এইচ মোবারক
অন্তর পবিত্র করো, নিজেকে এবাদতে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করো, পাড়া প্রতিবেশির হক আদায় করো, রোজা পালন করার চেষ্টা করো। শুধু শরিয়তি শিক্ষা অর্জন করে নিজেকে পুর্ণাঙ্গ শিক্ষিত করা সম্ভব নয়, শরিয়তের সাথে সাথে মারেফতের শিক্ষাও নিতে হবে। মারেফত হচ্ছে অতি গোপনেরও গোপন। এখন প্রশ্ন, গোপনের আবার গোপন কী? আমরা যাহা দেখি নাই এবং চিনিওনা মূলত তাহাই গোপন। মারেফত হচ্ছে আপন মুর্শিদের উছিলার মাধ্যমে নিজ দেহের মোকাম মঞ্জিলে যাওয়া। যাহা আমি অতীতে দেখি নাই, জানিও না। আর এই অদেখা, অজানা বিষয়টি সুন্দরভাবে চেনা-জানার মাধ্যমে আল্লাহতায়া’লা তথা দয়াল নবীজিকে চেনা ও বোঝার নামই হলো প্রকৃত মারেফত। তবে আগে অবশ্যই নিজের অন্তরাত্মাকে সঠিক পথে এনে দাঁড় করাতে হবে।
আজ আপনাদের একটা কথা বলে যাচ্ছি, শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফত এ সকলকিছুই একত্রে পাওয়া সম্ভব সূফীবাদের শিক্ষার মধ্যে। গত ২২ ও ২৩ জানুয়ারি কুতুববাগ দরবার শরীফের ঐতিহাসিক মহাপবিত্র ওরছ ও বিশ্ব জাকের ইজতেমায় খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজান, তাঁর দিক-নির্দেশনা ও মহামূল্যবান নছিহত পেশ করতে গিয়ে, তিনি আরো বলেন, যারা হুজুরি দিলে সালাত কায়েম করতে চান, যাকাত আদায় করতে চান এবং শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দয়াল নবীজির সত্য তরিকার দাওয়াত প্রচার করেন। তারা আল্লাহতায়ালার নিকট অতি প্রিয়। পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে আরো বলেন, ‘আলা ইন্না আউলিয়া আল্লাহি লা-খাওফুন, আলাইহিম ওয়ালাহুম ইয়াহ্যানুন’। অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহর বন্ধু-অলি-আউলিয়াগণের কোন ভয় নেই এবং তারা কোন কারণে দুঃখিত হবেন না। আর যারা বলেন, কোরআনে কোথাও পীর নাই। তাদেরকে বলি, আপনারা কোরআনে কোথাও নামাজ পাইছেননি? পান নাই, কোরআনে বিরাশি স্থানে আছে সালাত। সালাত। আর সারাজীবন নামাজ খুঁজলে, পাইবেন না। তাই পীর হইলো ফার্সী শব্দ, কোরআনে আছে, মুর্শিদ। মুর্শিদ। অলিয়াম মোর্শেদা’। তাই বাবারা, তর্ক কইরেন না, তর্ক করে কোন ফল হবে না।
সারাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও অগণিত মানুষের ঢল, যেন এক জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল ফার্মগেটে। অসংখ্য নবী-রাসুল ও অলি আল্লাহ্দের রূহানি আত্মার মহা-মিলনের এই দ্বীনি মাহফিলে প্রতিটি আশেকান ও জাকেরান ভাই-বোনই মশগুল ছিলেন মুর্শিদের উছিলায় গুনাহ্ থেকে মুক্তি আর প্রাণপ্রিয় মুর্শিদের পবিত্র শিক্ষা আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা ও নামাজে হুজুরি (একাগ্রতা) অর্জন করা। এবং এর মাধ্যমে মহান আল্লাহতায়া’লারনৈকট্য লাভ করা। আল্লাহর দিদার লাভের সহজ-সরল পথের সন্ধান পেয়ে সকলেই যেন নিজ নিজ জীবনের নানা হতাশা, দুঃখ-দুর্দশা, রোগ-ব্যাধির মধ্যেও খাজাবাবা কুতুববাগী কেবলাজানের উছিলায় আল্লাহর রহমতে আশার আলো দেখতে পেলেন।
সিলেট থেকে আসা বাস কাফেলার এক জাকের ভাইজানের কাছে জানতে চাইলাম, আপনি কি এবার নতুন এসেছেন, নাকি আরও এসেছেন? তিনি বলেন- আমি এর আগেও অনেকবার আসছি। বাবার বাড়ির ওরছে না আসতে পারলে মনে শান্তি পাই না। এরপর জিজ্ঞেস করলাম কেন আসেন এখানে? এবার তিনি যা বললেন তাতে আমার বোধদয় হলো যে, সত্যি মানুষ তার আপন আপন পীরকে কত ভালোবাসেন, ঠিক তার চেয়েও বহুগুণ বেশি ভালোবাসেন মুরিদকে তাঁর পীর। নিখাদ ভালোবাসা যার কোন তুলনা হয় না। এরপর অপরিচিত এক জাকের ভাইজানকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আপনি কেন এসেছেন ওরছে? তিনিও অবাক করে দিয়ে বললেন, আমি ভাই সামান্য প্রেমিক, প্রিয়ার সাথে মিলন করতে এসেছি। জিজ্ঞেস করলাম আপনার প্রিয়া কে? দরবারের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বললেন, আমার প্রিয়া, আমার মুর্শিদ খাজাবাবা কুতুববাগী। এভাবে অনেকের সঙ্গেই আলাপ করে বুঝেছি, প্রতিটি আশেকান-জাকেরান ভাই-বোনের অন্তরই যেন, মুর্শিদ প্র্রেমের এক অফুরন্ত ভান্ডার। অন্য এক জাকের ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আপনি কোন এলাকা থেকে এসেছেন? তিনি বললেন, আমরা দিনাজপুর থেকে এসেছি, শুধু মুর্শিদের পবিত্র চেহারা মোবারক দেখা আর তাঁর পবিত্র দিলের থেকে নিজের অপবিত্র দিলে তাওয়াজ্জোহ্ পাওয়ার আশায়।