব্বত ছাড়া আল্লাহপ্রেমের খাঁটি প্রেমিক হওয়া যায় না। প্রেম চিরন্তন এক শক্তি, কুলকায়েনাত সৃষ্টির শুরুটাই প্রেম, শুধু প্রেম। সাধনা করে আত্মপ্রেমের এ শক্তি অন্তরে ধারণ করতে পারলে কোন সাধনা বিফল হবে না এবং আল্লাহকে চেনা যাবে। আল্লাহর অস্তিত্বকে অনুভব করা যাবে। আল্লাহকে পাওয়ার জন্যই আমাদের যত চেষ্টা, শত ইবাদত। স্রষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ হলেই সকল প্রকার শান্তি আসে। সূফী-সাধনায় সিদ্ধি লাভকারী কামেল মোকাম্মেল অলি-আল্লাহগণ সময় ও সমাজের দীক্ষাগুরু, যার অন্তরে মানুষের মুক্তির জন্য কান্না। তাঁরা সব সময় অতীন্দ্রিয় জগতে অবস্থান করতে পারেন, মানুষকে ভালোবাসতে পারেন। শুধু মানুষ কেন সৃষ্টির সকল কিছুকেই অবলীলায় ভালোবাসতে পারেন। সাধারণ মানুষ তা পারি না। আমার কামেল মুর্শিদ বলেন, ‘বাবা অন্যের দোষ তালাশ করার আগে নিজের দোষ তালাশ করেন’। এ অমোঘ সত্য বাক্য প্রতিনিয়তই শুনি কিন্তু কই, সঠিকভাবে তা মানতে পারছি না। প্রায় সময়ই অন্যের দোষ তালাশে ব্যস্ত থাকি! এখন মনে হয় নিজের মধ্যে সেই চিরন্তন প্রেমের অভাব। যে প্রেমে অলি-আল্লাহগণ দয়াল নবীর প্রেমে ডুবে থাকেন। ধনি গরীব, জাতি, গোত্র, ধর্ম-বর্ণ, উঁচু-নিচু, পাপী-তাপী কাউকেই অবহেলা করেন না। সবাইকে আপন করে নিতে পারেন এটা তাঁর মহৎ গুণ, এ গুণ ও জ্ঞানের অধিকারী এ সময়ের অদ্বিতীয়।
একবার চিন্তা করে দেখি তো, যদি সত্যি কাউকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসি তবে কি তার দোষ-ত্রুটি খুঁজি কিনা? অন্যের কাছে তা গোপনে বা প্রকাশ্যে তুলে ধরি কিনা? তাকে অন্যের সামনে ছোট করতে পেরে আমি আনন্দিত হই? সুস্থ মানুষ তা পারে না। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যত প্রকার পাপ আমরা করি তার মধ্যে সব চেয়ে বড় পাপ ‘ক্ষমার অযোগ্য কাজ গীবত’ প্রায়ই করে থাকি আমরা। কারণ, আমাদের অন্তরে ভক্তি-প্রেমের খুব অভাব! যদি আল্লাহকে ভালোবাসি তবে তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধ থাকা জরুরী। একটু খেয়াল করে দেখলেই তা বুঝতে পারবো, আমরা যে যাকে ভালোবাসি তার দোষ-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখি কি না? নিজেকে বড় না ভেবে অন্যকে বড় ভাবতেই আনন্দ পাই কিনা? আল্লাহর প্রেমিকদের আমিত্ব থাকে না, মানুষের সেবা আর মানবতার পক্ষে থাকেন। সবসময় অপূর্ব এক প্রেমভাব মনে বিরাজ করতে থাকে, মনে শান্তির পরশ অনুভব হয়। তবে আল্লাহকে ভালোবাসার মতো সরল কোমল অনুভূতি কামেল গুরুর দীক্ষা ছাড়া সহজে কেউ লাভ করতে পারে না। কামেলগুরু যিনি কঠোর সাধনার বলে সেই মাকাম অর্জন করে পেয়েছেন আল্লাহর প্রেমময় সত্বার সন্ধান।
আমি দেখেছি এবং শুনেছি কিছু মানুষ কুতুববাগী কেবলাজান সম্বন্ধে সমালোচনা করে, কটু কথা বলে। যদি কখনো এ কথা কোন জাকের ভাই অতি আদবের সঙ্গে কেবলাজানের কাছে বলেছেন, তিনি সমালোচনাকারীদের প্রতি কখনো রাগ অথবা অভিশাপ দেন না, বরং বলেনÑ ‘বাবা, তারা এ সব না বুঝে বলে, তাদের ভিতরে আসল বুঝ থাকলে কখনও বলত না’। খুব কম মানুষ যারা নিজের স¤পর্কে কোনপ্রকার কটু কথা শুনলে মনে মনে রাগ হই না বা উত্তেজিত হয়ে গালমন্দ করি না। আল্লাহর বন্ধুরা স্্রষ্টার প্রেমে এমন গভীরভাবে নিমগ্ন থাকেন যে, সকল সৃষ্টির মধ্যেই তারা আল্লাহকে দেখতে পান। যেন তৌহিদের সাগরে ডুবে থাকা মহা ডুবুরী, তাঁরা সৃষ্টি থেকে স্্রষ্টাকে আলাদা ভাবতে পারেন না। এ জন্যই তারা কাউকে দোষারোপ করেন না, অভিশাপ দেন না, কারো ক্ষতি করেন না, সবার জন্য সর্বদা কল্যাণ কামনা করেন। আল্লাহর প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য গুণাবলী তাঁর বিশেষ বিশেষ বান্দার মধ্যে কিছু গচ্ছিত রেখে, আরশে আজিমে বসে সারা-জাহান পরিচালনা করছেন তিনি। আমাদের আসল কাজ হওয়া উচিৎ সে সব সত্যবাদি মানুষের সঙ্গ লাভ করে নিজের মধ্যে এসব গুণাবলীর বিকাশ ঘটানো। চম্বুকে যেমন লোহা আকড়ে ধরে তেমনিভাবে মুর্শিদের পবিত্র অন্তরের সঙ্গে নিজেদের অপবিত্র অন্তরকে জোড়া লাগিয়ে দিতে পারলেই সফল কাম হতে পারবো আমরা।

(Visited 623 times, 1 visits today)
Share