সাইফুল ইসলাম দীপক
খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের সূফীবাদের স্কুলে পড়তে এসে যত কিছুই শিখলাম, তার মধ্যে একটা বিষয় আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, সে বিষয়টা হল প্রেম! এ শব্দটার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত, বুঝে না বুঝে এর ব্যবহারও করি প্রচুর। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এর গভীর উপলব্ধি ক’জনার হয়? শুধু মুখে ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা হয় না। এক সাধক কবি বলেছেন, ‘আশেকের ভেদ মাশুক বোঝে, যে যার পীরিতে মজে’। খাজাবাবা কুতুববাগী বলেন, ‘বাবা, প্রেম কখনও একা একা হয় না’। আশেক আর মাশুক না হলে প্রেম হয় না। জোর করেও প্রেম করা যায় না। যখন হবে তখন এমনিই বোঝা যায়, কারো বলে দিতে হয় না। আমি সেই চিরন্তন প্রেমের কথা বলছি, যে প্রেমে কোনো সংকীর্ণতা নাই, যে প্রেম শ্বাশত। যে প্রেমে সবকিছু উজাড় করে দিতে চায় মন এবং কিছুই বিনিময় চায় না। আশেক চায় শুধু মাশুকের মন। বস্তুত পক্ষে প্রেম দুই রকম, এশকে মাজাজী ও এশকে হাকীকি। এশকে মাজাজী হল দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকা, যা শুধু পার্থিব জীবন শেষ হলেই এ প্রেমের সমাপ্তি ঘটে। আর এশকে হাকীকি পার্থিব জীবনের পরেও অক্ষুণ্ণ থাকে, কারণ এ প্রেম শুধু আল্লাহর জন্য। এশকে হাকীকিতেই আল্লাহর সন্ধান পাওয়া যায়। এ বিষয়টা অনেক গভীর বিষয়। আমার মত মূর্খের পক্ষে এ নিয়ে লেখা দুঃসাহস ছাড়া আর কিছু নয়। প্রতি মূহুর্ত ভয়ে কাটে, কিছু ভুল হয়ে গেল মনে হয়।
আসলে লেখার মত জ্ঞান আমার নাই। তবুও আমার গুরু খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান লিখতে বলেন, তাই আমি অধম নালায়েক চেষ্টা করছি। আশা করি ভুল-ত্রুটি খাজাবাবা মাফ করবেন। এশকে হাকীকি হল আল্লাহর সঙ্গে প্রেম। কিন্তু সেই প্রেমের স্তরে পৌঁছাতে অন্তরে আখেরী নবীজির প্রতি গভীর মহব্বত থাকতে হবে। আজকাল একদল নামধারী আলেম আছে, যারা মানুষকে ভুল শিক্ষা দিয়ে নবীজির প্রেম-মহব্বত থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। তারা বলে সরাসরি আল্লাহকে পাওয়া যায়। তাদেরকে বলি, আপনারা এমন আত্মঘাতী আকিদা ত্যাগ করে সত্য এবং ন্যায়ের পথ অনুসরণ করুন, তবেই শান্তি ও মুক্তি আসবে। তাছাড়া স্বয়ং আল্লাহ-ই যেখানে তাঁর হাবিবপাকের প্রেমে মশগুল, সেখানে আপনারা শত চেষ্টা করেও সফল হতে পারবেন না। আল্লাহ-নবীর প্রেম যে বোঝে না, তার আর যাই হোক আল্লাহকে পাওয়ার কোন আশা থাকতে পারে না। কেউ হয়ত বলবেন, এটা আবার কেমন কথা! সব মুসলমানই নবীজি (সঃ)-কে ভালোবাসে। ঠিক আছে আসেন দেখি সেই ভালোবাসা অন্তরে কতখানি লালন করেন তা একবার পরখ করে দেখুন। কেউ যদি কাউকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসে তার কথা সে কখনও ফেলতে পারে না কিংবা ভুলতেও পারে না। তাহলে নবীর শিক্ষা মানুষকে ভালোবাসা, সকলের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, মিষ্টভাষী হওয়া, অন্যের হক নষ্ট না করা, অন্যের স¤পত্তি দখল না করা, অন্যের মনে আঘাত না দেয়া, মিথ্যা না বলা, ভুখা মানুষকে খাবার দেয়া, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দেয়া, মানব সেবা করা, গীবত না করা ইত্যাদি। এখন বলেন, আপনি-আমি এর কতটুকু পালন করতে পেরেছি। এর কারণ, সত্যিকার অর্থে নবীপ্রেম আমাদের মধ্যে নাই। আমাদের প্রেম মুখে মুখে। আর মুখে বললেই প্রেম হয় না, কাজেই নবীজির (সঃ) আদর্শের এ বিষয়গুলোর মধ্য দিয়েই বোঝা যায় যে, আমাদের অন্তরে কার কতটুকু নবীপ্রেম আছে!
বেলায়েতে মাশায়েখগণের মধ্যে দয়াল নবীজির (সঃ) এই বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান। কারণ সত্যিকার অর্থে তাঁরা রসুল (সঃ)-এর প্রেমে মশগুল। যেমন ছিলেন বিশেষ বিশেষ সাহাবিগণ, খোলাফায়ে রাশেদীনগণ, আসহাবে সূফ্ফাগণ। নবীজির এ সব আশেক-পাগলেরা নবীজিকে অন্তর দিয়ে ভক্তি ও মহব্বত ছাড়া অন্য কিছুই বুঝতেন না। দয়াল নবীজিকে তো আমরা দেখি নাই অথবা ওই আমলে জন্মগ্রহণও করি নাই, তাহলে আমাদের উপায় কী হবে? নবীজিকে কোথায় পাব? কিভাবে তাঁর সঙ্গে দেখা হবে? প্রেম হবে? আল্লাহতায়ালা অতি মহান তাঁর মহানুভবতার পরিচয় এখানেও বিদ্যমান, সে কারণেই পথ হারা মানুষদের পথ দেখাতে যুগে যুগে বেলায়েতে মাশায়েখ নায়েব-এ নবী এ দুনিয়াতে পাঠিয়ে থাকেন। ভাবুক বা চিন্তাশীল মানুষ মাত্রই এ কথা স্বীকার করবেন। আর তাই আপনার সময়ে যদি কামেল অলি-আল্লাহগণের দেখা পান তবে তাঁদের সঙ্গে প্রেম হলেই আস্তে আস্তে নবীজির (সঃ) প্রেম অন্তরে জন্মাবে। আর প্রেম করতে হলে আশেক-মাশুকের সঙ্গে দেখা-দেখির প্রয়োজন আছে। আমার কামেল মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান বলেন, ‘কায়া দেখলে মায়া হয়’। তিনি আরোও বলেন, ‘যার অবয়ব চর্ম চোখে দেখা হয় নাই, তার সাথে প্রেম হওয়ারও সম্ভাবনা নাই’। সত্যিই তো তাই, কিন্তু অনেকে আছেন যারা বেলায়াত মানেন না, অলি-আল্লাহ তথা পীর মাশায়েখ বিশ্বাস করেন না। তাদেরকে বলি, দূরে থেকে ভাল-মন্দ বিচার না করে অন্তত একবার খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানকে সামনা সামনি দেখে যান, জেনে যান তাঁর আদর্শ এবং শিক্ষা। দেখে যান তাঁর মধ্যে রসুল (সঃ)-এর গুনাগুণ পরিপূর্ণ বিদ্যমান আছে কি না। নিজের চোখে দেখে, ঠিক বেঠিক বুঝে তারপরে মন্তব্য করলেই কেবল তা গ্রহণযোগ্যতা পায়। আল্লাহ প্রদত্ত এমন এক ঐশী প্রেমের শক্তি থাকে অলি-আল্লাহদের কাছে, যা আপনার আমার কাছে নাই। যে শক্তির গুণে তাঁরা মানুষের অতি কঠিন অন্তরেও প্রেমের বারিধারা তৈরি করতে পারেন। মানুষের খাসলত (বদ অভ্যাস) পরিবর্তন করে দিতে পারেন। জোর করে মানুষের অন্তর পরিবর্তন করা যায় না, যায় শুধু প্রেম দিয়ে। যেমনিভাবে করেছেন হায়াতুন্নবী, জিন্দানবী (সঃ)। অগণিত কাফের, মুশরিক, বেদুঈন তাঁর প্রেমপূর্ণ মায়াময় নূরাণী চেহারা মোবারক দেখে, তাঁর স্বভাব, আচার ব্যবহার, নি:স্বার্থ ভালোবাসা দেখে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। আর মহাপবিত্র এ ধর্মেরই নায়েব-এ-নবী আমাদের দরদী পীর-মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান, তাঁর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নূরাণী চেহারা মোবারক এক নজর দেখে যান আমার কথার সত্যতা যাচাই করেন। তাঁর মধুময় কণ্ঠ শুনেই মানুষেরা অন্তরে প্রাণ ফিরে পান। আর তাই তো রসুল (সঃ)-এর সত্য তরিকার ছায়াতলে শামিল হচ্ছে।