আমার হৃদয়ের অনুভূতি

হাজী মোহাম্মদ ফাহিম হোসেন

বহু দিন আগের ঘটনা, ২০০৩ সাল। আমার এলাকা রাজধানীর বৃহত্তম লালবাগ থানার নবাবগঞ্জ। যখন আমি পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত। ঠিক তখনি আমার প্রতিবেশী জনাব সেলিম ভাই বললেন, ফার্মগেটের কুতুববাগ দরবার শরীফে একজন জামানার হাদী আছেন তোমাকে সেখানে নিয়ে যাব। যাঁর কাছে গেলে আমার বিশ্বাস তোমার হতাশা দূর হবে। সেখানে প্রতি সপ্তাহে মাহফিল হয়। একদিন সাপ্তাহিক মাহফিল বৃহস্পতিবারে সেলিম ভাই আমাকে যুগশ্রেষ্ঠ হাদীর কাছে নিয়ে আসেন। দরবার শরীফে এসে দেখি বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামা ও বেতার টিভিতে বক্তব্য রাখেন এমন আলেমদের বয়ান হচ্ছে। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ও অলি-আল্লাহদের ওপর কোরআন-হাদীসের আলোকে বিভিন্ন আলোচানা করছেন, যা সচরাচর সাধারণ আলেমদের নিকট হতে শুনতে পাইনি। রাত যখন একটু গভীর হল তখন ভিতরের রুম থেকে একজন মহাপুরুষ তাঁর পরনে ধবধবে সাদা সুন্দর ও মার্জিত পোশাক। তিনি এসে মাহফিলে উপস্থিত হলেন। অবাক হলাম তিনি আসার সঙ্গে সঙ্গে সবাই দাঁড়িয়ে সম্ভাষণ জানালেন এবং লোকজনের মধ্যে আরো নীরবতা ও ধৈর্যশীলতা দেখতে পেলাম। শুরু হল মিলাদ ও কিয়াম। তারপর সবার মধ্যমণি হয়ে বসলেন আসনে। শুধু আমিই নই, সকলে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমার মনে হলো তাঁর চেহারা মোবারক থেকে নূরের আলোকরশ্মি ছড়াচ্ছে। আরো মনে হলো তিনি কোনো সাধারণ মানুষ নন, আল্লাহর নূরের পুতুল আমাদের সামনে বসে আছেন। সত্যিই এতো সুন্দর, মার্জিত এবং নমনীয় ভাষায় নছিহতবাণী পেশ করছেন, যা কোনোদিন কোনো আলেম-ওলামা, মুফতি-মাওলানা, ক্বারী-হাফেজদের বলতে শুনিনি। কেবলাজানের সুমধুর বাণী যেন হৃদয় স্পর্শ করে এবং নিজেকে যেন হারিয়ে ফেলেছি এক অজানা জগতে। ভাবতে পারিনি কোনোদিন এমন বেহেশতের বাগানের মতো নূরানী মাহফিলে উপস্থিত হবো। রাসুলপাক (সাঃ)-কে তো কখনো দেখিনি, বই-কিতাবে তাঁর জীবনী পড়েছি। আজ বাস্তবে দেখলাম রাসুলপাক (সাঃ)-এর ওয়ারিশ যাকে বলে নায়েবে রাসুল। তাঁর আলোচনায় সমস্ত মাহফিলে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে এক ধরনের হাল তৈরি হয়, যা অন্য কোনো মাহফিলে আমার চোখে পড়েনি। ছোটবেলায় বাবা ও মায়ের কাছ থেকে তাঁদের পীর-মুর্শিদের কথা শুনেছি। তাঁরাও মুর্শিদভক্ত ছিলেন। তখন দেখেছি তাঁদের মুর্শিদের প্রতি প্রবল মহব্বত। আসলে এমন মহাপুরুষ যাঁর শরীর মোবাররক থেকে মেস্ক-আম্বরের সুঘ্রাণ আসতেছিল। চোখ মোবারক, ভ্রু মোবারক এমনকি হাতের নখগুলোও যেন অসাধারণ জ্যোতির্ময়। তাই কবির ভাষায় বলতে মন চায়-

‘যাঁকে দেখলে নয়ন জুড়ায়, হৃদয় ভরে শান্তিতে
দিন-দুনিয়া ভুলে, জীবন কাটাই তাঁর গোলামীতে।’

বয়ান শেষে ক্বেবলাজান সারাবিশ্বের মানব জাতির কল্যাণ ও শান্তির জন্য দোয়া করলেন। তারপর দরবার শরীফে আগত নতুন মেহমানদেরকে ক্বেবলাজান তাঁর শাহাদাত আঙুল দিয়ে ক্বলবে ছুঁয়ে বলেন, এখানে আল্লাহর নামের জিকির জারি হবে সবসময়, এখানে খেয়াল রাখবেন। আমি নিজেও ক্বলবের ছবক নিলাম এবং তরিকা (শিষ্যত্ব) গ্রহণ করলাম। ক্বেবলাজান সকলকে আদবের সাথে তবারক খেয়ে যেতে বললেন এবং যারা থাকবেন তাদেরকে ফজর নামাজ শেষে অজিফা পালন করে যেতে বললেন।

ধন্য এ জীবন, আমার ধন্য এ জীবন
মুর্শিদ ক্বেবলা চাইগো ভিক্ষা তোমার দুই চরণ।

তোমার নূরানী মায়াবী স্পর্শে থেকে এ জীবন যৌবন মন তন যেন তোমার কদমে নেছার করতে পারি- এ আজিজি অধম গোলাম ফাহিমের।

(Visited 289 times, 1 visits today)
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *