রাসুল (সঃ) এর অমূল্য বাণীর পক্ষে বিজ্ঞানের স্বীকারোক্তি

সেহাঙ্গল বিপ্লব

দু’জাহানের বাদশা আখেরী নবী-রাসুল (সঃ) এর ওপর মহাপবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার আগে, এ পৃথিবীতে বিজ্ঞানের কোন আবিষ্কার ছিল? ছিল না। আজ পৃথিবীতে বিজ্ঞানের যত আকাশচুম্বি আবিষ্কার তা শুধু মানুষেরই বস্তুগত বিদ্যার বহিঃপ্রকাশ। পবিত্র কোরআন থেকে বিভিন্ন আয়াতের সূত্র পাঠের মধ্য দিয়েই বিজ্ঞনের আবিষ্কার শুরু। বিজ্ঞানীরা ইদানিং প্রায় পনের’শ বছর আগে মহানবী রাসুল (সঃ) এর পবিত্র বাণীর সত্যতা স্বীকার করছেন এবং তারা গবেষণায় প্রমাণ পেয়েছেন যে, হাদিস শরীফের কথাই সঠিক। আমাদের পরমপ্রিয় মুর্শিদ কেবলাজান প্রতিটি মুহূর্তেই আশেকান-জাকেরান ভক্ত-মুরিদানদের উদ্দেশে বলে থাকেন, কোরআন ও হাদিসের আলোকে পথ চলতে। দয়াল নবীর সুন্নতের প্রতি জোর দিতে বলেন। শরিয়তের বিধি-নিষেধগুলো আলোচনা করেন। পরিবারের প্রতি যতœবান হতে বলেন। নিজ নিজ অন্তরে আল্লাহ ও রাসুলের (সঃ) এর প্রতি ভালোবাসা তৈরি করতে বলেন। নারী-পুরুষের পর্দার কথা বলেন। অর্থাৎ যা কিছু মানুষের মঙ্গলের জন্য, সে বিষয়গুলো পালনে ভক্ত-মুরিদের প্রতি জোর নসিহত দেন। আজকের যে আধুনিক বিজ্ঞান, এ বিষয়ে মহানবী (সঃ) সেই পনের’শ বছর আগেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। আজকের বিজ্ঞানী বছরের পর বছর গবেষণা করে যা বের করেন, দয়াল নবী মুহূর্তের মধ্যে সে ফলাফল বের করে দিতে পারতেন। আর নায়েবে নবীগণও রাসুল (সঃ)এর বাতেনী এলম বা জ্ঞানের দ্বারাই পরিপূর্ণ।

আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) বলেছেন, ‘পুরুষের প্যান্ট বা অন্য কোন পোশাক পায়ের টাকনুর উপর পড়তে হবে, নইলে তারা জাহান্নামী হবে।’ (সহীহ্ বোখারী- ৫৩৭১)বিজ্ঞান বলে, পুরুষের টাকনুর গিরার ভিতরে প্রচুর পরিমাণে হরমন থাকে এবং আলো বাতাসের প্রয়োজন হয়। তাই কেউ যদি খোলা না রেখে ঢেকে রাখে, তাহলে তার মর্দ্দামিশক্তি কমে যায় এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

রাসুল (সঃ) বলেছেন, ‘ভ্রু-প্লাগকারীর (ভ্রুর লোম উঠানো) ওপর আল্লাহর লানত।’
(সহীহ বোখারী-৫৫১৫)বিজ্ঞান বলে, ভ্রু’ হলো চোখের সুরক্ষার জন্য। ভ্রু’তে এমন কিছু লোম থাকে, যদি তা কাটা পড়ে, তাহলে ভ্রু-প্লাগকারী পাগল হতে পারে কিংবা মৃত্যুবরণও করতে পারে।

‘নেশাগ্রস্ত হওয়া শয়তানের কাজ’ (সুরা : মাইদা, আয়াত-৯০) এবং রাসুল (সঃ) বলেছেন, ‘নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করা হারাম’। (সহীহ বোখারী- ৬১২৪) বিজ্ঞান বলে, ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার, ব্রংকাইটিস ও হৃদরোগের আশঙ্কা থাকে। ধূম পানে ঠোঁট কালো হয়, দাঁতের মাড়ি ও আঙুল কালো হয়। মর্দ্দামীশক্তি ও ক্ষুধা কমে যায় এবং স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে থাকে।

রাসুল (সঃ) বলেছেন, ‘পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম’। (মুসলিম শরীফ- ১৬৫৫) বিজ্ঞান বলে, স্বর্ণ এমন একটি পদার্থ যার রাসায়ণিক বিকিরণ শরীরের চামড়ার সঙ্গে মিশে রক্তের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে এবং তার পরিমাণ যদি ২.৩ মাত্রা হয় তাহলে মানুষ তার স্মৃতিশক্তি নাকি হারিয়ে ফেলতে পারে।

রাসুল (সঃ) বলেছেন, ‘ঘুমানোর সময় আলো নিভিয়ে এবং ডান কাত হয়ে ঘুমানো উত্তম’। (সহীহ বোখারী-৩২৮০)
বিজ্ঞান বলে, ডান কাঁত হয়ে ঘুমালে হৃদপি- তার প্রয়োজন মতো ভালোভাবে পাম্প করতে পারে। আর ঘুমানোর সময় আলো না নিভিয়ে ঘুমালে মস্তিষ্কের এনাটমি রস শরীরে প্রবেশ করতে পারে না বিধায়, শরীরে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

রাসুল (সঃ) বলেছেন, ‘পুরুষের মুখের গোফ ছেটে ফেল এবং দাড়ি রাখো’। (সহীহ মুসলিম-৪৯৩-৯৪)
বিজ্ঞান বলে, দাড়ি না রাখলে শেভের কারণে চামড়ায় ক্যান্সার, ফুসফুসের ইনফেকশন এবং ৪০ বছরের আগেই যৌবন হারানোর মতো মারাত্মক আশঙ্কা থাকে।

কোরআন থেকে রাসুল (সঃ) বলেছেন, ‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেও না, নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং ধ্বংসের পথ’। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত-৩২) বিজ্ঞান বলে, খারাপ ভিডিওচিত্র এবং অশ্লীল সম্পর্কসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্যের নেশায় যদি কেউ জড়িয়ে পড়ে, তবে তার মস্তিষ্কের সামনের আলো ফ্রন্টাল এরিয়া পরিচালনা করার ইন্টেলেকচুয়াল (বুদ্ধিবৃত্তির) সেলগুলো থরথর করে কাঁপতে থাকে এবং অস্থির হয়ে যায়। এ কারণে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি মাতাল ও অসুস্থের মতো জীবন-যাপন করে এবং এভাবেই সে নিজেকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। সুতারাং স্বাভাবিক সুন্দর জীবন-যাপনের জন্য এ অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করা প্রয়োজন।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা তাতে কান লাগিয়ে রাখো এবং নিশ্চুপ থাকো যাতে তোমাদের ওপর রহমত নাজিল হয়।’ (সুরা : আ’রাফ, আয়াত- ২০৪) বিজ্ঞান বলে, কোরআন পাঠের সুরেলা শব্দ-তরঙ্গ শরীরের কোষগুলোকে সক্রিয় করে এবং অসুস্থতা থেকে আরোগ্য দান করে। বিশেষ করে হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগীদের জন্য আযানের সুর মস্তিষ্ক এমনভাবে চার্জ করে, ঠিক যেমনভাবে ফিউজ ব্যাটারীকে পুনরায় সচল করা হয়।

রাসুল (সঃ)এর পর ইসলাম ধর্মের অন্তর্নিহিত অধ্যায় সূফীবাদ, যাঁরা কাল থেকে কালান্তরে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা-ই প্রকৃত অনুসারি যাঁরা আহলে বাইয়াতের পবিত্র পতাকাবাহী, সময়ের কামেল-মোকাম্মেল বুজুর্গগণ। এ অধ্যায়ের মধ্যে আছে জীব ও জগতের জন্য কল্যাণ আর কল্যাণ, যার কোন সীমা পরিসীমা নেই। একজন মানুষ একা ভালো থাকতে পারেন না, শুধু কথা বলার জন্য হলেও কাউকে দরকার হয়। পৃথিবীতে এমন মানুষ আছেন যার সব আছে, কিন্তু আবার কিছুই নেই, সবার মধ্যে থেকে সে একা! সূফীবাদী সাধকরা ধ্যান বা মোরাকাবা করেন নিয়মিত।

যার ফলে গভীর নিমগ্নতায় মানবমস্তিষ্কে এক ধরনের প্রশান্তি এবং চিন্তার গভীরতর স্তরে পৌঁছতে পারে। কল্পনার এবং সৃজনের জগৎ হয় প্রসারিত। অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা মেডিকেল বা ধ্যানেরও সুফলের কথা গুরুত্বের সঙ্গে মেনে নিয়েছেন। কোরআন-হাদিসের মহৎ বাণীসমূহ বিজ্ঞানের যৌক্তিকতায়ও যে উত্তীর্ণ, তা জ্ঞানীমাত্র স্বীকার করবেন।

(Visited 1,185 times, 1 visits today)
Share